বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ের একজন নারী কারাতে খেলোয়াড়কে পিটিয়ে আহত করেছেন স্বয়ং তার প্রশিক্ষক বা কোচ। মাথায় আঘাত পেয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী ওই কারাতে খেলোয়াড়ের নাম নাফিসা হাসান প্রকৃতি। কারাতের তারকা হওয়ার স্বপ্ন দেখা প্রকৃতি এখনো মাথায় তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছেন। তবে পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার পর পাঁচদিন গত হলেও অভিযুক্ত কোচের ব্যাপারে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
গত ১৩ জানুয়ারি মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে প্রশিক্ষণের সময় কোচ সমশের ভূঁইয়া পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন প্রকৃতিকে। কিন্তু মাটিতে পড়ে গেলেও তাকে ওঠানোর কোনো প্রয়োজন দেখাননি সমশের। দ্রুত প্রকৃতিকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার একটি হাসপাতালে। সেখানে সিটি স্ক্যান করানোর পর বাসায় ফিরলেও কোচের এমন আচরণে ভয়ে কারাতে ক্লাস করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন প্রকৃতি।
নারী কারাতে খেলোয়াড়ের এমন অবস্থার জন্য ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সতীর্থরাও। শুক্রবার কোচ সমশের আলীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে মানববন্ধনও করেছেন প্রকৃতির সতীর্থরা ও কোচেরা। আর এক দিন আগে সমশের আলীর বহিস্কারের জন্য যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপির কাছে আবেদন জানিয়েছে মার্শাল আর্ট কনফেডারেশন ও প্রকৃতির পরিবার।
অসুস্থতার জন্য কথা বলতে পারছেন না প্রকৃতি। সংবাদমাধ্যমকে তার মা সেলিনা আক্তার বলেন, ‘কোচ সমশের আমাদের বাসাতেও এসেছিলেন। তবে নমনীয়তার বদলে তার কথাবার্তা ছিল ঔদ্ধত্বপূর্ণ। ফলে আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনে (বিওএ) কোচের শাস্তির ব্যাপারে আবেদন জানিয়েছি।’
এদিকে কনফেডারেশনের চিঠি এখনও হাতে পৌঁছেনি বলে জানান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ আহসান রাসেলের একান্ত সচিব রশিদুজ্জামান সেরনিয়াবাত। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে তাতে লেখা আছে যে, ১৩ জানুয়ারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুশীলনের সময় সমশের আলী ভূঁইয়া অত্র ফেডারেশনের (কারাতে) ছাত্রী নাফিসা হাসান প্রকৃতির গায়ে হাত তোলেন (মাথায় ও শরীরে গুরুতর আঘাত পায়)।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বেশ কয়েক মাস আগেও আনসারের খেলোয়াড় ও কোচ গোলাম সাব্বির মাসুমের ওপর আক্রমণ করে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন কোচ সমশের। এ ছাড়া দেড় যুগ আগে এই কোচের সঙ্গে অনুশীলনের সময় মাথায় আঘাত পেয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পরে দু’জন জুডোকাও মারা যান বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সমশের আলী, ‘অনুশীলন করতে গিয়ে ধাক্কা লেগেছে। আমিও পড়ে গিয়েছিলাম। সেখানেই আমার এক ছাত্র ছিল চিকিৎসক। তাকে বললাম, প্রকৃতিকে দেখার জন্য। আমি নিজেও প্রকৃতির সঙ্গে কথা বলেছি। সে বলেছিল, আমি ভালো আছি। কিছুক্ষণ পরেই অবশ্য মিরপুর থানা থেকে আমাকে ফোন করা হয়, যত্নে অবহেলা করার জন্য নাকি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে মর্মে।’
প্রকৃতির বিষয়টি এখন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন পর্যন্ত গেছে। জুডো ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলী আনোয়ার বলেন, ‘প্রকৃতির ঘটনায় তার বাবা-মা বিওএতে চিঠি দিয়েছেন। উপ-মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু সাহেব আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছেন। আমি বলেছি, এটা কারাতের বিষয়। আমাদের জুডোর কিছু নয়। তার পরও আমি সমশের আলমকে লিখিত বক্তব্য দিতে বলেছিলাম ঘটনা সম্পর্কে। কিন্তু সে কিছুই দেয়নি।’
এসডাব্লিউ/ডিএস/আরাআ/১০৩৩
আপনার মতামত জানানঃ