গত দুই দশকে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। গড়ে প্রতি বছর প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮০ জন। সম্প্রতি রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের (আরএসএফ) প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর আল জাজিরার।
প্যারিস-ভিত্তিক অধিকার সংগঠনটি বলেছে, ২০০৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যকার দশক দুটি ছিল ‘তথ্য জানানোর কাজে নিয়োজিত লোকদের জন্য’ মারাত্মক প্রাণঘাতী।
এই সময়ে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ ছিল ইরাক ও সিরিয়া। গত ২০ বছরে এ দুটি দেশে মোট ৫৭৮ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, যা বিশ্বব্যাপী মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের চেয়েও বেশি।
এরপর মেক্সিকোতে হত্যার শিকার হয়েছেন ১২৫ জন, ফিলিপাইনে ১০৭ জন, পাকিস্তানে ৯৩ জন, আফগানিস্তানে ৮১ জন এবং সোমালিয়ায় নিহত হয়েছেন ৭৮ জন সাংবাদিক। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার ৮০ শতাংশ ঘটনাই ঘটেছে মাত্র ১৫টি দেশে।
আরএসএফের দৃষ্টিতে সাংবাদিকতার জগতে সবচেয়ে অন্ধকার বছর ছিল ২০১২ ও ২০১৩। ওই সময় সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছিল। ২০১২ সালে দেশটিতে ১৪৪ জন ও এর পরের বছর ১৪২ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হন।
সাংবাদিক হত্যার প্রবণতা ফের বেড়েছে ২০২২ সালে। এতে অবশ্য ইউক্রেন যুদ্ধের আংশিক ভূমিকা রয়েছে। এ বছর বিশ্বে ৬৬ সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী পেশাগত কারণে নিহত হয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউটের (আইপিআই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সাংবাদিক হত্যা নিয়ে আইপিআই গ্লোবাল নেটওয়ার্ক গতকাল বৃহস্পতিবার বার্ষিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য সংযোজন করা হয়েছে। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা-ভিত্তিক আইপিআই ১৯৯৭ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক হত্যার তথ্য নথিভুক্ত করে আসছে।
আইপিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে বিশ্বে বেশিসংখ্যক সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী পেশাগত কারণে নিহত হয়েছেন। ২০২১ সালে বিশ্বে ৪৫ সাংবাদিক নিহত হয়েছিলেন।
চলতি বছর নিহত সাংবাদিকদের মধ্যে ৮ নারী এবং ৫৮ পুরুষ। আইপিআই বলছে, এ বছর বিশ্বে সাংবাদিক হত্যা বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করেছে মেক্সিকোয় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক হামলা, একই সঙ্গে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন।
২০২২ সালে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন মেক্সিকোয়। এই সংখ্যা ১৪। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কাভার করতে গিয়ে চলতি বছর আট সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ইউক্রেনীয় ও অন্য দেশের সাংবাদিক রয়েছেন।
চলতি বছর হাইতিতে নিহত হয়েছেন আট সাংবাদিক। ফিলিপাইনসে পাঁচজন। কলম্বিয়ায় চারজন। ইকুয়েডর ও হন্ডুরাসে তিনজন করে। ব্রাজিল, ভারত, মিয়ানমার, সিরিয়া ও ইয়েমেনে দুজন করে। বাংলাদেশ, শাদ, চিলি, গুয়াতেমালা, কেনিয়া, কাজাখস্তান, ফিলিস্তিন, প্যারাগুয়ে, সোমালিয়া, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রে একজন করে সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
আইপিআই বলছে, চলতি বছর বিশ্ব সাংবাদিকদের ওপর লোমহর্ষক সব হামলা দেখেছে। যেমন গত মে মাসে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযান কাভার করার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন আল-জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ।
এদিকে, আরএসএফের ভাষ্যমতে, গত দুই দশকে ‘যুদ্ধ চলমান অঞ্চলের’ তুলনায় ‘শান্তিপূর্ণ অঞ্চলেই’ বেশি সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তারা সংঘবদ্ধ অপরাধ ও দুর্নীতির তদন্ত করছিলেন।
সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের প্রায় অর্ধেকেই ঘটেছে আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোতে। এদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মেক্সিকো, ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও হন্ডুরাস। আরএসএফের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, স্পষ্টতই বর্তমানে গণমাধ্যমের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক মহাদেশ হলো আমেরিকা।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিচার নিশ্চিতে রাষ্ট্রগুলোর ব্যর্থতা সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে সহিংসতার উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করে চলছে। বিশ্বব্যাপী এই অপরাধের জন্য দায়মুক্তির অবসান ও সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আইপিআই আহ্বান জানিয়েছে।
এসডব্লিউএসএস/০৮১৮
আপনার মতামত জানানঃ