সরকার যেনো খেয়ালখুশি মতো জনসাধারণের তথ্যে অনুপ্রবেশের ও নজরদারির সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়ায় ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর সরকারি নজরদারির ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে উল্লেখ করে খসড়াটি ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
আজ রোববার (২৫ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবিত আইনটির সর্বশেষ খসড়ার ওপর টিআইবির বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও সুপারিশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করে হস্তান্তর করে টিআইবি।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, ‘স্বাধীন কমিশনের পরিবর্তে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি এজেন্সি গঠন, দায়মুক্তির সুযোগ ও উপাত্ত স্থানীয়করণের মতো অবিবেচনাপ্রসূত বিধান জনগণের ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর নজরদারির আশঙ্কাকে জোরদার করেছে। উপাত্ত সুরক্ষার দায়িত্ব ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালকের ওপর ন্যস্ত রাখার বিধান সবশেষ খসড়ায় বাদ দেওয়া হলেও ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার বন্ধে, তা কোনো ভূমিকাই রাখবে না।’
ড. জামান বলেন, ‘একটি আইনের কোনো একটি ধারাকে আলাদা করে বিবেচনার সুযোগ নেই। কারণ আইনের বাস্তবায়ন সবগুলো বিধানের সমন্বিত প্রয়োগের ওপর নির্ভরশীল। আমরা দেখছি, সরকারের নিয়ন্ত্রণে আলাদা একটি এজেন্সি গঠনের কথা বলা হচ্ছে। অন্য ধারায় আবার ব্যক্তিগত তথ্যে অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম সৃষ্টি করে দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে, সব ব্যক্তিগত তথ্য দেশের অভ্যন্তরে সংরক্ষণ করার বাধ্যবাধকতা। এই তিনটি বিধানকে একসঙ্গে বিবেচনা করা হলে এটা বুঝতে সমস্যা হয় না যে, এখানে সরকার যেনো খেয়ালখুশি মতো জনসাধারণের তথ্যে অনুপ্রবেশের ও নজরদারির সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে।’
আগের খসড়ার মূল্যায়নের সময়েও আমরা বলেছিলাম, ব্যক্তিগত তথ্য আর উপাত্ত এক বিষয় নয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত খসড়া প্রস্তুতকারীরা এই পার্থক্যই অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এমন ধারণা বাস্তবায়নের লক্ষ্য থেকেই ব্যক্তিগত তথ্যের স্থানীয়করণ (ধারা ৪৪) এবং স্থানান্তরের নিষেধাজ্ঞার (ধারা ৪৫) মতো অবাস্তব ও ঝুঁকিপূর্ণ বিধান এই খসড়া থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না বলে মনে করছে টিআইবি।
ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের উদাহরণ টেনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘শুরুতে এই দেশগুলো স্থানীয়করণের কথা ভাবলেও, বাস্তবতা বিবেচনায় সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে। অথচ আমরা তিন দফা এই খসড়া সংশোধন হতে দেখলেও, কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এখনও সব তথ্য দেশেই সংরক্ষণের চিন্তা বাদ দিতে পারছি না। সংশ্লিষ্টদের কাছে আমরা জানতে চাই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন ধরনের অ্যাপসের দেওয়া তথ্য কীভাবে বাংলাদেশে মজুত করা হবে বা সেটা আদৌ বাস্তবসম্মত কি না। স্থানীয়করণের কারণে বাংলাদেশের ডিজিটাল পরিষেবা রপ্তানি ২৯ থেকে ৩৮ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে এমন গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ব্যবসার খরচ বেড়ে যাবে অস্বাভাবিকভাবে।
তিনি বলেন, ‘আগের খসড়ার মূল্যায়নের সময়েও আমরা বলেছিলাম, ব্যক্তিগত তথ্য আর উপাত্ত এক বিষয় নয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত খসড়া প্রস্তুতকারীরা এই পার্থক্যই অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
প্রস্তাবনায় ‘ব্যক্তি’ শব্দের ব্যবহার, ব্যক্তি (২-থ), উপাত্তধারী (২-ঘ), নিয়ন্ত্রক (২-ঝ), প্রক্রিয়াকারী (২-ঠ) এবং ধারা ৪ এর বিধান পর্যালোচনা করলে পরিষ্কার হয়ে যায়, তারা প্রাকৃতিক জীবিত ব্যক্তি আর আইনগত ব্যক্তিকে অর্থাৎ কোনো আইনের অধীনে গঠিত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে এক করে ফেলেছেন। অথচ এই দুই ধরনের ব্যক্তির ক্ষেত্রে একই আইনের বিধান কার্যকর করা কতটা অবাস্তব হতে পারে, সেটা বিবেচনায় আসেনি। সমস্যার এখানেই শেষ নয়, অনেক জরুরি নীতিমালা খসড়ায় উহ্য রাখা হয়েছে, যে ব্যাপারে পরে বিধি প্রণয়ন করা হবে। তাহলে সে পর্যন্ত আইনটি কীভাবে কার্যকর হবে?’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, টিআইবির প্রত্যাশা এই আইনের খসড়া প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবেন এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও মানদণ্ডের আলোকে পাওয়া সুপারিশ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১৪০
আপনার মতামত জানানঃ