চারপাশে এত এত বস্তু—ঘরবাড়ি, পাহাড়-পর্বত, মাটি-পাথর, পথ-ঘাট, ধাতু-অধাতু, পৃথিবী-চাঁদ, গ্রুহ-উপগ্রহ-নক্ষত্র— চারপাশে যা কিছু দেখা যায়, সবই বস্তু। তার পরও যদি বলা হয়, মহাবিশ্ব এসব বস্তু দিয়ে তৈরি নয়, তৈরি এমন একটা কিছু দিয়ে দেখা যায় না, দেখা যায়, ছোঁয়া যায় না।
এটাকে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, দার্শনিকের অতি কল্পনাও ভাবতে পারেন। কিন্ত এই কথা যিনি বলেছেন তিনি বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত একজন কসমোলজিস্ট—কার্লো রোভেলি।
তিনি শুধু বিজ্ঞানী নন, জনপ্রিয় বিজ্ঞানের লেখক হিসেবেও সারা বিশ্বে তার কোটি কোটি পাঠক রয়েছে। রোভেলি তার ‘দ্য অর্ডার অব টাইম’ বইয়ের একটা অধ্যায়ের নাম দিয়েছেন ‘দ্য ওয়ার্ল্ড মেড অব ইভেন্ট, নট থিংস’। দেখা যাক, সেই অধ্যায়ে নিতি কী বলতে চেয়েছেন। ওই অধ্যায়ের হুবুহু অনুবাদে আমরা যাব না, নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করব, মূল বক্তব্যটা।
মহাবিশ্ব দেখলে আপনার কী মনে হয়? আচ্ছা, মহাবিশ্বের কথা বাদ দিন, মোটা দাগে পৃথিবীকে দেখলে কী মনে হয়?
মনে হয়, এটা স্থির ও স্থায়ী একটা জায়গা। পৃথিবীর ঘূর্ণনের কথা বাদ দিয়ে ভাবুন। ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, জড়বস্তু—সব কিছু মনে হয় স্থির, নট নড়ন-চড়ন। আসলে কিন্তু তা নয়, পৃথিবী পরিবর্তনশীল।
সব সময় এখানে কোনো না কোনো ঘটনা ঘটছে। সবখানে, সব বিন্দুতে। গোটা পৃথিবীটা আসলে এসব ঘটনার একটা নেটওয়ার্ক। পাহাড়-পর্বতের মতো জড় পদার্থ একেবারে চিরস্থির বলে মনে হলেও তার ভেতরে অণু-পরামাণুতে চলছে নিউক্লিয়ার ক্রিয়া, নইলে কোনো পদার্থই স্থির থাকতে পারত না।
অন্যদিকে ঘড়ির কী? ঘড়ির কাঁটা মানেই সময় নয়। ঘড়ির কাঁটা হলো পৃথিবীতে ঘটনা ঘটছে তা পরিমাপের মাপকাঠি। এটা পরম কোনো মাপকাঠি নয়। একটা বস্তু বা ঘটনার তুলনায় আরেকটা বস্তু বা ঘটনার পরিবর্তন কিভাবে ঘটছে, ঘড়ির কাঁটা আসলে সেটাই মাপে। অর্থাৎ পৃথিবী একটা বিশাল পরিতর্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সব সময়। ঘড়ির কাঁটা আমাদের সেটাই মেপে দেখাচ্ছে।
আন্দোলন কি বস্তু? কিংবা গান গাওয়া, কিংবা যুদ্ধ কিংবা মৃত্য—এগুলো সবই একেকটা ঘটনা। আমরা, মানে মানুষেরা কি কোনো বস্তু নাকি ঘটনা? একই প্রশ্ন হতে পারে সব প্রাণী, উদ্ভিদ এবং অণুজীবদের ক্ষেত্রেও। প্রাণীগুলো যদি চলাফেরা নাও করে, তা-ও তাদের শরীরের ভেতরে সব সময় শারীরিক ক্রিয়া ঘটছে, রাসায়নিক ও নিউক্লিয়ার-বিক্রিয়া চলছে। সুতরাং ঘটনা ঘটছেই।
গোটা পৃথিবীটাকে আমরা যতই স্থির ভাবি না কেন, শেষ পর্যন্ত সব কিছু হিসাব-নিকাশ হবে পরমাণুতে গিয়ে, যেখানে মৌলিক কণারা কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের জটিল কম্পন ছাড়া কিছুই নয়। এসব ক্ষেত্রে কণারা যেমন খুব দ্রুত জন্ম ও মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যায়।
মোদ্দকথা হলো, পৃথিবীকে আমরা কিভাবে দেখব? এটাকে যদি স্থির বস্তু ভাবি, তাহলে এর কোনো কিছুই বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু যখন আপনি ঘটনার দিকে মনোযোগ দেবেন, তখনই একে বুঝতে পারবেন। মহাবিশ্বের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। মহাবিশ্বের প্রতিটা স্থান একেকটা ঘটনার ফল। আসলে পদার্থবিদ্যার জন্মই হয়েছে ঘটনা ব্যাখ্যা করার জন্য, এ জন্য দেখবেন পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার নামের সঙ্গে মেকানিকস বা গতিবিদ্যা যুক্ত থাকে।
রোভেলির ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে আমরা নিজেদের মতো করে একটু ভেবে দেখি। পুরো পৃথিবীতে আমরা স্থানের দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখি। পৃথিবীর কোনো ছবি দেখে মনে হয় না, এই ছবিতে সময় বলে কিছু আছে। একটা স্থির ছবিতে আসলে সময়ের মাত্রা উপস্থাপন করা সম্ভবও নয়। বড়জোর কোনো এক মুহূর্তে পৃথিবীর স্থানীক চেহারা কেমন সেটা ফুটিয়ে তোলা সম্ভ। ভিডিওগ্রাফি হলে অবশ্য অন্য কথা।
এবার একটা প্রশ্ন করি, গোটা মহাবিশ্বের চেহারা কেমন বলুন তো? একটু গুগলে সার্চ দিয় দেখতে পারেন। বেশির ভাগই সিলিন্ডারের মতো অথবা ফানেলের মতো একটা ছবি দেখাবে। গোলাকাকার ছবিও পাবেন, তবে সেগুলোর সংখ্যা নগণ্য। কিছু বৃত্তাকার ছবিও পাবেন।
এই যে গোলাকের মতো চেহারা, এটাই তো বেশি হওয়া উচিত ছিল? সিলিন্ডারের মতো ছবি কেন এত বেশি? আপনি কারণ হলো, পৃথিবীকে আমরা স্থানিক মাত্রা দিয়ে যতই প্রকাশ করি, মহাবিশ্বকে বোঝার জন্য স্থানের চেয়ে কালের গুরুত্ব অনেক বেশি। তা ছাড়া মহাবিশ্বের স্থানিক চেহারা নিয়েও অনেক ধোঁয়াশা রয়েছে। বিপরীতে সময়ের সাপেক্ষে মহাবিশ্বের কাঠামো বরং অনেক বেশি বোধগম্য।
সিলিন্ডার বা ফানেলের মতো যে মহাবিশ্বটা আপনি দেখেন, সেটা কোনো এক মুহূর্তের মহাবিশ্বকে বোঝায় না। বরং এটা মহাবিশ্বের গত ১৩৮০ কোটি বছরের চেহারা দেখায়। যেখানে বিং ব্যাং থেকে বর্তমান পর্যন্ত—পুরো ইতিহাস ছবিতে লুকিয়ে আছে। অনেকটা ব্লক ইউনিভার্সের মতো। কিন্তু পুরোপুরি ব্লক ইউনিভার্স নয়।
ব্লক ইউনিভার্সে মহাবিশ্বের ১৩৮০ কোটি বছরের ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতের চিত্রও থাকে। কিন্তু আমাদের এই সিলিন্ডার আকৃতির মহাবিশ্ব বর্তমানের পর ভবিষ্যতের মহাবিশ্বকে দেখানো হয় না।
কেন দেখানো হয় না? কারণ ভবিষ্যতের মহাবিশ্বের চেহারা কেমন হবে, মহাবিশ্ব ঠিক কবে গিয়ে মৃত্যুবরণ করবে, কিংবা আদৌ মৃত্যুবরণ করবে কি না—এ বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই।
সিলিন্ডার বা ফানেলাকারের যে মহাবিশ্বের ছবি আমরা দেখি, এর শুরুর সময়টাকে আমরা ধরতে পারি শূন্য—সেখানে বিগ ব্যাং ঘটেছে।
এবার মহাবিশ্বকে একটা রেখার সঙ্গে তুলনা করুন। ধরা যাক, শূন্যবিন্দু থাকে ডান দিকে অগ্রসর হচ্ছে রেখাটা সময় বৃদ্ধির সঙ্গে। ১৩৮০ কোটি বছর এগোনোর পর আজকের অবস্থায় পৌঁছেছে মহাবিশ্ব-রেখাটা। এটাকেই আপাতত শেষ বিন্দু ধরুন।
এখন যদি এই সিলিন্ডারটাকে কেটে টুকরা টুকরা করেন, তাহলে কী হবে? বোঝা একটু কঠিন হলে, সিলিন্ডারের বদলে একটা বড়সড় শসা ধরে নিন। একটা সাধারণ শসাকে আপনি লম্বালম্বি কাটতে পারেন, আবার কেটে বহু টুকরা করতে পারেন। কারণ সেটা স্থানের তিন মাত্রায় পাচ্ছেন। কিন্তু মহাবিশ্বের শসাটা আপনি স্থানিক মাত্রায় কাটতে পারবেন না। এটাকে আপনি কাটতে পারবেন শুধু প্রস্থ বরাবর। কেটে যদি স্লাইস বানান, তাহলে গোল করে কাটা শসার মতোই স্লাইস পাবেন। নিচের ছবির মতো।
ধরা যাক, শসাকে আপনি খুব পাতলা করে কাটলেন। সময় বরাবর কাটছেন, তাই আপনি বৃত্তাকার পাবেন এবং খুব পাতলা স্লাইস পাবেন। এটাই আসলে মহাবিশ্বের যেকোনো এক মুহূর্তের ছবি। সেটার চেহারা হবে নিচের ছবির মতো।
ধরে নিলাম, এই স্লাইসটাই মহাবিশ্বের কোনো এক সময়ের প্রস্থচ্ছেদ। তাহলে পুরো স্লাইস বা বৃত্তটা জুড়ে কি একই সময় বইছে?
যদি আপনার অবস্থান বৃত্তের ভেতরে কোনো বিন্দুতে হয়, তাহলেও পুরো বৃত্তটাতে একই সময় নয়। বরং এখানে যোজন-যোজন ব্যবধান সময়ের। কেন? ধরা যাক, কেন্দ্র থেকে কোনো এক উপায়ে বৃত্তের পরিধির গ্যালাক্সিগুলো আপনি দেখতে পারছেন।
কিন্তু সমস্য হলো দূরত্ব। সময় একমাত্রিক রেখা। সেটাকে আমারা বাঁ থেকে ডানে দেখিয়েছি। তাই কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে যে দূরত্ব, সেটা স্থানিক দূরত্ব। ধরা যাক, কেন্দ্র থেকে পরিধির দিকে কোনো এক গ্যালাক্সির দূরত্ব ৬০০ কোটি আলোকবর্ষ। তারমাণে সেখান থেকে আপনার কাছে আলো আসতে সময় লাগবে ৬০০ কোটি বছর।
তাই এই মুহূর্তে যে গ্যালাক্সিটা আপনি দেখতে পাচ্ছেন, সেটা আসলে এর ৬০০ কোটি বছর আগের দৃশ্য। অর্থাৎ স্থানের একটা মাত্রা থাকলেও আপনি দূরত্বের কারণে বলতে পারছেন না, পুরো স্লাইসটা জুড়ে একই সময়ের দৃশ্য দেখছেন।
অবশ্য পুরো স্লাইসটার একই মুহূর্তের দৃশ্য দেখতে হলে আপনাকে মহাবিশ্বের বাইরে কোনো স্থানকালে দাঁড়াতে হবে। এখন কথা হচ্ছে, এই যে মহাবিশ্ব, এখানে তাহলে স্থানের ভূমিকা কোথায়?
মহাবিশ্বের বাইরে দেখলে একটা স্লাইস একটা স্থির সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু এর সঙ্গে যদি স্থানের তিনটি মাত্রা যোগ করেন, তাহলে মহাবিশ্ব একটা পুরু স্লাইসে পরিণত হবে নাকি একটা বৃত্তে চেহারা নেবে?
মহাবিশ্বের বৃত্তাকার ত্রিমাত্রিক মডেলও দেখা যায়। কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। এর আগে ইনফ্লেশন থিওরির হিসাব মতে আমরা দেখেছিলাম, মহাবিশ্বের আকার আসলে ফ্ল্যাট বা সমতল। সেই হিসেবে মহাবিশ্বের সব গ্যালাক্সি বা বস্তুকে যদি একটা সমতলের ওপর সাজানো যায়, তাহলে যেমন দেখাবে তেমন হওয়া উচিত। অর্থাৎ মহাবিশ্বটা হলো মহাজাজাগতিক বস্তুগুলো দিয়ে তৈরি একটা বিশাল চাদরের মতো।
কিন্তু এই মডেলেও একটা সমস্যা রয়ে গেছে। সেই চাদর বৃত্তাকার, নাকি চার কোনা, নাকি অন্য কোনো ক্ষেত্রের মতো। এটা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। তবে এটাও ঠিক, মহাকর্ষ বলের কারণেই বস্তুদের চার কোনা চাদর তৈরি করা উপায় নেই। বরং সেগুলো বৃত্তাকার শেপ নেবে।
এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের কাছে যে হিসাব, তা বলে মহাবিশ্ব আসলে সমতল। কিন্তু মহাবিশ্ব ঠিক কত বড়, তা-ও আমরা জানি না। বিজ্ঞানীরা যতটুকু পর্যবেক্ষণ করেছেনে, সেইটুকুর ব্যাস ৯৩ বিলিয়ন আলোক বর্ষ।
ধরলাম মহাবিশ্ব ফ্ল্যাট বা সমতল। কিন্তু আমরা চারপাশে যেদিকে তাকাই, সেদিকেই মহাবিশ্বের গভীরতা একই কেন। সমতল হলে তো দ্বিমাত্রিক হওয়ার কথা।
প্রথমে একটা ব্যাপার ক্লিয়ার হওয়া দরকার। পৃথিবীটা যে গোলকের মতো, এই ব্যাপারটা আমরা কি অত সহজে বুঝতে পারি? চারপাশেই তো সমতল মনে হয়। হ্যাঁ, দিগন্তের ওপারে সূর্য লুকিয়ে যাওয়া, কিংবা সমুদ্রের বুকে দিগন্তের ওপার থেকে উদয় হওয়া জাহাজের মাস্তুল দেখে গ্রিক যুগের দার্শনিকরাও বুঝতে পেরেছিলেন পৃথিবী গোলকের মতো। তারা গোলকের মতো পৃথিবীর একটা ছবিও আঁকতে সক্ষম হয়েছিলেন।
পৃথিবীর আকার বিশাল। তার ওপর এর বুকেই আমাদের বসবাস, তাই সাধারণ মানুষের বোঝার উপায়া ছিল না পৃথিবী ফুটবলের মতো গোল। তেমনি মহাবিশ্বের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। মহাবিশ্বের ভেতরে বাস করে এর আকৃতি বোঝা কঠিন। ভবিষ্যতে হয়তো বোঝা সম্ভব হতে পারে।
মহাবিশ্বের আকৃতি বুঝতে না পারার আরেকটা কারণ হতে পারে, মহাবিশ্ব হয়তো চার মাত্রায় সীমাবদ্ধ নয়। মহাবিশ্বের সবটুকু বুঝতে হলে একটা থিওরি অব এভরিথিংসে প্রয়োজন। যে তত্ত্ব একই সুতায় বেঁধে দেবে সাধারণ আপেক্ষিকতা আর কোয়ান্টাম তত্ত্বকে। আর সেটা হতে পারে সুপার স্ট্রিং থিওরি।
সুপার স্ট্রিং থিওরি অনুযায়ী সময়ের মাত্রা মাত্র তিনটি নয়, ১০টি। সময়ের মাত্রাসহ মহাবিশ্বের মাত্রা মোট ১১টি। ১০ মাত্রার কথা বাদ দিন, ত্রিমাত্রির স্থানের বাইরে চতুর্থ মাত্রাটা, অর্থাৎ সময়সহ পঞ্চম মাত্রাটা কেমন হতে পারে, তার একটা ঝাপসা ধারণা হয়তো বিজ্ঞানীরা দিতে পারেন। কিন্তু স্পষ্ট চিত্র বোঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় এখনই। কারণ আমরা তিন মাত্রার প্রাণী। মহাবিশ্ব যদি স্থানের দশ মাত্রায় থাকে, তাহলে এর সঠিক আকৃতি সহসা আমরা অনুভব করতে পারব না।
উচ্চ মাত্রার আলাপ বাদ দিই। ফিরে আসি সময়ের মাত্রায় কথায়। মহাবিশ্বের সবচেয়ে স্পষ্ট চিত্র চিত্র বিজ্ঞানীরা যেটা এঁকেছেন, সেখানে স্থানের মাত্রা গুরুত্ব পায়নি। বরং সময়টাকে গুরুত্ব দিলেই মহাবিশ্বের চিত্রটা আমরা বেশ অনুভব করতে পারি৷ তাই যখন কার্লো রোভেলি বলেন, মহাবিশ্ব বস্তু দিয়ে নয়, সময় দিয়ে গঠিত—প্রথমে যতই অস্বস্তি লাগুক, তলিয়ে ভাবলেই বোঝা যায়, তিনি ভুল কিছু বলেননি।
আপনার মতামত জানানঃ