প্রতিবছরই বরফে মুড়ে যায়নায়াগ্রা ফলস। কানাডার হাড়হিম করা ঠান্ডায় বরফ হয়ে যায় নায়াগ্রা ফলসের পানি। নায়াগ্রা ফলসে বেড়াতে গিয়ে চোখধাঁধানো এমন সব ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে বহু মানুষ। তবে পুরোপুরি ভাবে এই জলপ্রপাত জমে বরফ হয়ে গিয়েছিল ১৮৪৮ সালে।
ছবিটা ১৮৮৩ সালের। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। তবে প্রতি বছরই জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ নায়াগ্রা ফলসের খুব সামান্য কিছু অংশ বরফাবৃত হয়।
পৃথিবীতে এমন অনেক কিছু আছে, যা দেখে আমাদের মনে বিস্ময় জাগে। নায়াগ্রা জলপ্রপাত এদের মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত এটি। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নায়াগ্রা জলপ্রপাত প্রকৃতির এক মহাবিস্ময়।
অনুমান করা হয়, আজ থেকে প্রায় দশ হাজার নয়শ বছর আগে এই জলপ্রপাতকে প্রথম চিহ্নিত করা হয়েছিল। দেশীয় আমেরিকাবাসীরা সম্ভবত এই জলপ্রপাত দর্শনকারী প্রথম মানুষ ছিলেন। যদিও এই জলপ্রপাতটির সম্পর্কে লিখিত আকারে উল্লেখিত প্রথম ইউরোপীয় ব্যাক্তিটি ছিলেন ‘ফাদার ল্যুইস হেনেপিন’। এই ফরাসি যাজক তাঁর “আ নিউ ডিসকভারি” নামক পুস্তকে এটির বর্ণনা করেছিলেন।
নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উৎপত্তির ইতিহাসটা বেশ মজার। নায়াগ্রা নদীটি প্রায় ১২০০ বছরের পুরনো। এরও আগে ১৮০০ বছর পূর্বে ওন্টারিওর দক্ষিণে প্রায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার বরফে ঢাকা ছিল। সময়ের সাথে সাথে আর নিয়মিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় পরিবর্তনের ফলে গলতে শুরু করে বরফ। আর গ্রেট লেকস বেসিনে প্রচুর পানি জমতে থাকে এবং লেক ইরি, নায়াগ্রা নদী আর লেক ওন্টারিও থেকে আসা পানি মিলে এই বিশাল জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়।
উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে শক্তিশালী জলপ্রপাত এটি। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের তিন ভাগের এক ভাগ আমেরিকায়। এর নাম ‘আমেরিকান ফলস’। বাকি দুই ভাগ কানাডায়। যার নাম ‘কানাডিয়ান ফলস’। এটার আকার অনেকটা ঘোড়ার খুরের মতো বাঁকা। জলপ্রপাতটি মূলত তিনটি জলপ্রপাতের সমষ্টি। সবচেয়ে বড় জলপ্রপাতটির নাম হলো হর্সশু ফলস বা কানাডা ফলস। এটি প্রায় ১৬৭ ফুট উঁচু থেকে ২৬০০ ফুট চওড়া পানির স্রোত নিয়ে নিচে আছড়ে পড়ে। বলা হয় নায়াগ্রা জলপ্রপাতের প্রায় ৯০ ভাগ পানি এই ফলস দিয়েই পতিত হয়। এর পরের ফলসটির নাম আমেরিকান ফলস। এটি প্রায় ৭০ ফুট উঁচু এবং ১৬০০ ফুট চওড়া। অন্যটির নাম ব্রাইডল ভেইল ফলস।
জলপ্রপাতের দিকে তাকালে একদিকে যেমন ভয়ে আপনার বুক কেঁপে উঠে তেমনি কিছুতেই এর মোহময় আকর্ষণকে আপনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। এই আকর্ষণই অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষকে টেনে আনে নায়াগ্রাকে ছুঁয়ে দেখার কিংবা তার উপর হেঁটে যাওয়ার এক অদম্য বাসনাকে। ১৮২৯ সালের অক্টোবরের দিকে ‘স্যামপেচ’ নামের এক দুঃসাহসী অভিযাত্রী ঝাঁপ দিয়েছিলেন নায়াগ্রায়। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ঝাঁপ দেয়ার পরও এই ভদ্রলোক কিন্তু বেঁচে গিয়েছিলেন।
আপনার মতামত জানানঃ