 কেউ নাম শোনেনি– এমন এক প্রতিষ্ঠান, যেটা চালায় মাত্র দুজন, সেই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার পেয়ে ‘ধনী বনে গেছে’ বলে ট্রাম্প মন্তব্য করেন, আর তারপর শোরগোল শুরু হয় বাংলাদেশে।
কেউ নাম শোনেনি– এমন এক প্রতিষ্ঠান, যেটা চালায় মাত্র দুজন, সেই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার পেয়ে ‘ধনী বনে গেছে’ বলে ট্রাম্প মন্তব্য করেন, আর তারপর শোরগোল শুরু হয় বাংলাদেশে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন অ্যাসিসট্যান্স ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ইউএসএআইডির অর্থায়নের ২৯ মিলিয়ন ডলারের এসপিএল প্রকল্প ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় ২০১৭ সালের ২ মার্চ; মেয়াদ শেষ হয় ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর।
প্রকল্পের মোট প্রতিশ্রুত অর্থের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৯০ লাখ ৬ হাজার ৮৫৫ ডলার। তার মধ্যে ২ কোটি ৮০ লাখ ১৭ ডলার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ছাড় হয়।
আট বছর মেয়াদের এ প্রকল্পে ২০২৪ সালে ছাড়ের পরিমাণ ছিল ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার ১২৭ ডলার। এর আগে ২০২৩ সালে ৩৭ লাখ ৪ হাজার ৫৮৬ ডলার; ২০২২ সালে ৩২ লাখ ৩৮ হাজার ২২ ডলার; ২০২১ সালে ২৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৮৪ ডলার; ২০২০ সালে ৩৩ লাখ ৭৩ হাজার ৬৮১ ডলার; ২০১৯ সালে ৬৭ লাখ ৩৭ হাজার ৩০ ডলার; ২০১৮ সালে ৩৫ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৭ ডলার এবং ২০১৭ সালে ৭ লাখ ৯২ হাজার ৯৪০ ডলার ছাড় হয়।
ট্রাম্পের বক্তব্য এবং এসপিএল প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালকে ইমেইল করেছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। লিখিত প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশে তাদের একটি প্রকল্পের চিফ অব পার্টি ক্যাথেরিন সেসিল বলেন, তার কোনো ‘মন্তব্য নেই’।
প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় ফরেন অ্যাসিসট্যান্স ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বিরোধ মেটানো এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে যৌক্তিক সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক কর্মী ও নাগরিকদের দক্ষতা ও শিক্ষা দেওয়া এ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানকে ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)-এর অর্থ প্রদান নিয়ে আবারও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, সংস্থাটি বাংলাদেশে একটি ‘উগ্র বামপন্থি কমিউনিস্ট’ গোষ্ঠীকে সমর্থন করার জন্য ২৯ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।
ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) মার্কিন সরকারের অধীন একটি বেসামরিক বৈদেশিক সাহায্য প্রদানকারী সংস্থা। এটি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে থাকে। ট্রাম্প সরকার সংস্থাটির বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে।
বিলিয়ন ব্যবসায়ী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন মার্কিন সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সির (ডিওজিই) পক্ষ থেকে থেকে সম্প্রতি দাবি করা হয়, বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২৯ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
পাশাপাশি ডিওজিই-এর পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে জানানো হয়, বাংলাদেশের জন্যে বরাদ্দ এই অনুদান এখন থেকে বন্ধ করা হবে। স্বভাবতই বিষয়টি নিয়ে কৌতুহল জন্মায় যে, এই ২৯ মিলিয়ন ডলার কেন এবং কাকে দেয়া হয়।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ওয়াশিংটনে রিপাবলিকান পার্টির এক সম্মেলনে ওই ২৯ মিলিয়ন ডলার নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেছেন, ২৯ মিলিয়ন ডলার যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল শক্তিশালী করতে। উগ্র বামপন্থি কমিউনিস্টদের পক্ষে ভোট করতে এই অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে। কাদেরকে এই অর্থ দেয়া হয় তা আপনাদের খতিয়ে দেখতে হবে।
এর আগে বিষয়টি নিয়ে গত শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ওয়াশিংটনে গভর্নরদের নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট শক্তিশালী করার নামে এমন এক সংস্থাকে ২৯ মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়, যার নাম আগে কেউ শোনেনি। সেখানে মাত্র দুজন কাজ করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা ২৯ মিলিয়ন ডলারের চেক পেয়েছে। আপনি ভাবতে পারেন, আপনার একটি ছোট্ট প্রতিষ্ঠান আছে, আপনি ১০ হাজার পান। কিন্তু আমরা মার্কিন সরকার থেকে একটি প্রতিষ্ঠানকে ২৯ মিলিয়ন ডলার দিয়ে দিচ্ছি। যে প্রতিষ্ঠানে মাত্র দুইজন কাজ করেন।’
এরপর ট্রাম্প উপহাসের সুরে বলেন, ‘দুইজন লোক..আমি মনে করি তারা খুব খুশি। কারণ তারা এখন খুব ধনী। খুব শিগগিরই বড় জালিয়াত হিসেবে একটা ভাল ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে তাদের ছবি প্রকাশ হবে।’
ওইদিন বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতকে এমন সহায়তা দেয়া নিয়েও কথা বলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে যাচ্ছে ২১ মিলিয়ন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য আমরা ২১ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছি। আমাদের কি হবে? আমিও তো ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে চাই।’
রোববার ভারতের ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ভারতে নির্বাচনের জন্য ইউএসএইড সহায়তা করেছে। ভারতকে কেন তারা সহায়তা করবেন? যেখানে ভারত তাদের পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে রেখেছে।’
এদিকে, এবিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়নের নামে দুটি সংস্থাকে ইউএসএইডের মাধ্যমে দেয়া ২৯ মিলিয়ন ডলারের অর্থের বিষয়টি এনজিও ব্যুরো খতিয়ে দেখতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিষয় না হওয়ায়, এটি সরাসরি খতিয়ে দেখবে না। এনজিও ব্যুরো খতিয়ে দেখে যদি প্রমাণ পায় তাহলে অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেবে।
দেশের স্বার্থে যে কোনো উন্নয়নের ক্ষেত্রে ফান্ড আসতেই পারে। বড় বিষয় হলো কোন উদ্দেশ্যে সেই টাকাটি নিয়ে আসা হয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। ভবিষ্যতে যাতে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজে ব্যবহারের জন্য অর্থ না আসে, এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
আপনার মতামত জানানঃ