সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে পাঁচ বছরের সাজা হয়। যদিও বর্তমানে তিনি নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। গত বছর সারা বিশ্বে মহামারি করোনা ছড়িয়ে পড়লে শর্ত সাপেক্ষে সরকারপ্রধানের নির্বাহী আদেশে জামিন পান খালেদা জিয়া। প্রায় ২৫ মাস (কারাগার ও বিএসএমএমইউর প্রিজন সেল) কারাভোগের পর তিনি ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্ত হন।
৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার ‘কারাবন্দি দিবস’ পালন করছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়া এখনো মুক্ত নন, তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। পার্থক্য এটুকুই যে তিনি ঘরোয়া পরিবেশে থাকতে পারছেন। তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো নয়। কারাবন্দী দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সংগঠন সুগঠিত করে অচিরেই মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। সোমবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এই ঘোষণা দেন।
দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারাবরণের তিন বছর পূর্তিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা বিএনপি। একই কর্মসূচি হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলা-মহানগরেও। সকাল থেকেই ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণের বিএনপিসহ দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জমায়েত হয়।
সমাবেশে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেল ‘আল-জাজিরা’ বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা আব্বাস বলেন, এই বছর হলো আমাদের স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর বছর। এই সময়ে আমি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের এবং আমার নেতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি এই কথা শুনার জন্য নয় যে, বাংলাদেশ একটি মাফিয়া দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, এই কথা শুনার জন্য নয় বাংলাদেশ একটা মাফিয়া রাষ্ট্র। এই কথা আমরা আর কখনো শুনতে চাই না।
আমরা বলতে চাই এই সরকারকে। আপনারা দয়া করে প্রমাণ করুন আল-জাজিরায় যা কিছু আসছে সব মিথ্যা। আমরা আপনাদের সমর্থন দেবো, আমরা আপনাদের সাহায্য করবো। প্রমাণ করেন। শুধু মুখে ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছে…। তিনি বলেন, একজন মন্ত্রী আছেন আমি কী বলব নাম, নাম বলতে ঘৃণা লাগে। কি কয়, না কয় তার কোনো হিসাব নাই। কয় এই সমস্ত বাজে কথা। আমরা মামলা করবো।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা কখনো আল-জাজিরা দেখতে চাই না। আমাদের দেখতে হচ্ছে কেনো? আল-জাজিরায় যে সমস্ত প্রকাশ করা হয়েছে তা বাংলাদেশের দুর্নীতির এক হাজার ভাগের এক ভাগ। সরকার তার স্বভাবসুলভ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তার প্রতিবাদ জানায়। তথ্য-প্রমাণ দিয়ে আপনাদেরকে প্রমাণ করতে হবে আল-জাজিরা সঠিক নয়। আল-জাজিরার খবর থেকে জনগন মুক্তি চায়।
বিএনপি নেতারা বলেন, আজ দেশ চালাচ্ছে মাফিয়া সরকার। আমরা যদি দেশকে রক্ষা করতে চাই তাহলে রাজপথে আন্দোলন করে এই মাফিয়া সরকারের পতন ঘটাতে হবে। তাহলেই খালেদা জিয়া মুক্ত হবে। তার মুক্তি হলে দেশে গণতন্ত্র ফিরবে, আইনের শাসন ফিরবে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দেশে ফিরে আসার পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
এ সময় বিএনপি নেতারা আরও বলেন, আমরা যদি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই তাহলে আমাদেরকে যুদ্ধে সামিল হতে হবে, সেই যুদ্ধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই হবে। সেই যুদ্ধ শ্লোগানের মধ্য সীমাবদ্ধ না, সেই যুদ্ধ শুধু আমাদের নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার জন্য চেষ্টা না করে দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে খালেদা জিয়াকে বন্দি থেকে মুক্তি করতে হবে। তিনি মুক্ত হলে গণতন্ত্র মুক্তির সূচনা হয়, খালেদা জিয়া মুক্ত হলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিদেশে মাটিতে থাকতে হয় না। বাংলাদেশের এসে জনগণের নেতৃত্ব দিতে পারে। সেই কারণে বলছি, বার বার বলছি, সিদ্ধান্ত নিতে হবে, বার বার বলছি, আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে কোনোভাবে রাজপথ ছাড়বো না। আমাদের কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করতে হবে। আমাদের রাজপথ দখলে নিতে হবে এবং সকল পথ-ঘাট আজকে জনগণের দখলে নিতে হবে।’
বিএনপি নেতারা বলেন, এই দুর্নীতিবাজ, ঠকবাজ, প্রতারক এই সরকারকে ঘর থেকে যাতে বেরুতে না পারে সেই পথ তৈরি করতে হবে। এমনি তারা বাক্সের মধ্যে মিশে আছে। আর ঘরে বসে বসে প্রতিদিনই তারা আবোল-তাবোল কথা বলছে। আজকে নির্বাচন কমিশন সরকারকে খুশি করার জন্য যা ইচ্ছা তাই করছে। আপনারা যখন রাস্তায় বেরিয়েছেন করোনাকে উপেক্ষা করে আসুন এই জীবনকে শান্তিময় করার জন্য, এই জীবনকে অর্থবহ করার জন্য, এদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য আমরা যুদ্ধে সামিল হই। যা করলে সরকার ভয় পাবে, সরকার মনে করবে, সময় নাই গণতন্ত্র ফেরত দিতে হবে- সেই কাজটি করতে হবে খালেদা জিয়ার একজন কর্মী হিসেবে।
এদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, সরকার যে উদ্দেশ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিয়েছিল, তা সফল হয়নি। কারণ করোনাজনিত পরিস্থিতিতে অন্য কোনো হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসার সুযোগ হয়নি। সরকারের উচিত, খালেদা জিয়ার সম্মতি সাপেক্ষে তার সুষ্ঠু চিকিৎসার প্রয়োজনে তাকে বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে রাজি হওয়া। তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারা অনুযায়ী কোনো সাজার কার্যকারিতা শর্তহীনভাবে স্থগিত করার ক্ষমতা পুরোপুরি সরকারের হাতে। আমরা চাই তার শর্তহীন মুক্তি।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়াকে তিন বছর ধরে বন্দি করা হয়েছে। গত মার্চে কারাগার থেকে বাড়ি নিয়ে আসা হলেও তিনি মূলত গৃহবন্দি। খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় দফার মুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবারও খুব শিগগির আবেদন করা হবে। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে যথাসময়ে অবশ্যই এ আবেদন করা হবে।
বর্তমানে খালেদা জিয়া গুলশানে নিজের বাসা ‘ফিরোজা’য় আছেন। তার চিকিৎসার সব কিছু লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান তত্ত্বাবধান করছেন। তার সঙ্গে নার্সসহ কয়েকজন অবস্থান করছেন। প্রায় প্রতিদিনই ভাই-বোনরা দেখতে যান তাঁকে। এ সময় তারা এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাটান।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮৩০
আপনার মতামত জানানঃ