কারাগারগুলোতে প্রতিদিনই মাদক সেবন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে মাদকাসক্তরা আসছে। ইতিমধ্যে দেশের ৬৮টি কারাগারে প্রায় ৭০ হাজার বন্দি রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ হাজার বন্দি মাদক মামলার আসামি। মাদক মামলায় বন্দিদের মধ্যে বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। তারা কারাগারে আসার পরেও মাদক সেবনের চাহিদা থাকে। এসব মাদক কারাগারের ভেতর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে কোনো না কোনো ভাবে প্রবেশ করেই। অভিযোগ রয়েছে যে, এসব মাদক কারাগারের ভেতর প্রবেশ করে কারারক্ষীদের হাত ধরেই। বন্দিদের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েক জন কারারক্ষীকে বরখাস্ত ও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারারক্ষীসহ কারাগারের স্টাফদের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১২ হাজার কারারক্ষী ও স্টাফদের ডোপ টেস্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে কারা অধিদপ্তর।
কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কারাগারের স্টাফ ও কারারক্ষীদের ডোপ টেস্টের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে কারা অধিদপ্তর। মাদকাসক্ত কারারক্ষী ও স্টাফদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, কারাগারের স্টাফ ও কারারক্ষীদের ডোপ টেস্টের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে ১২ হাজার স্টাফ ও কারারক্ষীর ডোপ টেস্ট করা একটি কঠিন ব্যাপার। সে কারণে যেসব ব্যক্তি সন্দেহভাজন রয়েছেন, তাদের গতিবিধি, চলাফেরা মনিটরিং করা হচ্ছে। কারা হাসপাতালের চিকিৎসকরাও বিষয়টিতে নজর দিচ্ছেন।
পুলিশের মাদক সেবনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের জুন মাস থেকে সমস্ত পুলিশকে ডোপ টেস্টের আওতায় আনা হয়। এতে বিভিন্ন সময়ে করা ডোপ টেস্টে বিভিন্ন থানা থেকে একে একে পুলিশ সদস্য মাদক সেবনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। একইসাথে চাকরি থেকে বরখাস্তও হন অনেকে। এখনো পুলিশ সদস্যদের মাঝে ডোপ টেস্ট চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার কারারক্ষী ও স্টাফদের মাঝে ডোপ টেস্টের উদ্যোগ নিলো কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, কারাগারগুলোতে কারারক্ষীদের প্রশ্রয়ে একদিকে যেমন কয়েদিদের মাঝে মাদক সেবন হয় তেমনি হয় কারারক্ষীদের মাঝেও। কারাগারগুলোতে মাদকের চাহিদা থাকায় কারারক্ষীদের অনেকেই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। মূলত এরাই কারাগারের মাদকের যোগান দিয়ে থাকেন। একইসাথে নিজেদের মাঝেও সেবন চলতে থাকে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এতে মাদক সেবন মামলায় কয়েদিদের সাথে কারারক্ষীদের পার্থক্য ঘুচে গেছে। কারাগারের ভেতরে একদল এবং একদল বাইরে থাকা ব্যতিত অন্যকোনো তফাৎ নেই। কারাগারের অভ্যন্তরে প্রশাসনিক নজর কিংবা মিডিয়ার অতোটা পদচারণা না থাকাতে তারা নির্বিঘ্নে মাদক সেবন ও বিক্রি করে থাকেন। এর আগে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকায় কোনো কোনো কারারক্ষী বরখাস্ত হলেও তাদের ব্যাপারে প্রশাসনের তেমন কোনো উদ্যোগ ছিল না। এবার কারারক্ষী ও স্টাফদের ডোপ টেস্টের আওয়ায় এনে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান জানান তারা।
এসডব্লিউ/ডিই/এমএন/কেএইচ/২১৪৫
আপনার মতামত জানানঃ