আফগানিস্তানে অনেক দিন ধরেই সরকার ও তালেবানের মধ্যে শান্তি আলোচনা চলছে। এরপরও সাম্প্রতিক মাসগুলোয় দেশটিতে সহিংসতা বেড়েই চলেছে। সরকারের সঙ্গে তালেবানের শান্তি আলোচনার মধ্যেই আফগানিস্তানে গত কয়েকমাস ধরে সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা এবং অধিকারকর্মীদের বেছে বেছে হত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। এবার সেই তালিকায় যোগ হলো নতুন আরেকজন সাংবাদিক। গত শুক্রবার(০১ জানুয়ারি) আফগানিস্তানের ঘোর প্রদেশে বিসমিল্লাহ আদেল আইমাক নামে এক সংবাদিককে গুলি করে হত্যা করে নতুন বছর শুরু করেছে।
জানা যায়, বিসমিল্লাহ আদেল আইমাক ২০১৫ সাল থেকে সাদা-ই-ঘোর রেডিওতে কাজ শুরু করেন এবং পরে তিনি প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। একই সঙ্গে তার প্রদেশে তিনি মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছিলেন। গত শুক্রবারে কাছেই গ্রামের বাড়ি থেকে তিনি শহরে ফিরছিলেন। এ সময় প্রাদেশিক রাজধানী ঘোর-এর ফিরোজ কোহ সড়কের কাছে তার গাড়িতে গুলি চালায় অস্ত্রধারীরা। এতে স্পটেই প্রাণ ত্যাগ করেন বিসমিল্লাহ। এখন পর্যন্ত কেউ এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেনি।
কয়েক মাস আগেও বিসমিল্লাহ আদেল আইমাককে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছিল। তিনি আফগানিস্তানের সংবাদ জগতে পরিচিত মুখ। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি মানবাধিকারকর্মী হিসেবে কাজ করছেন।
আদেল আইমাক হত্যার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, আফগান সরকার স্বাধীন মতপ্রকাশে বিশ্বাস করে। এ ব্যাপারে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তবে তালিবান ও অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠী সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করতে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।
এ নিয়ে দেশটিতে গত দুই মাসে কমপক্ষে ৫ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হলো। গত দু’মাসে যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তারা হলেন গজনি জার্নালিস্ট ইউনিয়নের প্রধান রহমতুল্লাহ নেকজাদ। তাকে গত মাসে শহরের পূর্বাঞ্চলে বাড়ির কাছে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর কয়েকদিন আগে এনিকাস টিভি এবং রেডিও একজন সাংবাদিক মালালা মাইওয়ান্ডকে কাজে যাওয়ার পথে তার গাড়িতে গুলি করে হত্যা করে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা। নভেম্বরে সুপরিচিত টেলিভিশন উপস্থাপক ইয়ামা সাইওয়াশকে হত্যা করা হয়েছে। কাবুলে তার বাড়ির কাছে তার গাড়িতে বেঁধে রাখা বোমা বিস্ফোরিত হয়ে তিনি ও অন্য দু’জন নিহত হয়েছেন। রেডিও লিবার্টির রিপোর্টার আলিয়াস ডাইয়িকে নভেম্বরে লস্করগাঁতে গাড়িতে পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে হত্যা করা হয়েছে। আফগানিস্তানের প্রথম নারী চলচ্চিত্র পরিচালক সাবা সাহার’কে কাবুলে গুলি করা হয়েছে। তবে তিনি এতে বেঁচে গেছেন।
আন্তর্জাতিক মানবধিকারকর্মীরা বলেন, তালেবান শাসিত আফগানিস্তান এখন হত্যা খুনের অভয়ারণ্য তৈরী হয়েছে। দেশটিতে সাংবাদিক, মানবধিকারকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও নিরাপদ নয়। যে কোনো ছাল-ছুতোয় খুন করার সুযোগ খোঁজে। তারা মনে করেন, দেশটিতে যেমন নেই কথা বলার স্বাধীনতা, তেমনি বেঁচে থাকার স্বাধীনতাও ক্ষীণ হয়ে আসছে।
দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধ বন্ধে বিদ্রোহী ও আফগান সরকারের মধ্যে আলোচনা আগামী সপ্তাহে পুনরায় শুরু হওয়ার কথা রয়েছে, এমন অবস্থার মধ্যেই আফগানস্থানজুড়ে প্রতিদিনই হামলার ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিনই মরছে দেশটির বেসামরিক মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে শান্তি আলোচনায় আশার আলো দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে আলেচনায় আফগান সরকার এবং দেশটির সরকারের মধ্যে বেশকিছু চুক্তির অগ্রগতি হয়েছে। আফগানিস্তানের মাটিকে সন্ত্রাসের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করবে না এমন শর্ত ছিল তালেবানদের জন্য। বিনিময়ে, দেশটিতে থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার শর্তেই চুক্তিতে রাজি হয় তালেবান গোষ্ঠী। কিন্তু এখন পর্যন্ত আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি হোয়াইট হাউস। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে, বেশির ভাগ সেনা দ্রুত তুলে নেওয়া হবে। এমন সিদ্ধান্তে ঘোর আপত্তি জানিয়ে আসছে ন্যাটো।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৪৩
আপনার মতামত জানানঃ