পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত বুধবার ‘দিদির সুরক্ষা কর্মসূচি’ শুরু করেছেন। এ লক্ষ্যে দিদি বা মুখ্যমন্ত্রী মমতা নিয়োজিত ‘দূতদের’ গ্রামে পাঠিয়ে সাধারণ গ্রামবাসীর অভাব–অভিযোগের কথা শুনছেন। এসব দূত পরিচিতি পেয়েছেন ‘দিদির দূত’ হিসেবে।
তবে এসব দূত গ্রামে গিয়ে প্রচণ্ড বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন। অনেক এলাকায় দিদির দূতদের ঢুকতেও দেওয়া হয়নি। দিদির দূত হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন এই রাজ্যের তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও বিধায়কেরা।
আজ শনিবার এ কর্মসূচির আওতায় দিদির দূত, রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথিন ঘোষ উত্তর চব্বিশ পরগনার দত্তপুকুরের ইছাপুর-নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতে যান। সেখানে সাগর বিশ্বাস নামের এক তৃণমূল কর্মী এলাকার রাস্তাঘাট নিয়ে মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করলে আরেক তৃণমূল নেতা শিবম রায় খেপে ওই প্রশ্নকারীকে সপাট এবং মন্ত্রীর সামনে চড় মারেন।
এ ঘটনায় উত্তপ্ত হয় দত্তপুকুর। মন্ত্রী নিজে চড় খাওয়া দলীয় কর্মীকে শান্ত করেন। যদিও এ ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এর আগে গতকাল শুক্রবার রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় দিদির দূত গেলে, সেখানে প্রচণ্ড বিক্ষোভের মুখে পড়েন। রাজ্যের বীরভূম ও পুরুলিয়ায় তিন দূত সংসদ সদস্য শতাব্দী রায়, অর্জুন সিংসহ তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য, অভিনেত্রী ও তৃণমূল নেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রচণ্ড বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়।
সংসদ সদস্য শতাব্দী রায় তো এলাকায় কাজ না করার অভিযোগে তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েন। একপর্যায়ে মধ্যাহ্নভোজ করতে বসে ক্ষোভের মুখে খাবার আসন ছেড়ে না খেয়ে উঠে যেতে হয়।
শতাব্দীর ঘটনাকে কটাক্ষ করে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘ওরা বড়লোক। শালপাতার থালায় আর মাটিতে বসে খেতে পারেন কি?’
তৃণমূল নেতা ও মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্যকে ঢুকতেই দেননি ডিহিপাড়ার বাসিন্দারা। এদিনই আবার বারাকপুরের তৃণমূল সংসদ সদস্য অর্জুন এলাকায় আবাস যোজনায় বাড়ি বরাদ্দ নিয়ে এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে পড়েন। পুরুলিয়ায় গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন তৃণমূল নেত্রী ও অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘দিদির দূত’ নিয়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলের প্রকৃত কর্মীদের না দিয়ে নেতারা নিজেদের লোকজন নেওয়ার অভিযোগ এনে গতকালই ডায়মন্ড হারবারের বিধায়কের বাড়ি ঘেরাও করেন স্থানীয় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
এর আগে দরিদ্র ও গৃহহীনদের বাড়ি দিয়ে সহায়তা বা আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। খোদ শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যেই দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।
আবাস যোজনা প্রকল্প ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প। সেখানে ব্যাপক দুর্নীতি, আশ্রয়হীন ও গরিবদের বসতঘর থেকে বঞ্চিত করার ব্যাপক অভিযোগ আছে। এসব অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের একশ্রেণির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভেতরে–ভেতরে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে।
গতকাল শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটার ব্লক ইনফরমেটিক্স দপ্তরে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরাই। তাদের অভিযোগ, সরকারি কর্মকর্তারা তাদের কাছ থেকে বাড়ি বরাদ্দ করার জন্য অর্থ নিলেও তারা বাড়ি বরাদ্দ করেননি। এ ভাঙচুরের নেতৃত্ব দেন এখানকার পঞ্চায়েত সমিতির প্রধান শামসুল হক ও পঞ্চায়েত সদস্য মোবারক ইসলাম।
এদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে সরকারি দপ্তরে বিক্ষোভ দেখিয়ে দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, ওই দপ্তরের কর্মকর্তারা তালিকা থেকে তাঁদের নাম বাদ দিয়ে নিজেদের আত্মীয়স্বজনের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
গত শনিবার রাজ্যের হাওড়ার শ্যামপুরের তৃণমূলের বিধায়ক কালীপদ মণ্ডল প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়ে দেন, আবাস যোজনায় বহু গরিব ঘর পাননি, বঞ্চিত হয়েছেন। ঘর পেয়েছে গ্রামের বহু বিত্তবান ধনী পরিবার এবং তিনতলার পাকা বাড়ির মালিকেরাও।
যদিও এ ঘটনার পর আবাস যোজনায় তৃণমূলের দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছে এই রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসসহ অন্যরা।
বিজেপি নেতা ও দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ গতকাল বলেন, ‘জনরোষ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তৃণমূল এসব নাটক করছে।’ আর সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘এসব ঘটনায় প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে, এই তৃণমূল সরকার শতভাগ চোর।’
এসডব্লিউএসএস/১৯২৫
আপনার মতামত জানানঃ