ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রায় ৯০ শতাংশই দেশটির উঁচু বর্ণের গোষ্ঠীর দখলে বলে নতুন এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমনকি একটি দলিত বা আদিবাসীও দেশটির মূলধারার গণমাধ্যমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন না। ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দু এ খবর জানিয়েছে।
অক্সফ্যাম ইন্ডিয়া-নিউজলন্ড্রির রিপোর্টের দ্বিতীয় সংস্করণ ‘আমাদের গল্প কে বলে: ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রান্তিক জাতি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
প্রতিবেদনটি প্রায় ৪৩টি ভারতীয় প্রিন্ট, টিভি এবং ডিজিটাল মিডিয়া আউটলেট পর্যালোচনা করে করা হয়েছে।
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত এই গবেষণায় ২০ হাজারেরও বেশি ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্রের নিবন্ধ, ৭৬ অ্যাঙ্করের ২,০৭৫টি প্রাইম-টাইম বিতর্ক, ৩,৩১৮টি প্যানেলিস্ট এবং ১২ মাসের অনলাইন সংবাদ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে করা হয়েছে।
গবেষণাটি গুণগত মানের উপর পরিচালিত হয়েছে। যেমন লেখক বা অংশগ্রহণকারীদের সামাজিক অবস্থান, সংবাদ আইটেমের বিশিষ্টতা এবং সংবাদ কভারেজের বিষয়।
সেখানে বলা হয়েছে, প্রিন্ট, টিভি এবং ডিজিটাল গণমাধ্যমের প্রায় ৯০ শতাংশের নেতৃত্বে সাধারণ জাতি দখল করে রেখেছে, যাদের মধ্যে কোনো তফশিলী জাতি(এসসি) বা তফশিলী উপজাতির (এসটি) কেউ নেই।
তফশিলী জাতি (এসসি) ও তফসিলি উপজাতি (এসটি) আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের ঐতিহাসিক সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জনগোষ্ঠী হিসাবে মনোনীত হয়েছে। শর্তাদি ভারতের সংবিধানে স্বীকৃত এবং গোষ্ঠীগুলির একটি বা অন্য বিভাগে মনোনীত করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের বেশিরভাগ সময়কালে তারা অনুন্নত শ্রেণির হিসাবে পরিচিত ছিল।
নিউজরুমের ১২১টি নেতৃত্বস্থানীয় পদের মধ্যে ১০৬টিই উঁচু বর্ণের লোকদের দখলে। পাঁচটি অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর এবং ছয়টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের।
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সংবাদমাধ্যম ফোরাম দ্য মিডিয়া রাম্বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, হিন্দি এবং ইংরেজি সংবাদপত্রের প্রতি ৫টি নিবন্ধের মধ্যে ৩টি সাধারণ বর্ণের লেখকদের দ্বারা লিখিত। যেখানে প্রান্তিক জাতি (এসসি, এসটি বা ওবিসি) দ্বারা প্রতি ৫টি নিবন্ধের মধ্যে মাত্র ১টি লেখা হয়।
সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল, নিউজ ওয়েবসাইট এবং অধ্যয়নাধীন ম্যাগাজিনজুড়ে নিউজরুমের ১২১টি নেতৃত্বস্থানীয় পদের মধ্যে ১০৬টিই উঁচু বর্ণের লোকদের দখলে। পাঁচটি অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর এবং ছয়টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের। এ ঘটনায় চারজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
নিউজরুমের নেতৃত্বস্থানীয় পদগুলো হলো, সম্পাদক-ইন-চিফ, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক, ব্যুরো প্রধান, ইনপুট/আউটপুট সম্পাদক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি চারজন অ্যাঙ্করের মধ্যে তিনজনই উচ্চ বর্ণের। তাদের মধ্যে একজনও দলিত, আদিবাসী বা ওবিসি নন। তাদের ৭০ শতাংশেরও বেশি নিউজ বা অনুষ্ঠান উচ্চবর্ণের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্যানেলিস্টদের আকর্ষণ করে তৈরী৷ ইংরেজি সংবাদপত্রে নিবন্ধ লিখিয়েদের মধ্যে দলিত বা আদিবাসীরা ৫ শতাংশের বেশি নয়। হিন্দি সংবাদপত্রে এ সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নতুন সংবাদ ওয়েবসাইটগুলোতে লেখকের নামসহ প্রায় ৭২ শতাংশ নিবন্ধ উচ্চ বর্ণের লোকদের দ্বারা লিখিত। অধ্যয়নাধীন ১২টি পত্রিকার কভার পৃষ্ঠায় প্রদর্শিত ৯৭২টি নিবন্ধের মধ্যে মাত্র ১০টি জাত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে লেখা হয়।
অক্সফাম ইন্ডিয়ার সিইও অমিতাভ বেহার বলেছেন, “তিন বছরের মধ্যে আমাদের দ্বিতীয় রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে, ভারতে নিউজরুমগুলোতে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অন্তর্ভুক্তির জায়গা নয়৷ সমস্ত প্ল্যাটফর্মজুড়ে মিডিয়া সংস্থাগুলোর নেতারা দলিত, আদিবাসী এবং বহুজনদের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।”
তিনি বলেন, দেশের গণমাধ্যমকে শুধু কভারেজ নয়, নিয়োগের ক্ষেত্রেও সাম্যের সাংবিধানিক নীতিকে সমুন্নত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের মিডিয়া সংস্থাগুলোর নিয়োগের ক্ষেত্রে নিউজরুমে আরো বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। বৈষম্যহীন ভারত গঠনের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১১৫০
আপনার মতামত জানানঃ