ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে এবার শামিল হলো স্কুলছাত্রীরা। মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) মাথা থেকে হিজাব খুলে বাতাসে উড়িয়ে এবং ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভে একাত্মতা প্রকাশ করেছে তারা।
ইরানে কঠোর পর্দাবিধি লঙ্ঘন করায় গত মাসে মাসা আমিনি নামের এক নারীকে হেফাজতে নেয় নীতি পুলিশ। পুলিশের হেফাজতে মারা যান মাসা। এ ঘটনার প্রতিবাদে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, স্কুল চত্বরে এবং বিভিন্ন শহরের রাস্তায় বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে স্কুলশিক্ষার্থীরা। একটি ভিডিওতে স্কুলের ভেতরের মাঠে ছাত্রীদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। আরও ভিডিওতে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি শহরের সড়কে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। এসব ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেছে বিবিসি।
তেহরানের পশ্চিমের শহর কারাজে একদল ছাত্রীকে একজন শিক্ষা কর্মকর্তার সামনে স্লোগান দিতে দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ‘আপনার লজ্জা করা উচিত’ বলে স্লোগান দিচ্ছে ছাত্রীরা এবং পানির বোতল ছুড়ে মারছিল। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ‘যদি আমরা একতাবদ্ধ না হই, তবে তারা আমাদের একে একে মেরে ফেলবে’ বলে স্লোগান দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইরানের এক স্কুলের দুটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে। একটিতে দেখা গেছে, স্কুলের এক ছাত্রীকে। তিনি দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা একটি ছবি উল্টো দিকে ঘুরিয়ে ঝুলিয়ে দিচ্ছেন। এবং ছবিটির পেছনে কিছু লেখা রয়েছে, ছবিটি ঘুরিয়ে দেওয়ার ফলে তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
ছবিটিতে ইরানের দুই ‘সুপ্রিম লিডার’ আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ও আলি খামেনিকে দেখা যাচ্ছে। এই দুই নেতা হলেন ইরানের দীর্ঘ সময়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। আলি খামেনি ১৯৮০ সালে সুপ্রিম লিডারের পদে বসেন। ৪৩ বছর তিনি ওই পদে ছিলেন। তার শাসনকালে নারী অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তার আগের সর্বোচ্চ নেতা রুহুল্লাহ খোমেনির বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ ছিল।
ইরানের প্রতিটি স্কুলঘরে এ দুই নেতার ছবি রাখা বাধ্যতামূলক। ছবি উল্টো করে ঝুলিয়ে দিচ্ছে এক স্কুলছাত্রী। দেখা যাচ্ছে, ছবির উল্টো দিকে কিছু লেখা। ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’। এটিই ভাইরাল হয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এসময় তারা হাতে হিজাব উড়িয়ে প্রতিবাদ করে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে ইঙ্গিত করে তারা স্লোগান দেয় ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’।
সোমবার দক্ষিণাঞ্চলীয় শিরাজ শহরে কয়েক ডজন স্কুলছাত্রী একটি সড়ক অবরোধ করে। এসময় তারা হাতে হিজাব উড়িয়ে প্রতিবাদ করে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে ইঙ্গিত করে তারা স্লোগান দেয় ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’।
মঙ্গলবার তেহরান, সাকেজ ও সানান্দাজ শহরে স্কুলছাত্রীদের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। শ্রেণিকক্ষে হিজাব না পরা অনেক স্কুলছাত্রী দাঁড়িয়ে আছে। অনেকে অবমাননাকর অঙ্গভঙ্গি করছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা চলমান বিক্ষোভকে দাঙ্গা ও এজন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে দায়ী করার পর প্রতিবাদে যোগ দিলো স্কুলছাত্রীরা।
ইরানে বিক্ষোভের তৃতীয় সপ্তাহ চলছে। চলমান বিক্ষোভ ইরানের সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, ইরান সরকারকে এখন কেবল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়; বরং কিশোর–তরুণ, স্কুলের শিক্ষার্থীদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবনের দাবি জানিয়েছে। তারা স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতে চেয়েছে। এখন প্রায় প্রতিটি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীদের সহিংস আচরণের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এরপরই খামেনির বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ হয়েছে।
মাসার পরিবার বলছে, পুলিশ কর্মকর্তারা তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। তার মাথা গাড়িতে ঠুকে দিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, মাসা হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন।
ইরানের উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলের কুর্দি জনগোষ্ঠী–অধ্যুষিত শহরে প্রথম বিক্ষোভ হয়। মাসা আমিনি ওই শহরেই থাকতেন। এরপর বিক্ষোভ ইরানে ছড়িয়ে পড়ে।
চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫০২
আপনার মতামত জানানঃ