বাংলাদেশের হিন্দু আইনে বাবার সম্পত্তিতে মেয়ের অধিকার ও স্বামীর মৃত্যুর পর রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে স্ত্রীর অধিকার দাবি করেছেন পার্থ সারথী মজুমদার নামে এক ব্যক্তি।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘দেবী রূপে পূজা নয়, চাই নারী রূপে হিন্দু নারীর সম্পত্তির অধিকার’ শিরোনামে একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে এমন দাবি জানান তিনি। তার এ কর্মসূচিতে সঙ্গী হয়েছেন তারই ছোট্ট শিশু কন্যা।
পার্থ সারথী দাস ঢাকার মালিবাগে বসবাস করেন। তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি।
তার বক্তব্য, ‘বাংলাদেশের হিন্দু আইনে এখনো নারীরা তার বাবা কিংবা স্বামীর সম্পত্তিতে কোনো অংশ পান না। আমরা শুধু পূজা পার্বণের দেবীর আরাধনা করি। কিন্তু যে দেবী এসেছেন নারী রূপে, সেই নারীকে আমরা অধিকার দিচ্ছি না। নারীরা সম্পত্তির ভাগ পাচ্ছে না। যদি ধর্মের ভিত্তিতে হিন্দু নারীর সম্পত্তিতে অধিকার না থাকে, তাহলে দেশত্যাগ করবো নাকি ধর্ম ত্যাগ করবো? ভ্রূণ হত্যা বাড়বে, নাকি সতীদাহ প্রথা চালু হবে!’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের হিন্দু নারীরা তাদের সম্পত্তির অধিকার পান না। আমার দাবি বাংলাদেশের হিন্দু আইন সংস্কার করে নারীদের সম্পত্তিতে অধিকার দেওয়া হোক।
ছোট্ট শিশু অহল্যা পদ্মজা প্রাপ্তি একটি ছোট ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার বয়স মাত্র সাড়ে সাত বছর, পড়ছে ক্লাস ওয়ানে। ব্যানারের অন্য পাশ ধরে আছেন তার বাবা পার্থ সারথি মজুমদার।
হিন্দু ধর্মের রীতি অনুযায়ী মেয়েরা বাবার ও স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকার পায় না। অহল্যার বাবার আশঙ্কা, যদি তিনি মারা যান, তবে অহল্যার কী হবে? তার আরও একটি ছোট্ট মেয়ে আছে, তারই বা কী হবে? তিনি বলেন, শুধু তার মেয়ে নয়, দেশের অন্য হিন্দু মেয়েদের নিয়েও তিনি চিন্তিত।
এখন দুর্গাপূজা চলছে। নারীর পূজা করা হচ্ছে। অথচ সেই নারীরই সম্পত্তির অধিকার নাই।
পারিবারিক তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে তিনি জানান, তার বোনের স্বামী মানিক লাল মণ্ডল বুয়েট থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তার দুই মেয়েও বুয়েট থেকে পাশ করেছেন। তিনি মারা যাওয়ার পর এই উচ্চশিক্ষিত মেয়েরা তার বাবার সম্পত্তি পাননি। অন্য পুরুষ আত্মীয়রা তা দখল করে নিয়েছেন। এখন এই মেয়েরা ভয়ে তার বাবার বাড়িতে পর্যন্ত যেতে পারেন না। এই অন্যায় ও বৈষম্যের অবসান চান তিনি। তার মেয়ে এবং অন্য কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেয়েরা যাতে এ ধরনের অন্যায় ও বৈষম্যের স্বীকার না হয়, সে জন্য রাষ্ট্রের কাছে নিশ্চয়তা চান তিনি। চান ইতিবাচক পরিবর্তন।
পার্থ সারথি মজুমদার আরও বলেন, ‘এখন দুর্গাপূজা চলছে। নারীর পূজা করা হচ্ছে। অথচ সেই নারীরই সম্পত্তির অধিকার নাই। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এখন হিন্দু নারীরা বাবা ও স্বামীর সম্পত্তিতে সমান অধিকার পাচ্ছেন। সেখানকার সরকার এবং আদালতের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।’ বাংলাদেশেও এই সমান অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
কোন ইচ্ছাপত্র বা উইল না থাকলে হিন্দু নারী তথা মেয়েরা বঞ্চিত হন মৃত বাবার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও সম্পদের উত্তরাধিকার থেকে। এমনকি এক বা একাধিক ভাই থাকলেও উইলের অবর্তমানে হিন্দু মেয়ের আদৌ কোন অধিকার থাকে না পিতার সম্পত্তিতে। অন্যদিকে পুত্রহীন বাবার সম্পত্তি ভাগ হয়ে যায় পরিবারের অন্য সদস্য তথা ভাইয়ের সন্তানদের মধ্যে। বাবা উইল বা ইচ্ছাপত্র করে না গেলে মেয়ে বা মেয়েরা হন সম্পদ ও সম্পত্তি বঞ্চিত। হিন্দু বিধবারাও বঞ্চিত হয়ে থাকেন মৃত স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে। যুগ যুগ ধরে অনূসৃত এই প্রথার পরিবর্তন দাবি করেছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে বাংলাদেশে হিন্দু নারী কিছুই পান না। প্রতিবেশী দেশ ভারতে আইন করে হিন্দু নারীদের সম্পত্তিতে সমানাধিকার দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও এই আইন হওয়া উচিত, যাতে হিন্দু নারীরা আর বঞ্চিত না হন। তবে ধর্মান্তরিত হলে হিন্দু নারী-পুরুষ উত্তরাধিকার সম্পত্তির অধিকার হারাবেন—এই বিধান রেখেই দ্রুত হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পাস করা হোক।
তারা আরও বলেন, হিন্দু নারীর বিবাহ ও বিচ্ছেদ নিয়েও রয়েছে নানা জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতা। ঘৃণ্য বর্ণাশ্রম প্রথা বা বর্ণভেদ দূর করার পাশাপাশি পণপ্রথাসহ হিন্দু বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদের আইনকে দেশের সংবিধানের আলোকে আমূল সংস্কার ও পরিবর্তন করা জরুরী এবং অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি অনিবার্য এসে পড়ে হিন্দু নারীর পৈত্রিক সম্পত্তিতে সমান অধিকার নিশ্চিতকরণের বিষয়টি। যা ইতোমধ্যে আইনে পরিণত হয়েছে ভারত, নেপাল, মরিশাস, ফিজিসহ কয়েকটি দেশে। হিন্দু নারী-পুরুষের সনাতন ধর্মের রীতিনীতি অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনের পাশাপাশি রেজিস্ট্রির বিষয়টিও বাধ্যতামূলক করা বাঞ্ছনীয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫০
আপনার মতামত জানানঃ