হিউম্যানয়েড রোবোটিক্সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এসব রোবটকে আরও স্মার্ট এবং কার্যকর করে তোলার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের ব্যবহার।
বর্তমানে আগের চেয়ে আরও উন্নত ও কর্মক্ষম হয়ে উঠছে মানুষের মতো দেখতে ও মানুষেরই মতো কাজ করতে পারবে এমনভাবে ডিজাইন করা বিভিন্ন রোবট। যাকে বলা হচ্ছে, হিউম্যানয়েড রোবট।
এগুলো এখন আর কেবল বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর অংশ নয়, বরং বাস্তব জগতে প্রয়োগের জন্যও তৈরি করা হচ্ছে এ ধরনের রোবট, যা বাড়িঘর ও কাজের ক্ষেত্রে সাহায্য করা থেকে শুরু করে মহাকাশ অন্বেষণে পর্যন্ত ব্যবহৃত হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
হিউম্যানয়েড রোবোটিক্সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এসব রোবটকে আরও স্মার্ট এবং কার্যকর করে তোলার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের ব্যবহার।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে এখন নিজেদের পরিবেশ থেকে শিখতে পারে, মানুষের কথা বুঝতে পারে ও মুখের অভিব্যক্তি এবং কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে আবেগ শনাক্ত করতে পারে এসব রোবট।
উন্নত এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে ‘হ্যানসন রোবোটিক্স’ কোম্পানির ‘সোফিয়া’ ও ‘সফটব্যাংক’-এর ‘পেপার’-এর মতো বিভিন্ন রোবটকে। যা কথা বলতে, প্রশ্নের উত্তর দিতে ও অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের ওপর ভিত্তি করে নিজের আচরণকেও মানিয়ে নিতে পারে।
মানুষের আচরণ বোঝার ও সাড়া দেওয়ার এ সক্ষমতা বিশ্বের গ্রাহক পরিষেবা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন হিউম্যানয়েড রোবটকে আরও প্রয়োজনীয় করে তুলেছে।
এসব রোবটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হচ্ছে এদের রোবোটিক গতিবিধি বা চলাচলের উন্নতি। একটি হিউম্যানয়েড রোবটকে সত্যিকার অর্থে মানুষের কার্যকলাপ অনুকরণ করতে হলে, এদেরকে হাঁটা ও দৌড়ানোর মতো কাজ নির্ভুলতার সঙ্গে করতে হবে। এমনটি সম্ভব করেছে পদার্থ বিজ্ঞান ও যান্ত্রিক প্রকৌশলের সাম্প্রতিক নানা অগ্রগতির কারণে।
‘বস্টন ডায়নামিক্স’-এর অ্যাটলাসের মতো রোবট পেছন দিকে বা বাধা কাটিয়ে চলার মতো জটিল কাজ করতে পারে, যা এসব রোবটের বিস্ময়কর ভারসাম্য ও সমন্বয়েরই প্রতিফলন। এসব সক্ষমতা এমন রোবটদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যেসব রোবট দুর্যোগ সাড়াদান বা অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানের মতো অপ্রত্যাশিত পরিবেশে কাজ করে।
বর্তমানে উপাদান ও নকশার অগ্রগতির ফলে বিভিন্ন হিউম্যানয়েড রোবট আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। নমনীয় রোবোটিক্স ও সিনথেটিক উপাদান ব্যবহার করে এমন ধরনের রোবট তৈরি করছেন প্রকৌশলীরা, যা মানুষের মতো দেখতে এবং ‘মানুষের মতো অনুভব’ও করতে পারে।
এসব উপাদান রোবটগুলোকে আরও নমনীয় কব্জা ও ত্বক দেয়, যা সহজেই মানুষের স্পর্শ অনুকরণ করতে পারে। প্রবীণদের যত্নের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসব রোবট বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে বয়স্ক ব্যক্তিদের দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করার পাশাপাশি তাদের সাহচর্য দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে এরা।
মানুষের আশপাশের পরিবেশকে বোঝা ও মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও উন্নত হয়ে উঠছে এসব রোবট। এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে কম্পিউটার ভিশনের অগ্রগতি এদেরকে জনাকীর্ণ বিভিন্ন স্থানের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে ও বিভিন্ন বস্তুকে শনাক্ত করতে এবং মানুষের সঙ্গে নিরাপদে যোগাযোগ করতে সাহায্য করেছে।
এসব হিউম্যানয়েড রোবট বিস্ময়কর অগ্রগতি করলেও জটিলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য এখনও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে এদেরকে। মানুষের আচরণের পুরোপুরি প্রতিলিপি তৈরি করতে ও জটিল সামাজিক পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এমন রোবট তৈরি করা এখনও কঠিন।
হিউম্যানয়েড রোবট নির্মাতারা বলছেন, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যত সমাজে আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারে এরা। ফলে দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করা থেকে শুরু করে মানুষের জন্য বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে এসব রোবট।
আপনার মতামত জানানঃ