উপাত্ত সুরক্ষা আইনে খসড়াটিতে সরকারি প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগে যেইরকম অপব্যবহার করা হয়েছে তেমনিভাবে উপাত্ত সুরক্ষা আইনেরও একইরকম অপপ্রয়োগের আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে এটি সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। তাই আইনের খসড়াটি ঢেলে সাজানো দরকার বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
আজ সোমবার ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২২ (খসড়া) : পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২২ খসড়া পর্যালোচনা করে এমন মন্তব্য করেছে টিআইবি।
টিআইবি বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যে কারণে করা হয়েছিল সেটি কিন্তু হচ্ছে না। এর অপব্যবহার করে মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। তেমনি এই আইনটিরও প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অপব্যবহারের সুযোগ আছে। উপাত্ত সুরক্ষা আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর অপপ্রয়োগের মতোই মারাত্মক সমালোচনার জন্ম দেবে।
তবে আইনটি করার উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারকে সাধুবাদও জানিয়েছে টিআইবি। সরকার খসড়ার ওপরে মতামত চেয়েছে। এরই মধ্যে টিআইবি সরকারের কাছে মতামত দিয়েছে লিখিত আকারে।
টিআইবি বলছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষাবিষয়ক একটি মাত্র আইন দিয়ে সকল ধরনের অবস্থা মোকাবিলা করা সহজ নয় বা চিন্তা করা উচিতও নয়। বরং এটি যথেষ্ট ঝামেলাপূর্ণ কাজ। তারপরও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এ বিষয়ে একটি আইন করার উদ্যোগ গ্রহণকে আমরা অবশ্যই সাধুবাদ জানাই।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যে কারণে করা হয়েছিল সেটি কিন্তু হচ্ছে না। এর অপব্যবহার করে মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। তেমনি এই আইনটিরও প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অপব্যবহারের সুযোগ আছে।
তবে বোঝাই যাচ্ছে যে, কেবল একটি আইন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে বলেই এই আইনটির একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু এর বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিকগুলো যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি। ধারণা করতে অসুবিধা হয় না যে, এর ফলে এটি মূল উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে এবং তড়িঘড়ি করে প্রণয়ন করা অন্যান্য আইন যেমন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতোই অপপ্রয়োগ হতে পারে। ফলে বেশ কিছু মানুষের হয়রানি বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি আবারও নষ্ট হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে এই আইনটি কার্যকর হচ্ছে সেখানে তাদের পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে এই ধরনের আইন বাস্তবায়ন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি নতুন। তাই হয়তো একটি পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকরী আইন চট করে করা যাবে না। এ সমস্যার সমাধানের সেজন্য সর্বক্ষেত্রের অংশীজনদের সঙ্গে বসে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এবং দরকারি বিষয়গুলো খুঁজে বের করে সেগুলো মোকাবেলা করার জন্য আইনের মধ্যে বিধান অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে এ সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে বিভিন্ন বিষয় এর উন্নতি সাধনের মাধ্যমে এই সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য সাধন সম্ভব হবে বলে মনে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইনে পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি পুলিশের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। তবে এটি সরকারের অন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া উচিত। এ ছাড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সিকে সীমাহীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ফলে এই ক্ষমতা অপব্যবহারের সুযোগ থাকবে। ফলে এই আইনটি কালো আইনে রূপান্তর হবে।’
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘এটি সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। তাই এই আইনের খসড়াটি ঢেলে সাজানো উচিত। তবে সরকারকে সাধুবাদ জানাই এমন আইন করার জন্য। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। তড়িঘড়ি করলে হবে না।’
তিনি আরও বলেন, দেশের কোনো কমিশন স্বাধীন হিসেবে কার্যকর নয়। তাই বলে মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলে দিতে পারি না। সব কমিশন অকার্যকর হতে পারে, কিন্তু ডাটা সুরক্ষার জন্য স্বাধীন কর্তৃপক্ষের হাতে কর্তৃত্ব দিতে হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির হাতে রাখা যাবে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৪৪
আপনার মতামত জানানঃ