জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর ধরপাকড় নিয়ে রিপোর্ট করেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা। নিজেদের ইউটিউব একাউন্টে এ নিয়ে একটি দুই মিনিটের ভিডিও আপলোড করেছে গণমাধ্যমটি। এতে বলা হয়েছে, পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন ও নিখোঁজ কিংবা মৃত অবস্থায় পাওয়ার গল্প বাংলাদেশে ক্রমশ সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে।
ভিডিওতে সালমা ইসলাম নামে এমনই এক নারীর কথা তুলে ধরে হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রায় এক দশক পেরিয়ে গেলেও স্বামীর লাশ দেখার মুহূর্ত বর্ণনা করতে গিয়ে এখনো ভেঙে পড়েন সালমা ইসলাম। তিনি বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য ছিলেন। সালমা ইসলাম বলেন, আমার স্বামীকে সাদা পোশাকের পুলিশ গ্রেপ্তার করার মাত্র তিন দিন পরই আমাদের গ্রামের বাড়ির কাছে তার লাশ পাই। তার শরীরে একাধিক গুলি এবং নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। এখনও পরিবারটি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ঘন ঘন হয়রানি ও হুমকির সম্মুখীন হয়।
সালমা ইসলাম প্রশ্ন করেন, আমরা কি এই দেশের নাগরিক নই? এই মাসের শুরুতে, আমার ভাইকে সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা তুলে নিয়ে যায়। এরপর ছয় দিন নিখোঁজ থাকার পর তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল।
সে কোনোমতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল। এরপর তাকে জেলে পাঠানো হয়। আমার আরেক ভাই পলাতক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কারাগারে এখন আর কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। গত দুই সপ্তাহে দেশজুড়ে হাজার হাজার বিরোধী সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়াদের অনেকে এমনকি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও যুক্ত নন। প্রধান বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশ দ্বারা ঘেরাও করে রাখা হয়েছে।
আল-জাজিরার রিপোর্টে বলা হয়, অবরোধের কারণে শহরজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং যানজটও উল্লেখযোগ্যভাবে কম দেখা যাচ্ছে। গত সপ্তাহে বিরোধী দলগুলোর সাধারণ ধর্মঘট ও অবরোধের ডাকে অন্তত কয়েক ডজন গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে ও ভাংচুর চালানো হয়েছে।
সরকার এই ভাঙচুরের জন্য বিরোধী দলকে দোষারোপ করেছে। যারা ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। যদিও অনেক নিরপরাধ মানুষকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা। সমালোচকরা বলছেন, জানুয়ারিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে প্রয়োজনীয় পরিবেশ নিশ্চিত করার যে প্রতিশ্রুতি সরকার দিয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবতার মিল পাওয়া যাচ্ছে না।
পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দ্রুততার সঙ্গে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতায় আনতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে জাতিসংঘের ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউকে (ইউপিআর) ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। শনিবার নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক এ সংগঠনের ডেপুটি আঞ্চলিক পরিচালক লিভিয়া সাক্কারদি বলেছেন, বাংলাদেশের চতুর্থ ইউপিআর এমন এক সময়ে হতে যাচ্ছে যখন মানবাধিকার এবং গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনাকারী প্রতিষ্ঠান, বিরোধী দলীয় নেতা, নিরপেক্ষ মিডিয়া হাউস এবং নাগরিক সমাজ সিস্টেমেটিকভাবে আক্রমণ মোকাবিলা করছে। এই মূল্যায়ন বাংলাদেশের মানবাধিকার রেকর্ড যাচাই এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা ও প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের জন্য কর্তৃপক্ষকে যাচাই করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
এদিকে, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের মিছিলের সামনে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে এক ব্যক্তিকে দেখা গেছে। জামায়াত ও বিএনপির আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো রোববার বেলা ১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা সদরে এসে কর্মসূচিতে অংশ নেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নৈরাজ্য ও আগুন সন্ত্রাসের প্রতিবাদে নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ এ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ ছাড়া ৩১শে অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালামকে নিয়ে ‘নেতিবাচক’ সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ জানানো হয়। মিছিলে অংশ নেয়া কিছু কর্মীর হাতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা গেছে। উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আগত হাজারো দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা প্রথমে নান্দাইল সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজ মাঠে জড়ো হন।
পরে বেলা ১টার দিকে কলেজ থেকে মিছিল করে নান্দাইল পুরান বাজার বাসস্ট্যান্ড সড়কে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেন। আওয়ামী লীগের নারী কর্মীদের মিছিলের নেতৃত্ব দেন মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালামের মেয়ে ওয়াহিদা হোসেন রূপা। এ সময় তার পাশে জিন্সের প্যান্ট ও কেডস পরা এক ব্যক্তিকে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে দেখা গেছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, অস্ত্রধারী ওই ব্যক্তি দেহরক্ষী। তার নাম মো. কামরুজ্জামান।
আপনার মতামত জানানঃ