মাদকের মহামারী সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও ভেতরেও ছড়িয়ে পড়েছে।তাদের বিরুদ্ধেও মাদক সেবন, ব্যবসা ও সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। অতীতে মাদকসহ নিজ বাহিনীর হাতেই অনেক পুলিশ সদস্য আটক-গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এদিকে ময়মনসিংহের ভালুকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ও সহযোগিতার অভিযোগে এক এসআই ও দুই পুলিশ কনস্টেবলসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, ভালুকা মডেল থানার এসআই মানস কুমার শিকদার (২৯), কনস্টেবল আব্দুল মান্নান (৩৪) ও কনস্টেবল মুসফিকুজ্জামান (৩৪)। এ সময় স্থানীয় দুই যুবক মো. আশিকুর রহমান নিরব (২৪) ও খোকন শেখ (২৬)।
ওই ঘটনায় মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভালুকা মডেল থানার এসআই ফজিকুল ইসলাম বাদি হয়ে মাদক আইনে মামলাটি করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার সকালে ভালুকা পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইয়াবা বেচাকেনার খবর পেয়ে অভিযান চালায় মডেল থানার পুলিশ। এ সময় পুলিশের সোর্স মো. আশিকুর রহমান নীরব ও খোকন শেখ দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের শরীরে তল্লাশি চালিয়ে ২২০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উপপরিদর্শক মানস কুমার শিকদার, কনস্টেবল আব্দুল মান্নান ও কনস্টেবল মুসফিকুজ্জামানের সহযোগিতায় তারা দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা করে আসছেন বলে স্বীকার করেছেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই দিন রাতেই কনস্টেবল আব্দুল মান্নানকে গ্রেপ্তারের পর তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ৭৬৯ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। একই অভিযোগে উপপরিদর্শক মানস কুমার শিকদার ও কনস্টেবল মুসফিকুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কনস্টেবল আব্দুল মান্নানকে গ্রেপ্তারের পর তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ৭৬৯ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। একই অভিযোগে উপপরিদর্শক মানস কুমার শিকদার ও কনস্টেবল মুসফিকুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ওই পাঁচজনকে গত রোববার বিকেলে আদালতের তোলা হয়। পরে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় উপপরিদর্শক মানস, কনস্টেবল মুসফিকুজ্জামান ও মান্নানসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসা অব্যাহত রয়েছে। কোথাও মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ আসে পুলিশের বিরুদ্ধে, কোথাওবা অস্ত্র বিক্রয়কারী হিসাবে, কোথাওবা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ, অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ, পুলিশের নেতৃত্বে মাদক পাচার চক্র গড়ে ওঠার অভিযোগ, চুরি ডাকাতি ইত্যাদি হেন কোনো অপরাধ নেই যা পুলিশ শব্দটির সাথে জুড়ে বসে নাই। প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে এমনসব অভিযোগ আসে।
বিশ্লেষকরা বলেন, মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন মিডিয়ার শিরোনাম দেখা যায়, ইয়াবাসহ পুলিশ গ্রেপ্তার। পুলিশ যদি এভাবে মাদক কারবারের সাথে জড়িত হয়ে থাকে, তাহলে দেশ থেকে মাদক নির্মুল করা সম্ভব নয়। মাদকের ব্যবসা এখন আর সাধারণ পাবলিকের মধ্যে নেই। এ ব্যবসা এখন উচ্চ পর্যায়ে চলে গেছে। ইয়াবা ব্যবসা নিজের বাসনা ও সুবিধামতো করার সুযোগ ও সাহস দেশে কারোরই নেই। কতিপয় অসৎ পুলিশই পাবলিক দিয়ে ইয়াবা ব্যবসা করিয়ে থাকে। এ কারণেই দেশে ইয়ারা ব্যবসা জমজমাট।
তারা বলেন, পুলিশ জনগণের সেবক। জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব যাদের ওপর ন্যস্ত থাকে, তারাই যদি মাদক গ্রহণ করে বা মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, তাহলে জনগণ তার কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাবে না। এটা গুরুতর অপরাধ। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৫২
আপনার মতামত জানানঃ