বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে ঢাকায় অবস্থান করছেন জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রভাষক জহির উদ্দিন। যোগদানের কয়েকদিন হয়েছে মাত্র এরমধ্যেই পেয়ে গেছেন শহীদ মুখতার ইলাহী হলের সহকারী প্রভোস্টের দায়িত্ব। ক্যাম্পাসে না এসেই অভিজ্ঞ সিনিয়র শিক্ষকদের উপেক্ষা করে প্রশিক্ষণরত নবীন অনভিঙ্গ শিক্ষকদের হলের দায়িত্ব দেওয়ায় ক্যাম্পাসে চলছে তীব্র সমালোচনা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১১ জানুয়ারি, ২০২১ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৪তম সিন্ডিকেট সভায় জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান জহির উদ্দিন। এরপর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করে কখনো ক্যাম্পাসে না এসেই ঢাকায় অংশ নিচ্ছেন ছয় মাস মেয়াদী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে। কিন্তু পাঠদানে অংশ না নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে গত ২৬ জানুয়ারি জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক জহির উদ্দিনকে নিয়োগ দেয়া হয় শহীদ মুখতার ইলাহী হলের সহকারী প্রভোস্ট হিসেবে।
এ নিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সুস্পষ্ট লংঘন এবং সামরিক শাসকদের মতো ফরমান জারি বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। অন্যদিকে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের কয়েকদিনের মধ্যেই ক্যাম্পাসে না এসেও এক জুনিয়র শিক্ষককে আবাসিক হলের সহকারী প্রভোস্ট এবং অপরদুজন জুনিয়র শিক্ষককে দুই হলের সহকারী প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘যে শিক্ষক যোগদানের পর থেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। ক্যাম্পাসে এখনো আসেননি। তাকে কীভাবে হলের সহকারী প্রভোস্টের দায়িত্ব দেয়া হয়।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, গত দু বছর ধরে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিজনেস স্টাডিজ বিভাগের ডীনের দায়িত্ব অবৈধভাবে দখল করে ছিলেন। এ নিয়ে অনেকবার শিক্ষকরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। শেষ পর্যন্ত উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯ নম্বর আইনের ২৬ ধারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডীন নিয়োগ করার সুনির্দিষ্ট আইন থাকার পরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যিনি ট্রেজারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাকে অবৈধভাবে জিনেস স্টাডিজ অনুষদের ডীন হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক ড, মতিউর রহমান জানান ট্রেজারার পদ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখভাল করা। উপাচার্য ইচ্ছে করলে ডীন হিসেবে ট্রেজারারকে এ দায়িত্ব প্রদান করতে পারেন না। এটা সামরিক শাসকদের মতো ফরমান জারি করেছেন উপাচার্য বলে অভিযোগ করেন তিনি। যেভাবে উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর থেকে ১৩শ দিনের মধ্যে ১১শ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন না তার খেয়াল খুশি মতো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন যাকে ইচ্ছে নিয়োগ দেন বিরোধিতা করলে বাদ দেন দুর্নীতি অনিয়মের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে এসেছেন তিনি। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ডীন নিয়োগের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা আছে সেই আইন তিনি মানবেন না এটা হতে পারেনা।
এ ব্যাপারে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড, তুহিন ওয়াদুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক জ্যোষ্ট ও অভিজ্ঞ শিক্ষক আছেন তাদের সহকারী প্রভোস্ট পদে নিয়োগ না দিয়ে একেবারে সদস্য নিয়োগ পাওয়া নতুন শিক্ষকদের দায়িত্ব দেয়া হলে প্রশাসনিক কাজকেই গতিহীন করা হয়। তিনি আরো বলেন উপাচার্য কখন কি করছেন কি নির্দেশ দিচ্ছেন তা তিনি ভালো করে জানেন। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খাইরুল কবীর সুমন বলেন, ‘বেরোবির হল সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই নাই। ক্যাম্পাসে না এসেই দায়িত্ব দেয়াটা প্রশাসনের চরম উদাসীনতার বহিঃপ্রকাশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জানান, ‘অবিবেচনাপ্রসূত দায়িত্ব প্রদান উপাচার্যের চরম উদাসীনতার বহিঃপ্রকাশ। লিয়াজোঁ অফিসের নামে তিনি নিজেই দিনের পর দিন ঢাকায় থাকেন। তাই ঢাকায় থেকেই তিনি সব করতে চান।’’
এভাবে হলের প্রভোস্ট নিয়োগ দেয়াটা কতটা যুক্তিসঙ্গত জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয় ডিনা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৯০৯
আপনার মতামত জানানঃ