ঢাকার মহাখালীতে মধ্যরাতে প্রাইভেট কার আটকে দুই ব্যক্তির কাছ থেকে মালামাল লুটে নেওয়ার চেষ্টায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের একজন আল মোমেন (২৬) র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্য।
এ ঘটনায় তার চাচাতো শ্যালক আরিয়ান আহমেদও (জয়) গ্রেপ্তার হয়েছেন। অপরজন মো. ফরহাদ (২২) তাদের গাড়িচালক।
তাদের কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তল, একটি হ্যান্ডকাপ, বাংলাদেশ পুলিশ লেখা একটি ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট, র্যাব লেখা কালো রঙের জ্যাকেট ও একটি টয়োটা করোলা কার উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিনজনের পাশাপাশি জালাল নামের পলাতক আরেকজনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় দস্যুতার (দণ্ডবিধির ৩৯৩) অভিযোগে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম
গতকাল শনিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আযম মিয়া জানিয়েছেন। ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, মানিকগঞ্জের বাসিন্দা মো. শহীদুল ইসলাম তার এক ভাগনেকে নিয়ে গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে প্রাইভেট কারে করে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে যান।
সেখানে এক বন্ধুকে বিদায় জানিয়ে ফেরার পথে রাত সোয়া দুইটার দিকে মহাখালীর আমতলী এলাকায় ফ্লাইওভারের ওপর একটি প্রাইভেট কার দিয়ে তাদের গাড়ির পথ আটকানো হয়। ওই গাড়ি থেকে তিনজন নেমে তাদের গাড়ির পাশে এসে পিস্তল দেখিয়ে সব মালামাল দিয়ে দিতে বলেন।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, শুক্রবার রাত পৌনে ২টার দিকে বাদী শহিদুল ও তার ভাগ্নে রিয়াজ বিমানবন্দর থেকে একটি ভাড়া গাড়িতে করে মানিকগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন। গাড়িটি মহাখালী ফ্লাইওভারের মাঝামাঝি এলে আরেকটি গাড়ি এসে হঠাৎই তাদের গতিরোধ করে। ওই গাড়ি থেকে তিনজন নেমে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা মালামাল লুটের চেষ্টা করে। এসময় তারা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলে লুটকারীরা পালানোর চেষ্টা করে।
এ ঘটনাকালে আশপাশের লোকজন এসে আরিয়ান আহমেদ জয়কে ধরে ফেলে উল্লেখ করে মামলায় বলা হয়েছে, বাকিরা গাড়িসহ পালিয়ে যান। পরে ৯৯৯ এ কল পেয়ে বনানী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। আটক জয়কে হেফাজতে নিয়ে ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ আরও তিনজনের নাম জানতে পারে। রাতেই অভিযান চালিয়ে পুলিশ আল মোমেন ও ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার আল মোমেন একজন সেনাসদস্য। তিনি প্রেষণে র্যাব-১ এ কর্মরত রয়েছেন।
মধ্যরাতে ওই ঘটনার সময় যমুনা টিভির একটি গাড়ি সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় তার দৃশ্য ধারণ করে।
যমুনার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাত সোয়া ২টার দিকে তাদের গাড়িটি মহাখালী ফ্লাইওভার দিয়ে যাওয়ার সময় সেটিকে থামতে বলেন জড়ো হওয়া লোকজন। সেখানেই দেখা মেলে হ্যান্ডকাফ পরিহিত দুই ব্যক্তির। একজনের নাম শহীদুল ইসলাম, অন্যজনের রিয়াজ। সম্পর্কে তারা মামা-ভাগ্নে।
তাদের অভিযোগ, বিমানবন্দর এলাকা থেকে গাড়ি ভাড়া করে যাচ্ছিলেন তারা। ফ্লাইওভারে উঠতেই তাদের গাড়ির গতিরোধ করে পেছন থেকে আসা আরেকটি গাড়ি। আরোহী চার ব্যক্তি র্যাব পরিচয়ে অস্ত্র দেখিয়ে তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিল তাদের। এক পর্যায়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে করে মারধর। সন্দেহ হওয়ায় চিৎকার শুরু করেন ভুক্তভোগীরা।
ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায় যুক্ত শহীদুল যমুনা টিভিকে বলেন, “ওরা আমাদের গাড়ি থামিয়ে জানালা দিয়ে পিস্তল ধরে। গাড়ি থেকে বের হওয়ার পর বলে- আমরা সোনা চোরাচালানকারী। আমরা বলি, ‘আমাদের চেক করে দেখেন’। তখন আমাদের মারধর শুরু করে। বলে, ‘গুলি করে মেরে ফেলব’। তারপর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয়। এ সময় আমরা চিৎকার শুরু করি।”
তাদের চিৎকার শুনে এক ব্যক্তি গাড়ি থামিয়ে পরিস্থিতি দেখে ৯৯৯ এ কল করেন। তখন সে পথ দিয়ে মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন এক পুলিশ সদস্য, হট্টগোল দেখে তিনি এগিয়ে আসেন ভুক্তভোগীদের সহায়তায়।
সাকিব নামের ওই পুলিশ সদস্য বলেন, “র্যাবের কোটি পরা তিনজন দুই ব্যক্তিকে ধরে মারধর করছিলেন। দুই ব্যক্তি বাঁচানোর আকুতি জানাচ্ছিলেন। পুলিশ দেখে তিনজনের একজন গাড়ির পেছনে পিস্তল রেখে রাস্তা পার হয়ে চলে যান, আরেকজন দৌড়ে পালিয়ে যান।”
একজনকে ধরে ফেলে জনতা। জয় নামে ধরা পড়া ব্যক্তির দাবি, তিনি টঙ্গীতে একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন। মমিন নামের এক র্যাব সদস্যের সাথে মাদক সংক্রান্ত কিছু কাজে করতে গিয়ে তার পরিচয় হয়। পরে মমিন তাকে দিয়ে আরও কিছু কাজ করায়। ঘটনার দিন একটি অপারেশনের কথা বলে মহাখালী ফ্লাইওভারে নিয়ে আসেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই জয়ও তাদের মারধর করেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে উল্লেখ করে যমুনা টেলিভিশনে বলা হয়েছে, পরে বনানী থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসে। তাদের চাবিতে হ্যান্ডকাফ থেকে মুক্তি মেলে ভুক্তভোগীদের।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে র্যাব–১–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, আল মোমেন ২০২১ সাল থেকে র্যাব–১–এ কর্মরত আছেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসডব্লিউএসএস/১২২০
আপনার মতামত জানানঃ