অবৈধ মাদক ব্যবসা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর অর্থের একটি প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে বলে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর এক প্রতিবেদন জানিয়েছে। ন্যাটোর প্রতিবেদনটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে সাউথ এশিয়া প্রেস।খবর এএনআইয়ের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মাদক ব্যবসার ক্ষেত্রে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তালিবানের মধ্যে অশুভ যোগসাজশ আছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে মাদক ব্যবসার সম্মিলন সম্ভব হয়েছে পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সহায়তার কারণে।
ন্যাটোর প্রতিবেদনটির মূল লক্ষ্য হলো, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে উদ্ভূত মাদক ব্যবসার প্রসারের বিষয়টি বিশ্লেষণ করা। মাদক পাচার ও সন্ত্রাসবাদের মধ্যকার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা।
প্রতিবেদনটির লেখক ডেভিড আর উইনস্টন। তার মতে, তালিবান দীর্ঘদিন ধরে মাদককে তাদের আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। পপি চাষ না থাকলে তারা হয়তো কখনোই বড় সংগঠন হয়ে উঠতে পারত না। যার ফলে তারা আশরাফ গনির সরকার উৎখাতে সক্ষম হয়েছে।
তালিবান দীর্ঘদিন ধরে মাদককে তাদের আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। পপি চাষ না থাকলে তারা হয়তো কখনোই বড় সংগঠন হয়ে উঠতে পারত না। যার ফলে তারা আশরাফ গনির সরকার উৎখাতে সক্ষম হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ তালিবানের হাতে যায়। এর ফলে গোষ্ঠীটি আফগানিস্তানে আফিম চাষের ওপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
আফগানিস্তানে ১৫ বছর ধরে ৮০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর লক্ষ্য ছিল আফগানিস্তানের আফিম, হেরোইন ব্যবসা থেকে তালিবানের মুনাফা অর্জন বন্ধ করা। এই অভিযানে পপি চাষ নির্মূল থেকে শুরু করে সন্দেহভাজন ল্যাবে বিমান হামলাও চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। এখনো গোটা বিশ্বে আফিমজাত মাদকের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী তালিবানরাই।
আফগনিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে বড় আফিম উৎপাদনকারী দেশ। হেরোইন তৈরিতে এই আফিম প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, যুক্তরাজ্যে যে পরিমাণ হেরোইন যায়, এর ৯৫ শতাংশই আফগানিস্তান থেকে যায়। ।
আফগানিস্তানে আফিমের চাষ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। তারপরও দরিদ্র কৃষকরা অর্থের জন্যে এই পপি চাষে উৎসাহিত হন।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, গত ২০ বছরে দেশটির আফিম উৎপাদন ব্যাপক বেড়েছে। দেশটির ৩৪টি প্রদেশের ১২টি ছাড়া সব কটিতে আফিম চাষ হয়। পপি চাষ বন্ধ করার জন্য চাষীদের নানা ধরনের বিকল্প পণ্য যেমন আনার ও জাফরান চাষের জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু তার পরও এই অবস্থা।
কাবুলের পতনের পর গোটা আফগান অর্থনীতিতে চরম মাত্রায় ধস নেমেছে। আসন্ন দিনগুলোয় দেশটিতে মারাত্মক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকরা। গৃহযুদ্ধের কারণে এরই মধ্যে দেশটিতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে অসংখ্য মানুষ। অদূরভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরো বাড়ার জোর আশঙ্কা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়ে পড়া এ আফগান নাগরিকদের দুরবস্থার সুযোগ নিতে পারে তালিবানরা। তাদের নিয়োজিত করা হতে পারে মাদক উৎপাদন ও বাণিজ্যের সঙ্গে।
এছাড়া আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে বৈদেশিক অনুদাননির্ভরতা অনেক বেশি। তালিবানদের কাবুল দখলের পর এ অনুদানের বড় একটি অংশ বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে তালিবানরা আয়ের জন্য নিশ্চিতভাবেই মাদক বাণিজ্যের ওপর আরো নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০০
আপনার মতামত জানানঃ