বিশ্বে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে শীর্ষস্থানে ইরান। ইরান ২০১৭ সাল থেকে রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি দেশটি ছোটখাটো শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রেও নৃশংস।
চুরির দায়ে ইরানে আট জনের আঙুল কেটে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এই ঘটনায় আপত্তি তুলেছেন মানবাধিকার সংস্থার কর্মীরা।
বিশ্বের কাছে তারা আহ্বান জানিয়েছেন, এই শাস্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে।
ইরানের আইনে আঙুল কেটে নেওয়ার শাস্তি দেওয়া অবশ্য নতুন নয়। যদিও ১৯৭৯ সালের পরে এ আইন কিছুটা সংশোধন করা হয়। তারপর থেকে আঙুল কেটে নেওয়ার শাস্তি দেওয়া প্রায় বন্ধই ছিল। তবে একেবারে বন্ধ হয়নি।
পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ৩৫৬টি অপরাধে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ইরানের আইন অনুযায়ী, ডান হাতের চারটি আঙুল কেটে নেওয়া হবে তাদের। ইরানের মানবাধিকার সংস্থা আবুদ্দরহমান বরোমান্দ সেন্টারের তরফে বলা হয়েছে, এমন নিষ্ঠুর সাজা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টির তরফে বিশ্বের সব দেশের কাছে আবেদন করা হয়েছে, কূটনৈতিকভাবে পদক্ষেপ করে এ শাস্তি বন্ধ করা দরকার।
সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্যের দায়িত্বে থাকা ডায়ানা ইলথাবি বলেছেন, ইরানের ফৌজদারি আইনে আঙুল কেটে নেওয়ার মতো অত্যাচারকে বৈধতা দেওয়া হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনে এটাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। এভাবে শাস্তি দেওয়াকে ন্যায়বিচার বলে মেনে নেওয়া যায় না। ইরান সরকারের উচিত অবিলম্বে আঙুল কেটে নেওয়ার নির্দেশ প্রত্যাহার করা। আবার বিচার করে অপরাধীদের অন্য কোনো শাস্তি দেওয়া।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টির তরফে বিশ্বের সব দেশের কাছে আবেদন করা হয়েছে, কূটনৈতিকভাবে পদক্ষেপ করে এ শাস্তি বন্ধ করা দরকার।
ফরাসি বিপ্লবের সময়ে ব্যবহার হত গিলোটিন। যার সাহায্যে খুব তাড়াতাড়ি মানুষের মাথা কেটে দেওয়া হতো। ওই ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করেই আঙুল কাটা হয় ইরানে। এই যন্ত্র কার্যকর হলেই আঙুল কেটে নেওয়ার কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ দাবি করে ডায়ানা বলেন, এই শাস্তি আটকাতে গোটা বিশ্বের সাহায্য প্রয়োজন। ইরানের কর্তৃপক্ষকেও অমানবিক শাস্তি নিষিদ্ধ করতে হবে। ইরান সরকারের এই বর্বরতা মেনে নেওয়া যায় না।
এর আগে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চুরির দায়ে ৩৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তির অঙ্গচ্ছেদ করা হয়। এমন শাস্তির বিধান সৌদি আরব, নাইজেরিয়া ও সোমালিয়াতে বিদ্যমান রয়েছে। তবে এগুলোকে অমানবিক উল্লেখ করে বাতিলের দাবিতে সোচ্চার রয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এটি নির্যাতনের ঘৃণ্য রূপ। পূর্বপরিকল্পিত অঙ্গহানি ও পঙ্গু করে দেওয়া কখনও ন্যায়বিচার হতে পারে না। মানব মর্যাদার প্রতি এটা বিভৎস আঘাত। ইরানের দণ্ডবিধি সংস্কারের মাধ্যমে এমন জঘন্য বিচার চর্চার অবসানের সময় অনেক আগেই হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বেড়ে যাওয়ার শীর্ষে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। সেখানে ২০২১ সালে ৩১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, এর আগে ২০২০ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় ২৪৬ জনের, অর্থাৎ ২৮ শতাংশ বেড়েছে। দেশটিতে মাদক সংক্রান্ত মামলায় দোষী সাব্যস্ত ১৩২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় যা মোট মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ৪২ শতাংশ এবং ২০২০ সাল থেকে পাঁচগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সম্প্রতি একদিনে এক মহিলা-সহ ১২ জন বেলুচকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে ইরানে। দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের জেল-বন্দি ওই ১২ কয়েদিকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
যদিও এই বিষয়ে এখনও অবধি সরকারি বিবৃতি দেয়নি ইরান। ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছে একটি মানবাধিকার সংগঠন।
ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের বাড়ন্ত সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটল।
নরওয়ে-ভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) বলেছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ১২ জনের মধ্যে ১১ জন পুরুষ এবং একজন নারী। তারা মাদক সংক্রান্ত এবং হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। সোমবার সকালে সিসস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী শহর জাহেদানের প্রধান কারাগারে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এই প্রদেশটি আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪২৪
আপনার মতামত জানানঃ