সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : স্বাধীনতার ৪৯বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়া নুর ইসলাম নুরুল ওরফে বাঘার শেষ ইচ্ছে মৃত্যুর পুর্বে বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মান নিয়ে দেহ ত্যাগ করা। তিনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরনগর গ্রামের মৃত জবেদ আলী মড়লের সন্তান।
১৯৭১সালের ৭মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষন শোনার পর বড়ছড়া ৫নং সাব সেক্টরে যান। সেখান থেকে তাকে ভারতে ইকওয়ান ট্রেনিং সেন্টারে রাশিয়ান এলএমজি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে বরছড়া ৫নং সাব সেক্টরে ফিরে সেক্টর কমান্ডার সুঞ্জিত সেন গুপ্ত, মীর শওকত, মেজর ডিন (মোসলেম উদ্দিন) এর অধিনে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযুদ্ধা মোজাহিদ উদ্দিন, সাবেক কমান্ডার রফিকুল ইসলাম, রৌজ আলীসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যুদ্ধ করেন। প্রতিটি সম্মুখ যুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার, রাজাকার, আলবদর বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের পরাজিত করা ও যুদ্ধে সাহসিকতা জন্য তার সহযোদ্ধারা তাকে বাঘা উপাধি দিয়েছিলেন।
কিন্তু অনেক দেন-দরবার, আবেদন-নিবেদন করেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে ব্যর্থ হয়ে এখন নিশ্চুপ হয়ে আছেন। সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়কমন্ত্রী আ.ক.ম মোজ্জাম্মেল হক বলেছেন, ১৯৭১সালে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অন্তত একটি প্রমান আর তিনজন মুক্তিযুদ্ধার সাক্ষী পাওয়া গেলে সেই মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তুর্ভুক্ত করা হবে। এ ঘোষনার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অর্ন্তুভুক্ত হওয়ার নতুন স্বপ্ন দেখছেন নুর ইসলাম নুরুল।
তাহিরপুর উপজেলার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযুদ্ধা মোজাহিদ উদ্দিন, সাবেক কমান্ডার রফিকুল ইসলাম, রৌজ আলীসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা জানান, নুর ইসলাম নুরুল আমাদের সহযোদ্ধা, আমরা একসাথে যুদ্ধ করেছি। তাকে সবাই বাঘা নামেই চেনে। তাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়ার দাবী জানাই আমরা।
অতি কষ্টে জীবন সংসার চলে বয়সের ভারে কাবু মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়া নুর ইসলাম নুরুল ওরফে বাঘা নুরুলের। ক্ষোভের সাথে তিনি জানান, “আমার সাথের অন্য সবাই স্বীকৃতি পেলেও বার বার আবেদন করেও বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি আমি পাচ্ছি না। প্রত্যক্ষ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলেও আমি স্বাধীনতার ৪৯বছরেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিহীন মুক্তিযোদ্ধ রয়ে গেছি। মৃত্যুর পুর্বে বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মান নিয়ে আমি মরতে চাই।”
উল্লেখ্য, উপজেলার সাতজন বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যায়ন পত্র, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুত্র নং বা,সু,স/০০০৩৩/০০১২৫/২০১৬, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়া স্বাক্ষরিত স্মারক নং ০৫.৪৬.৯০৯২.০০০.০৬.০৫৫.১৯, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাই কমিটির ০৫-০২-১৭ইং তারিখে স্বাক্ষরিত, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ০৮-০২-১৭, জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ স্বাক্ষরিত (১৪-০৮-১৯ তারিখ) স্মারক নম্বর ০৫.৪৬.৯০০০.১৫.০২.০১০.১৬.৬৯৫ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে পাঠানো হয়। স্থানীয় সৃনামগঞ্জ ১আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ডিও নং- সুনাম-১/ মুবিন/০১৮/০১৪৪/১৯,স্মারক নং সসক/সুনাম-১/০১৮/০০১/১৯,তারিখ,২৬,১১,১৯ইং সুপারিশ সহ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। আবেদনের কপিতে আ.ক.ম মোজ্জাম্মেল হক এমপির অনলাইনে প্রকাশের জন্য স্বাক্ষর করেন ২০-১১-১৯ইং । এছাড়াও প্রয়োজনীয় প্রমানপত্র মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে পাঠানোর পরেও মুক্তিযোদ্ধা নুর ইসলাম নুরুল তার প্রাপ্য স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। অথচ অনেক রাজাকার এবং অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এসডব্লিউ/জেএভি/নসদ/১৭৪৫
আপনার মতামত জানানঃ