জরুরি প্রয়োজনে রক্তের চাহিদা মিটবে এবার। খুঁজতে হবে না ডোনার, লাগবে না ম্যাচিং। কেননা বিজ্ঞানীরা এবার মানবদেহের উপযোগী কৃত্রিম রক্ত উদ্ভাবন করেছেন। প্রতিবছর শুধু রক্ত সরবরাহের অভাবে মারা যাওয়া কয়েক কোটি লোককে এবার রক্ষা করা যাবে।
স্কটল্যান্ডের ন্যাশনাল ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিস মানবদেহে ব্যবহার উপযোগী কৃত্রিম লোহিত রক্তকণিকা উদ্ভাবন করতে পেরেছে, যা মানবদেহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মানুষের স্টেমসেল (ভ্রূণকোষ) থেকে এ রক্তকণিকা তৈরি করা হয়েছে। পরীক্ষাগারে তো এ রক্ত সফল, কিন্তু মানবদেহে? এবার এ সন্দেহ দূর হলো।
প্রথমবারের মানুষে শরীরে পরীক্ষাগারে তৈরি কৃত্রিম রক্ত দিয়ে ইতিহাস গড়েছে যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক। সোমবার (৭ নভেম্বর) দুই ব্যক্তির শরীরে কৃত্রিম রক্ত দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, ওই দুই ব্যক্তির শরীরে কৃত্রিম রক্ত দেয়ার পর কী ধরণের প্রভাব পড়েছে তা পরীক্ষা নিয়ে করে দেখছে গবেষকরা।
জানা গেছে, ফুসফুস থেকে যেসব লোহিত রক্ত কণিকা সারা শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করে তাদের নিয়ে পরীক্ষা করছেন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ব্লাড এন্ড ট্রান্সফিউশন বিভাগে ব্রিস্টল, ক্যামব্রিজ ও লন্ডনের গবেষকরা।
প্রথমে দুই ব্যক্তিকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে নেয়া হলেও কমপক্ষে ১০ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে এই পরীক্ষা চালানো হবে বলে জানায় বিবিসি। তাদের রক্তে সামান্য পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পদার্থ মেশানো হয়েছে, যাতে করে তা কতদিন মানুষের শরীরে থাকে তা পর্যবেক্ষণ করা যায়।
গবেষকরা জানায়, পৃথিবীর বেশিরভাগ রক্তদানের জন্য সবসময়ই মানুষের ওপর নির্ভর করতে হবে। তবে এই গবেষণার লক্ষ্য হলো অতি গুরুত্বপূর্ণ ও বিরল গ্রুপের রক্ত কৃত্রিমভাবে উৎপাদন করা। ‘সিকল সেল অ্যানিমিয়া’ রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য নিয়মিত রক্তের প্রয়োজন হয়।
এ চিকিৎসায় সুপরিচিত এ, বি, এবি এগং ও গ্রুপ ছাড়াও আরও জটিল টিস্যু-ম্যাচিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। যদি দাতা ও গ্রহীতার রক্ত হুবহু না মেলে তাহলে এই চিকিৎসা আর কাজ করে না।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক অ্যাশলি টয় বলেন, কিছু কিছু রক্তের গ্রুপ এতোটাই বিরল যে পুরো দেশে মাত্র ১০ জনের মতো ব্যক্তি তা দান করার উপযোগী হতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, এই মুহূর্তে পুরো যুক্তরাজ্যতে ‘বম্বে’ গ্রুপের মাত্র তিন ইউনিট রক্ত সংগ্রহে রয়েছে। এই গ্রুপটি সর্বপ্রথম ভারতে শনাক্ত হয়। অধ্যাপক টয় জানান, ভবিষ্যতে যত বেশি পরিমাণে সম্ভব রক্ত উৎপাদন করাই তাদের লক্ষ্য।
প্রতিবেদনে এই রক্ত তৈরির নিয়মটিও বলা হয়েছে, প্রথমে ৪৭০ মিলিলিটারের মতো রক্ত সাধারণ ডোনেশনের মধ্যমে নেয়া হয়। এরপর চুম্বক গুটি ব্যবহার করে সেখান থেকে সেসব স্টেম সেল আলাদা করে নেয়া হয়, যেগুলো লোহিত রক্ত কণিকায় পরিণত হতে সক্ষম। পরে এই স্টেম সেলগুলোকে পরীক্ষাগারে বিপুল পরিমাণে উৎপাদন করা হয় ও লোহিত কণিকায় পরিণত করা হয়।
এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে প্রায় তিন সপ্তাহের মতো সময় লাগে। পাঁচ লাখ স্টেম সেল থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদন করা যায়। তবে এখানেই শেষ নয়। এই লোহিত কণিকাগুলোকে ফিল্টার করে দেড় হাজার লোহিত কণিকা পাওয়া যায় যেগুলো ট্র্যান্সপ্লান্টের জন্য উপযুক্ত।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭৪৪
আপনার মতামত জানানঃ