আজ, মঙ্গলবারই মৃত্যুদণ্ডসংক্রান্ত বার্ষিক হিসেব প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা জানিয়েছে, গত বছর সারা বিশ্বে ৮৮৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এটিই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সর্বোচ্চ সংখ্যা। প্রতিবেদনে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশে মাদকের ঘটনায়ও এখন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে।
পাশাপাশি তারা এ-ও বলছে, ওই হিসেবটিতে তারা চিনে কার্যকর হওয়া মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা উল্লেখ করতে পারেনি। এই মৃত্যুদণ্ডিতের হিসেব বিশ্বের ২০টি দেশের। বিশ্বের ছ’টি দেশ তাদের সংবিধান থেকে মৃত্যুদণ্ড পুরোপুরি বা আংশিক তুলে দিয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বে অন্তত ৮৮৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ইরান ও সৌদি আরবে রাজনৈতিক বন্দিসহ অনেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফল্কার টুর্ক জানান, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ইরানে অন্তত ২০৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ২০২২ সালে সংখ্যাটি অন্তত ৫৭৬ ছিল বলে অ্যামনেস্টি জানিয়েছে। এই সংখ্যা ২০২১ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
রাজনৈতিক স্পনসরশিপ
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ইরানে ২২ বছর বয়সী কারাতে চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ মেহদি কারামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ওই দিন জার্মানির সবুজ দলের রাজনীতিবিদ হেলগে লিমবুর্গের জন্য ‘একটি দুঃখ ও ক্রোধের দিন’। কারণ তিনি কারামির ‘স্পনসর’ ছিলেন। তিনি কারামিকে ব্যক্তিগতভাবে না চিনলেও তার কাছের মানুষের সঙ্গে মাঝেমধ্যে যোগাযোগ করতেন। এটি একধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।
লিমবুর্গের মতো জার্মানি ও অন্যান্য দেশের অনেক রাজনীতিবিদ ইরান ও অন্যান্য দেশের বন্দিদের স্পনসর হয়েছেন। এভাবে বন্দিদের বিষয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করা হয় বলে জানান রেনাটা আল্ট। এমনটি না করলে আরও অনেক বন্দিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
আরও তথ্য
২০২২ সালে সৌদি আরবে ১৯৬ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এর মধ্যে এক দিনে ৮১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনাও রয়েছে। ২০২১ সালে সংখ্যাটি ছিল ৬৫। ২০২২ সালে বিশ্বে মোট মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ৮০ শতাংশের বেশি হয়েছে ইরান ও সৌদি আরবে।
গত বছর মোট ২০টি দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মাথা বিচ্ছিন্ন করে, ঝুলিয়ে, গুলি করে কিংবা সরকার অনুমোদিত কেন্দ্রে বিষ দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া প্রতি তিনজনের একজনকে মাদক পাচারের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কাছে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, বিভিন্ন দেশে মাদকের কারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। তাদের তথ্য বলছে, গত বছরের মোট মৃত্যুদণ্ডের প্রায় ৪০ শতাংশই ছিল মাদকসংক্রান্ত! এর মধ্যে ইরানে ২৫৫ জন, সৌদি আরবে ৫৭ জন, সিঙ্গাপুরে ১১ জনকে মাদকসংক্রান্ত ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। চিনে ও ভিয়েতনামেও মাদকের কারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
চীনের তথ্য নেই
অ্যামনেস্টির হিসাবে চীন, ভিয়েতনাম ও উত্তর কোরিয়ার তথ্য নেই। চীনে প্রতিবছর কয়েক হাজার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে ধারণা করা হয়। তবে চীন এসব দণ্ডকে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য হিসেবে দেখে। ভিয়েতনাম ও উত্তর কোরিয়ায়ও অনেক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে মনে করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল
২০২২ সালে আরও ছয়টি দেশ মৃত্যুদণ্ডের বিধান সম্পূর্ণ বা আংশিক বাতিল করেছে। এর মধ্যে আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওন ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক মৃত্যুদণ্ডের বিধান সম্পূর্ণ বাতিল করেছে। ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত ১১২টি দেশ মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল করেছে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
বাংলাদেশে ২০২২ সালে চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ১৬৯ জনের বেশি আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ছিল ২ হাজারের বেশি।
এসডব্লিউএসএস/২০৫০
আপনার মতামত জানানঃ