উল্কাপিণ্ডের আঘাতে একসময় বৃহদাকার ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গেলো কিন্তু আজকের দিনে আমরা বড়ো আকারের যেসব পাখি দেখি, সেগুলো টিকে থাকার কারণ কি?
বিজ্ঞানীরা তা নিয়ে গবেষণা করে বলছেন, এর জন্যে পাখিরা ঋণী তাদের ঠোঁটওয়ালা পূর্ব পুরুষদের কাছে। পাখির মতো দেখতে যেসব ডাইনোসর ছিলো, আর ছিলো দন্তহীন ঠোট, সেগুলো উল্কাপিণ্ডের আঘাতের পর, প্রচণ্ড ঠাণ্ডার ভেতরেও, বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়েছিলো।
১০ কিলোমিটার লম্বা এক উল্কাপিণ্ডের আঘাতের কারণে সূর্যের আলো নিভে গিয়ে, আমূল বদলে গিয়েছিলো পৃথিবীর জলবায়ু। ফলে মরে গিয়েছিলো সব গাছপালা। কোনো ফসলও হতো না।
আর তখনই তৃণভোজী ডাইনোসরগুলো খাদ্যের অভাবে এক এক করে মরে যেতে শুরু করলো। প্রাণ হারাতে শুরু করলো মাংসাশী ডাইনোসরও। এর এসবই ঘটেছিলো সাড়ে ছ’কোটিরও বেশি সময় আগে।
কিন্তু মাটিতে তো তখনও বিভিন্ন ফল মূল আর শস্যের বীজ পড়েছিলো। আর এসবের কারণেই পৃথিবী, সেই অন্ধকার সময় কাটিয়ে আবার স্বাভাবিক হয়ে ওঠতে শুরু করার আগ পর্যন্ত, টিকে গিয়েছিলো পাখির মতো দেখতে দন্তহীন এসব ছোট ছোট ডাইনোসর।
টিকে থাকতে ডাইনোসরদের বিবর্তনের নতুন তথ্য সামনে এল। পাওয়া গেল ছোট্ট এক ডাইনোসর। এই পৃথিবীতে তার বাস ছিল প্রায় ৯৯ মিলিয়ন বছর আগে। ছিল লাল রঙের দুটো চোখ আর ছোট্ট ছোট্ট দুটো ডানা। আর শক্ত চঞ্চুর মধ্যে দুই পাটিতে ছিল ৬০টির মতো দাঁত।
খাদ্য বলতে ছিল উভচর প্রাণী, পতঙ্গ এবং ছোট মাছ। এরা ঠিক পাখি নয়। তবে অনেক পুরনো বা প্রাগৈতিহাসিক পাখি বললেও আপত্তি করছেন না বিজ্ঞানীরা।
ডাইনোসর নামের সঙ্গে এই চেহারাটা মেলাতে পারছেন না তো? এটা তো ঠিক জুরাসিক পার্ক সিনেমাটার মতো নয়। অতিকায় যে সরীসৃপ পৃথিবীতে রাজত্ব করত বলে আমরা শুনেছি, তার সঙ্গে মেলে না কিছুতেই। তবে এরকমই একটা ডাইনোসরের মাথার খুলি খুঁজে পেলেন গবেষকরা।
নমুনাটি পাওয়া গিয়েছে মায়ানমার থেকে। প্রায় ৯৯ মিলিয়ন বছরের পুরনো অ্যাম্বারের মধ্যে প্রায় অবিকৃত অবস্থাতেই থেকে গিয়েছিল সমস্ত কোষ। আর এই আবিষ্কার স্বাভাবিকভাবেই অবাক করে দিয়েছে প্রত্নজীববিদ থেকে সাধারণ মানুষ, সবাইকেই।
তুষার যুগের প্রাণান্তকর পরিবেশে অনেক প্রাণীরই আকার ছোটো হয়ে এসেছিল, এমন একটা তত্ত্ব অনেক বিজ্ঞানীই বিশ্বাস করতেন। কিন্তু তার কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছিল না বললেই চলে। তবে এই নব আবিষ্কৃত ডাইনোসরের প্রজাতিটি সেই তত্ত্বকেই প্রমাণ করতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
আকারে এই পাখি-ডাইনোসর একটা হামিংবার্ডের মতো। অর্থাৎ কিনা পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম পাখি। বেজিং-এর প্রত্নতত্ত্ববিদ জিংমাই ও’কন্নরের মতে, তুষার যুগের শীতের হাত থেকে বাঁচতেই ডাইনোসররা নানান জায়গায় আশ্রয় নিতে থাকে।
আর মায়ানমারের উত্তরদিকের এই অঞ্চল তখন দ্বীপপুঞ্জ ছিল বলেই অনুমান। আর এই ভূপ্রকৃতির কারণেই ডাইনোসরের আকার ছোটো হয় এবং সামনের পা দুটো ডানায় রূপান্তরিত হয়ে যায়।
প্রাগৈতিহাসিক যুগের এই পাখিটির আরও বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা জানা গিয়েছে ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ থেকে। এর চোখের গঠন অনেকটা পেঁচার মতো। কৌণিক আকৃতির এই চোখ খুব কম আলোয় সাড়া দেয়। তাছাড়া হাড়ের গঠনের পরিবর্তনও ঘটতে শুরু করে তখন থেকেই।
তবে এমন অভিব্যক্তির পরেও বদলে যাওয়া পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি ডাইনোসররা। আর তারপরেই পৃথিবীতে মানুষ এসেছে। মেসোজয়িক যুগের এমন বাস্তুতন্ত্র তাই মানুষ চোখে দেখেনি কোনোদিন।
তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা আমাদের এমন কত অজানা তথ্যের সন্ধান দিচ্ছে। আর যে ডাইনোসরকে এক অতিকায় সরীসৃপ বলেই চিনে এসেছি, সেই প্রাণীটি যে একসময় অত্যন্ত ছোটো একটি পাখিতে পরিণত হয়ে গিয়েছিল; সে কথা তো আমাদের আশ্চর্য করবেই।
এসডব্লিউএসএস/৯:৪০
আপনার মতামত জানানঃ