পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরোধ এখন তুঙ্গে। বিষয়টি এতদিন পর্দার আড়ালে ছিল। এখন একেবারে প্রকাশ্যে। ইমরান খানকে উদ্দেশ্য করে পাকিস্তানের গুপ্তচরপ্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল নাদিম আনজুম অভিযোগ করেছেন, দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার সরকারের জন্য সামরিক বাহিনীর কাছে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ সুবিধা চেয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার বিরল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইন্টার-সার্ভিস ইন্টিলিজেন্সের (আইএসআই) প্রধানরা সাধারণত একটু আড়ালেই থাকেন, সংবাদ সম্মেলন তো দূর জনসমক্ষেই তাদের খুব একটা দেখা যায় না।
সাম্প্রতিক সময়ে তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রধানের সমালোচনার মাত্রা আরও বাড়ছিল। এরই প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার দেশটির সামরিক বাহিনীর ভেতরেও প্রভাবশালী আইএসআইয়ের প্রধান নাদিম আনজুম সংবাদ সম্মেলনে আসেন।
তিনি বলেন, ‘ইমরান খানের সমালোচনার কারণ হচ্ছে সামরিক বাহিনী ও এর প্রধান অবৈধ এবং অসাংবিধানিক কাজ করতে রাজি হননি।’
এর আগে ইমরান খান বলেছেন, গত এপ্রিলে তার সরকারকে উৎখাত করতে সেনাবাহিনী ষড়যন্ত্র করেছিল। সেনাবাহিনী বিরোধীদের সমর্থন করেছিল বলেও অভিযোগ করেন ইমরান।
ইমরানের এমন অভিযোগের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে আনজুম বলেন, সেনাবাহিনী ও এর প্রধান অবৈধ, অসাংবিধানিক কাজ করতে রাজি না হওয়ায় এমন অভিযোগ তুলেছেন ইমরান।
আনজুম আরও বলেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর রাজনীতির বাইরে থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। তাই সরকারকে সমর্থন দিতে ইমরান খানের ক্রমাগত অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে সেনাবাহিনী।
ইমরান খানের সমালোচনার কারণ হচ্ছে সামরিক বাহিনী ও এর প্রধান অবৈধ এবং অসাংবিধানিক কাজ করতে রাজি হননি।’
তিনি বলছেন, ইমরান খানের সরকার নিজের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবকে ব্যর্থ করার জন্য সেনাপ্রধানের মেয়াদ অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বর্ধিত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদি কমান্ডার ইন চিফ একজন দেশদ্রোহী হন তাহলে কেন গত বছরগুলোতে তিনি তার অফুরন্ত প্রশংসা করেছেন।
তিনি আবারো প্রশ্ন রাখেন, যদি আপনার চোখে সেনাপ্রধান একজন দেশদ্রোহী হন, তাহলে কেন তার মেয়াদ বৃদ্ধি করতে চেয়েছিলেন? কেন এখনো গোপনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন?
আইএসআই’র ডিজি আরও বলেন, কয়েকদিন ধরে এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বিতর্ক করেছেন। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা সংবিধানের পক্ষে কঠোর অবস্থানে থাকবো। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে ওইসব সদস্যও জড়িত ছিলেন, যারা আগামী ১৫ থেকে ২০ বছর সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেবেন।
সেনাবাহিনীর এই সংবাদ সম্মেলনের জবাবে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফের (পিটিআই) সিনিয়র নেতারাও সংবাদ সম্মেলন করেছেন লাহোরে। এতে উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র নেতা আসাদ উমর, শাহ মেহমুদ কুরেশি, ফাওয়াদ চৌধুরী প্রমুখ।
আইএসআই ও আইএসপিআরের বক্তব্য সম্পর্কে তারা বলেছেন, নতুন ‘প্যান্ডোরার বাক্স খোলা হয়েছে’।
শাহ মেহমুদ কুরেসি বলেছেন, ওই সংবাদ সম্মেলন বিষয়টিকে আরও জটিল করেছে। তিনি বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে নতুন একটি প্যান্ডোরার বাক্স খোলা হয়েছে।
পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। পাকিস্তানের স্বাধীনতার সাড়ে সাত দশকের মধ্যে তিন দশকের বেশি সময় দেশটির সরাসরি শাসনক্ষমতায় ছিল সেনাবাহিনী। বেসামরিক ব্যক্তিরা ক্ষমতায় থাকলেও পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন ২০১৮ সালে প্রথমবার ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পেছনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল।
আনজুম বলেছেন অতীতে সেনাবাহিনী ভুল করেছে। তবে সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠানিকভাবে রাজনীতি থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত এপ্রিলে পার্লামেন্টে বিরোধীদের ভোটে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর থেকে ইমরান আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন। আজ শুক্রবার লাহোর থেকে ইসলামাবাদ পর্যন্ত বিক্ষোভমিছিল করার ঘোষণা দিয়েছেন ইমরান।
পাকিস্তানের সরকার বলছে নির্ধারিত সময় আগামী বছরের অক্টোবরে নির্বাচন হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৩৪
আপনার মতামত জানানঃ