এক পুলিশ সদস্যকে তুলে নিয়ে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে যশোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বিপুর বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার(১১জানু) রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ কনস্টেবল ইমরানকে উদ্ধার করে পুলিশ এবং ঘটনাস্থলে থেকে বিপুসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ লাইনে নিয়ে আসে। এ ঘটনার পর মঙ্গলবার সকাল থেকে যশোর শহরে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাত ৮টার দিকে পুলিশ লাইন্সে কর্মরত কনস্টেবল ইমরান সাদা পোশাকে পুরাতন কসবাস্থ শহীদ মিনারে বসে এক নারীর সাথে গল্প করছিলেন। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী সেখানে গিয়ে নারীর সাথে গল্প করতে দেখে তার ওপর চড়াও হন। নিজের পরিচয় দিয়ে ও পরিচয়পত্র দেখিয়ে পুলিশ কনস্টেবল ইমরান এর প্রতিবাদ করেন। কিন্তু তাকে শহীদ মিনার থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় আবু নাসের ক্লাবে।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার একজন সদস্য জানান, ওই ঘটনার সময় সেখানে আসেন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বিপু। তিনি এ সময় পুলিশ কনস্টেবলকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সেখান থেকে তাকে রিকশা করে নিয়ে যাওয়া হয় পুরাতন কসবা কাঁঠালতলায়। সেখানে নিয়ে ইমরানকে বেদম প্রহার করা হয়। পরে তাকে আবারো শহীদ মিনার এলাকায় রেখে যায় তারা। এ খবর পেয়ে পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা শহীদ মিনার ও কাঁঠালতলায় ছুটে যান। এ ঘটনায় মাহমুদ হাসান বিপুসহ চারজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ হেফাজতে থাকা নেতাকর্মীরা হলেন- যশোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপু (৪৫), সদর উপজেলার কিসমত নওয়াপাড়া এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে ইসলামুল হক (২৫), শহরের কাজীপাড়া কাঁঠালতলা এলাকার মনিরুজ্জামানের ছেলে মো. মশিউর রহমান পিটু (৬৩), শহরের চুড়িপট্টি এলাকার মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে শাহিনুজ্জামান (৪৮), ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কামলাহাটি গ্রামের আমজেদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, পুলিশ সদস্যকে মারধর করে তারা আইন ভঙ্গ করেছে। যারা ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ হাসান বিপুকে বন্ড নিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে।
তবে দুপুর একটা পর্যন্ত আটক চারজন পুলিশ লাইনসে ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে তখনো কোনো ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়নি।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আটকের প্রতিবাদে সকাল ৯টা থেকে কেশবপুরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনের নেতৃত্বে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী কর্তৃক পুলিশ সদস্যকে মারধরের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের অধিনেই মূলত থানা ও এর পুলিশ সদস্যরা থাকেন। নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের কথার হেরফের হলেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশদের দমিয়ে রাখার নানা কৌশল ফাঁদা সহ নির্যাতন করেন। এক্ষেত্রে থানার পুলিশেরা অনেকটাই অসহায় এবং বশ্যতা স্বীকার করে থাকেন বলে তারা মত প্রকাশ করেন। তারা মনে করেন, সরকার ক্ষমতায় থাকলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা অঘোষিত নিজেদের সরকার চালান। সেখানে পুলিশ থেকে সাংবাদিকসহ কেউ উঁচু গলায় আওয়াজ তুললেই নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়। এছাড়া থানা পুলিশের কর্তৃত্ব নিজেদের হাতে রাখেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এক্ষেত্রে পুলিশের দায়কেও তুলে ধরেন তারা। তারা মনে করেন, স্থানীয় থানার পুলিশ সদস্যরা স্থানীয় নেতাকর্মীদের ছায়াতলে থেকে নিজেদের স্বার্থরক্ষা করে থাকেন। থানার সাথে স্থানীয় নেতাকর্মীদের এক গোপন চুক্তি থাকে বলে অভিযোগ তোলেন সংশ্লিষ্টরা। সেখানে নেতাকর্মীদের নির্দেশ কিংবা কথার বাইরে গেলেই গুনতে হয় খেসারত। এবিষয়ে সরকারের সুষ্ঠু সমাধানসহ দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন তারা।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৩৭
আপনার মতামত জানানঃ