পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি অনিয়ম আর ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে মাদক সেবন থেকে শুরু করে মাদকপাচারে সংশ্লিষ্টতা। এসব ছাড়াও পুলিশের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অবৈধ অস্ত্র বিক্রি সহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। এজন্য নিজেদের ঘরকে শুদ্ধ করার মধ্য দিয়ে শুদ্ধি অভিযান চালাতে চান বলে ঘোষণা দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) আয়োজিত বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, আগামীতে দেশের অর্থনীতিসহ সব দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের এ অগ্রযাত্রায় আমাদের সব ক্ষেত্রেই শুদ্ধতা দরকার। তাই আমরা নিজেদের ঘরের ভেতর থেকেই শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে চাই। আমরা চেষ্টা করছি আগে নিজেদের ঘরকে শুদ্ধ করতে দুর্নীতি মুক্ত করতে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা যদি পুলিশের বাইরে গিয়ে দায়িত্বের ঊর্ধ্বে থেকে কোনো অপকর্ম করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আমাদের মনোভাব অত্যন্ত কঠোর। বাংলাদেশ পুলিশের লক্ষ্য হচ্ছে অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা ব্যত্যয়ে শূন্য সহিষ্ণুতা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাদক প্রসঙ্গে আইজিপি ড. বেনজীর বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা কঠোরভাবে কাজ করছি। পুলিশের মধ্যে যদি কোন মাদকসেবী থাকে তাহলে তাকে বাহিনী থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। আমরা পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট করছি। এর মধ্যে পুলিশের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। আমরা আমাদের ঘর পরিচ্ছন্ন করতে চাই। এছাড়াও কেউ মাদক সেবন কারেন না কিন্তু মাদকের সঙ্গে জড়িত। এমন পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদেরও চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রেও আমরা শূন্য সহিষ্ণুতা বাস্তবায়ন করতে চাই।
পুলিশের দুর্নীতির বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে আইজিপি ড. বেনজীর বলেন, শুরুতে মোটিভেশনাল অ্যাক্টিভিটিস এবং ডিসিপ্লিন নিয়ে কাজ করছি। আর দ্বিতীয় হচ্ছে পুলিশ ‘ব্রুটালিটি’ বা নিষ্ঠুরতা আমরা চাই না। আমরা চাই না পত্রপত্রিকায় ও পুলিশ ব্রুটালিটি নিয়ে খবর ছাপা হোক। আমরা খবর হতে চাই না।
তিনি বলেন, পুলিশের কাছে অসংখ্য আইনগত ক্ষমতা রয়েছে। যেখানে আইনগত ক্ষমতা রয়েছে তাহলে কেন পেশী শক্তি ব্যবহার করতে হবে। মাথা ও বিবেকের শক্তি, আইনের শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। কেন পেশী শক্তি…….? রাষ্ট্র অসংখ্য আইনের ক্ষমতা দিয়ে রেখেছে সুতরাং পেশী শক্তি প্রয়োগের দরকার নেই। শারীরিক ক্ষমতা সেই প্রয়োগ করে, যার মানসিক ক্ষমতা নেই, আইনগত ক্ষমতা নেই এবং বুদ্ধির ক্ষমতা নেই। পুলিশ এ থেকে বেরিয়ে আসতে চায় এবং তা নিয়ে কাজ করছে বলে জানান আইজিপি।
আইজিপির যতটা সময় নিয়ে এই বক্তব্য দিলেন ততক্ষণে দেশের কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো অপরাধকর্মে পুলিশের জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। অপকর্ম থেকে নিজেদের বিরত রাখাটাই পুলিশের এক বড় চ্যালেঞ্জ দাঁড়িয়ে গেছে। পুলিশের আইজিপি তথা ঊর্ধবতন কর্মকর্তারা রাজনীটিবিদদের মতো কেবল ভাষণ দিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করেন আইন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এমনকি মাঠেও পুলিশের আচরণ অনেকটাই রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মতো। কোথাও তো রাজনৈতিক কর্মীদেরও ছাড়িয়ে যান। পুলিশ যেখানে রাষ্ট্র থেকে অপরাধ রোধ এবং প্রতিকারে কাজ করবেন, সেখানে পুলিশকে নামতে হচ্ছে পুলিশেরই বিরুদ্ধে, এরচে বড় হাস্যকর ঘটনা হতে পারে বলে মনে করেন না সংশ্লিষ্টরা। সন্ত্রাসীদের সাথে পাল্লা দিয়ে পুলিশ অপরাধ করছে, জড়িয়ে পড়ছে দুর্নীতি অনিয়ম ক্ষমতার অপব্যবহার সহ মাদক চালান ও সেবন, অবৈধ অস্ত্র বিক্রয়, ধর্ষণের মতো ভয়াবহ সন্ত্রাসী অপকর্ম। এমনকি হিসেব করলে দেশে সন্ত্রাসীদের সংখ্যা পুলিশ-সন্ত্রাসীদের চেয়ে কম হবে বলে মনে করেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া পুলিশের ভাবমূর্তি পুলিশ ফিরিয়ে আনতে চাইছে এবিষয়ে সাধুবাদ জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন আদৌ এই অভিযান সফল হবে কিনা। পুলিশের ঘরের ভেতরে অপরাধের যে পাহাড় জমে আছে সেসব পরিষ্কার করে রাষ্ট্রের কোনো শুদ্ধি অভিযানে পুলিশ আদৌ সময় পাবে কিনা এবিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞমহল।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫১৫
আপনার মতামত জানানঃ