চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সীমান্তে গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ ৬ দিন পর ফেরত দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ।
দামুড়হুদা উপজেলার বলদিয়া সীমান্তের ৮১ মেইন পিলারের জিরো লাইনের কাছে পতাকা বৈঠক শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিজিবির কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে দেশটির বাহিনী।
মরদেহ নিতে বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির অতিরিক্ত পরিচালক মেজর মাহবুবুর রহমান ও দর্শনা থানার পরিদর্শক নিখিল চন্দ্র অধিকারী। নিখিলই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলার ছোট বলদিয়া সীমান্তের ৮২ নম্বর মেইন পিলারের গত ৮ অক্টোবর রাতে নিহত হন ৩২ বছরের মুনতাজ হোসেন।
তার ভাই ইন্তাজুল আলী বলেন, ‘আমার বড় ভাই গরু-মহিষের ব্যবসা করেন। রাতে সীমান্তে মহিষ আনতে যান তিনি। রাত ১টার দিকে সীমান্তের ৮২ নম্বর মেইন পিলারের বিপরীতে ভারতের ৫৪ বিএসএফ বিজয়পুর ক্যাম্প সদস্যরা ৭-৮ রাউন্ড গুলি চালায়। আমার ভাই তখন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।’
ভারতের নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবিন মুখার্জী জানান, গুলি ঘটনার পরদিন সকালে মরদেহ ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায় বিএসএফ সদস্যরা। কৃষ্ণগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
তিনি বলেন, ‘নিহত ব্যক্তি অবৈধভাবে ভারতের অভ্যন্তরে ঢুকে মহিষ নিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানায় বিএসএফ। ঘটনার দিন মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ সেখানেই সংরক্ষিত রাখা হয়। আজ মরদেহ আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করা হলো।’
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যার বড় একটি কারণ গরু চোরাচালান। ভারতে গরুর যথেষ্ট কদর রয়েছে। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ক্ষমতায় এসে গরু সুরক্ষা ও পাচার বন্ধে অত্যন্ত কঠোর হয়। ২০১৫ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করে। এরপর গেল কয়েক বছরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গরু চোরাচালান ব্যাপক হারে কমেছে। তবে হত্যা বন্ধ হয়নি।
২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২০ হাজার ৪১৫টি গবাদি পশু জব্দ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ২০১৫ সালে সেই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬০২টি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে ১ লাখ ৫৩ হাজার গবাদি পশু জব্দ করেছিল বিএসএফ। তার ৫ বছর পর ২০২১ সালে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২০ হাজার ৪১৫টি গবাদি পশু জব্দ করে।
এর বিপরীতে ২০১৫ সালে বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তে ২১৯ বার গুলি চালিয়েছে। আর গত বছর (২০২১ সালে) গুলি চালিয়েছিল ২৪৪ বার। ২০১৫ সালে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারান ২৫ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) মতে, ২০২১ সালে প্রাণ হারান ১৮ জন।
এবার আসা যাক, গরু চোরাচালান সন্দেহে বিএসএফ কি সন্দেহভাজনের বুকে গুলি চালাতে পারে? ভারতীয় আইনে গরু পাচারকারী, চোরাচালানকারী কাউকে হত্যা করা তো দূরের কথা, একটা চড় মারারও এখতিয়ার নেই (বিএসএফ অ্যাক্ট-১৯৬৮)। তবে দেশটির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা ও বিএসএফের কার্যকলাপে এ আইনের কোনো তোয়াক্কাই নেই।
২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত ফাঁড়িতে বিএসএফ সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ‘আমি চাচ্ছি, গবাদি পশু পাচারের বিরুদ্ধে বিএসএফ এমন ধরপাকড় শুরু করবে যে বাংলাদেশিরা গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেবে।’ তার ওই বক্তব্যের পর সীমান্তে অপরাধীদের ধরতে বিএসএফকে আরও সহিংস হতে দেখা গেছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১১৪৫
আপনার মতামত জানানঃ