নিকট অতীতে বিলুপ্তি ঘটেছে নিয়ানডার্থালদের, প্রায় ২৮,০০০ বছর পূর্বে। নিয়ানডার্থালদের অনেক ফসিল পাওয়া যাওয়ায় তাদের সম্পর্কে আমরা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি জানি। দ্বিতীয়ত, দেহ-সৌষ্ঠ্যবের দিক দিয়ে একটু প্রাচীন তথা আর্কায়িক হলেও বুদ্ধিমত্তা, সমাজ-কাঠামো, আবেগ অনুভূতির দিক দিয়ে তারা আমাদের মতই ছিল। কোন কোন দিক দিয়ে হয়ত তারা আমাদের চেয়েও এগিয়ে ছিল। উল্লেখ্য, তাদের কারো কারো মস্তিষ্কের আয়তন ছিল আমাদের চেয়ে বেশি।
ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ২ লক্ষ বছর যাবৎ নিয়ানডার্থালরা রাজত্ব করেছে। আনুমানিক ১ লক্ষ বছর পূর্বে আদিম-আধুনিক মানুষেরা আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে পড়ে। ৪০ থেকে ৫০ হাজার বছর পূর্বে তাদের সাথে দেখা হয় নিয়ানডার্থালদের। ভাবতেই অবাক লাগে পৃথিবীর বুকেই আমাদের মত বুদ্ধিমান আরেকটি প্রজাতির সাথে আমরা একসাথে প্রায় ৩০,০০০ বছর পার করেছিলাম। আর নিয়ানডার্থাল প্রজাতির সার্বিক বিলুপ্তিতে আমাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা থাকাটা মোটেও অসম্ভব নয়।
প্রাণী জগতের নানা প্রজাতির মতো মানুষেরও রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতি। বিবর্তনের কারণে অন্য সব প্রজাতিকে হটিয়ে আধুনিক মানুষ হিসেবে বর্তমানে আমরা অর্থাৎ হোমো সেপিয়েন্সরাই প্রতিষ্ঠিত। মানুষেরই এক নিকটতম প্রজাতি নিয়ান্ডারথাল মানব।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন—মানুষের জন্মের সময় তার মস্তিষ্ক গঠনের স্টেম সেলগুলো বিভাজিত হওয়ার সময় তুলনামূলক বেশি সময় নেয় এবং বিভাজনের ফলে সৃষ্ট নতুন কোষে ক্রোমোজোম বণ্টনের সময় কম ভুল করে।
বিজ্ঞানবিষয়ক সংবাদমাধ্যম সায়েন্স ডেইলির এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব মলিকুলার সেল বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স এবং ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভোল্যুশনারি অ্যানথ্রোপলজির গবেষকেরা ইঁদুরের ওপর পরিচালিত এক গবেষণার ভিত্তিতে এই তথ্য জানিয়েছেন।
গবেষকেরা দেখেছেন যে, মানুষের মস্তিষ্ক অর্থাৎ নিউরন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় স্টেম সেলগুলো বিভাজনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে বেশি সময় নেয়। একই সঙ্গে ক্রোমোজম বণ্টনের ক্ষেত্রেও নিয়ান্ডারথালদের তুলনায় কম ভুল করে। এমনকি শিম্পাঞ্জিদের তুলনায়ও মানুষের ব্রেইনের স্টেম সেলগুলো কম ভুল করে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই গবেষণা থেকে কীভাবে মানুষের মস্তিষ্ক কাজ করে এবং কীভাবে তা বিকশিত হয়েছে তা বোঝা যাবে।
সায়েন্স ডেইলির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই গবেষণা থেকে মানুষ ও নিয়ান্ডারথালদের মস্তিষ্ক কোষের বিকাশের পার্থক্যও বোঝা যাবে। নিয়ান্ডারথালদের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার সময় মানুষের প্রায় ১০০টি অ্যামিনো অ্যাসিডের পরিবর্তন হয় এবং তা ধীরে ধীরে সব আধুনিক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে এই পরিবর্তনের বিষয়টি বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করেছিল। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীর ৬টি অ্যামিনো অ্যাসিডের পরিবর্তনের কারণ খুঁজে পেয়েছেন। যা তিন ধরনের প্রোটিন কোষ গঠনের অন্যতম উপাদান। যা আমাদের দেহে কোষ বিভাজনের সময় ক্রোমোজোম বিতরণে ভূমিকা পালন করে।
এই ৬টি অ্যামিনো অ্যাসিড ইঁদুর এবং নিয়ান্ডারথাল উভয়ে ক্ষেত্রে একই রকমের। ফলে এই ইঁদুরগুলো বিজ্ঞানীদের মানব মস্তিষ্কের বিকাশ অধ্যয়নের জন্য একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করে।
গবেষক দলের প্রধান ফেলিপ মোরা-বারমুডেজ বলেন, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি যে দুটি প্রোটিনের মধ্যে তিনটি আধুনিক মানুষের অ্যামিনো অ্যাসিড মতোই যা মস্তিষ্কের স্টেম সেল বিভাজনের ক্ষেত্রে মেটাফেজ ধাপটিকে দীর্ঘায়িত করে। ফ
লে ক্রোমোজোমগুলোও কোষ বিভাজনের জন্য প্রস্তুত হতে দীর্ঘ সময় পায় এবং এর ফলে বিভাজনের সময় কম ত্রুটি ঘটে যখন।’
নিয়ান্ডারথাল ও আধুনিক মানুষ উভয়েই একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে। জেনেটিক গবেষণাও প্রমাণ করে, আমাদের ডিএনএর কিছু অংশ পূর্বপুরুষদের থেকে নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে ভাগ করে পেয়েছে আধুনিক মানুষেরা।
গবেষকেরা বলছেন, আধুনিক মানুষেরা তাদের আবাস দখল করায় নিয়ান্ডারথালরা ৪০ হাজার বছর আগে বাস্তুচ্যুত হয়। একটি বড় সংখ্যক নিয়ান্ডারথালের খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতার সংকোচনও তাদের জায়গায় আধুনিক মানুষ দ্রুত প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
এসডব্লিউএসএস/১২০৫
আপনার মতামত জানানঃ