তুরস্কেের প্রবীণ সাংবাদিক ও বিরোধী দল সমর্থিত এক সংবাদপত্রের প্রধান সম্পাদক ক্যান ডুন্ডার’কে ‘সন্ত্রাসবাদ ও চরবৃত্তিতে’ যুক্ত থাকার অভিযোগে ২৭ বছরের সাজা দিয়েছে তুরস্কের একটি আদালত। ২০১৫ সালে তিনি তার পত্রিকায় রিপোর্ট করেছিলেন, ‘সিরিয়ার বিদ্রোহীদের কাছে জাহাজভর্তি অস্ত্র পাঠিয়েছে তুরস্ক’। এরপরই তাঁকে তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে চরবৃত্তির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। জীবন বাঁচাতে তখন তিনি তুরস্ক ছেড়ে জার্মানি পালিয়ে যান।
তুরস্কের একটি আদালত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চরবৃত্তির দায়ে ক্যান ডুন্ডার’কে ১৮ বছর নয় মাস এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদী কাজকে সমর্থনের দায়ে তাঁর আরো আট বছর নয় মাসের কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছে। ২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি জার্মানিতে থাকেন। তাঁর অনুপস্থিতিতেই তুরস্কের আদালত এই শাস্তি দিয়েছে।
জার্মানি সংবাদ সংস্থা ডিডাব্লিউকে ডুন্ডার জানিয়েছেন, তিনি এই রায়ে একেবারেই অবাক হননি। তিনি সত্যি কথাগুলো রিপোর্টে লিখেছিলেন। তাঁকে এই কড়া শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্য হলো, তুরস্কে যাতে আর কোনো সাংবাদিক এভাবে স্পর্শকাতর বিষয়ে কথা না বলতে পারে, তার ব্যবস্থা করা। তুরস্কের আদালত পুরোপুরি এর্দোয়ান সরকারের অধীনে। ফলে অন্য কোনো আদালতে আবেদন জানিয়েও কোনো লাভ নেই। কিন্তু আমরা ইউরোপীয়ান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটসে যাব। তারা নিশ্চয়ই বলবে, আমি সাংবাদিকতা করেছি, সন্ত্রাসবাদ নয়।
২০১৫ সালে ডুন্ডার “সিরিয়ার বিদ্রোহীদের কাছে জাহাজভর্তি অস্ত্র পাঠিয়েছে তুরস্ক” রিপোর্ট লেখার পর এর্দোয়ান তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘এই চরবৃত্তির জন্য তাঁকে অবশ্যই বিশাল মূল্য দিতে হবে।’ সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে তুরস্কে ফেরার জন্য ১৫ দিন সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ডুন্ডার তখন ফিরতে অস্বীকৃতি জানান। তারপর কোর্ট তাঁকে পলাতক চিহ্নিত করে তাঁর সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়। তিনটি শহরে তাঁর চারটি বাড়ি ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়। ২০১৬-র সেপ্টেম্বরে তাঁর স্ত্রীর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়।
এই রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিবৃতির মাধ্যমে ডুন্ডার বলেন, ”এটা বেআইনি ও নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত। এই বিচারের ফলে আমার খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে।”
প্রতিক্রিয়ায় জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেছেন, এই রায় হলো তুরস্কে স্বাধীন সাংবাদিকতার উপর ভয়ঙ্কর আঘাত। সাংবাদিকতা পাপ নয়, বরং তা সমাজসেবার অভিন্ন অঙ্গ, বিশেষ করে সাংবাদিকরা যখন ক্ষমতাসীন মানুষদের চুলচেরা বিচার করেন।
জার্মান জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, এটা বর্বরোচিত সিদ্ধান্ত। ফ্রি কান্ট্রি হলে ডুন্ডার বরং এর জন্য পুরস্কার পেতেন। জার্মান সরকার যেন তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং তাঁকে যেন অপহরণ করে তুরস্কে নিয়ে যাওয়া না হয়, তা নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছে জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন।
জার্মানির মানুষ ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ দিয়ে ডুন্ডার বলেছেন, তাঁরা প্রথম থেকেই তাঁর পাশে থেকেছেন। জার্মান সরকারের উচিত, শুধু এর্দোয়ান সরকারের সঙ্গে কথা না বলা, তুরস্কে প্রচুর মানুষ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো।
সূত্র : ডয়েচে ভেলে
আপনার মতামত জানানঃ