সিরিয়ার উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে ৩৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনায় জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে আরও কয়েকজনকে। তারা লেবানন থেকে কয়েক দিন আগে রওনা হয়েছিলেন।
সিরিয়ার বন্দর কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
বেঁচে যাওয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার লেবাননের উত্তর মিনিয়েহ অঞ্চল থেকে তাদের বহনকারী নৌকাটি যাত্রা শুরু করে। এতে বিভিন্ন দেশের ১২০ থেকে ১৫০ জনের মতো যাত্রী ছিলেন।
যে স্থানে নৌকাডুবির ঘটনাটি ঘটে, তার আশপাশের পরিস্থিতি প্রতিকূল। উত্তাল সমুদ্র ও প্রবল বাতাসে ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের মহাপরিচালক সামের কুব্রুসলি।
এর আগে গত বুধবার লেবাননের সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, তারা একটি নৌকা থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশী অন্তত ৫৫ জনকে উদ্ধার করেছে। তারা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের কোনো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছার পরিবর্তে আবারও লেবাননের উপকূলেই চলে আসে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে বিভিন্ন দেশের মানুষ ছিল। দেশ ছেড়ে যাওয়া অভিবাসীরা উত্তর লেবাননের উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দা। এটি মূলত মধ্যপ্রাচ্যের ছোট এই দেশটির সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চল।
যে স্থানে নৌকাডুবির ঘটনাটি ঘটে, তার আশপাশের পরিস্থিতি প্রতিকূল। উত্তাল সমুদ্র ও প্রবল বাতাসে ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, লেবাননে চলছে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট। ২০১৯ সালের শেষের দিক থেকে দেশটি গুরুতর অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে যা জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে টেনে নিয়েছে। হাজার হাজার পরিবার তাদের ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে লেবাননে হাজার হাজার লোক তাদের চাকরি হারিয়েছে। লেবানিজ পাউন্ডের মূল্য কমেছে ৯০ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে লেবাননের জনসংখ্যা ৬০ লাখ, যার মধ্যে ১০ লাখ সিরীয় শরণার্থী রয়েছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নৌকায় বিভিন্ন দেশের নাগরিক ছিলেন।ইউরোপে তুলনামূলক উন্নত জীবনযাপনের আশায় গত মাসগুলোয় হাজারো লেবানিজ, সিরীয় ও ফিলিস্তিনি নৌকায় চড়ে লেবানন ছেড়েছেন।
এ ছাড়া গত এপ্রিলে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির কাছ থেকে যাত্রা করা অভিবাসনপ্রত্যাশী বহনকারী একটি নৌকা লেবাননের নৌবাহিনীর বাধার মুখে দেশটির উপকূলে ডুবে যায়। সেই নৌকায় অন্তত ৮০ জন লেবাননিজ, সিরিয়ান ও ফিলিস্তিনি অভিবাসী ছিলেন, যাদের মধ্যে সাত জনের মৃত্যু হয় এবং জীবিত উদ্ধার করা হয় প্রায় ৪০ জনকে। বাকি ৩০ জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
বিশ্বে করোনার আগমনের পর থেকে যে কোনো কারণেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া কঠিনতর হয়ে উঠেছে। অভিবাসনপ্রার্থী মানুষের জন্য প্রায় আরও অসম্ভব হয়ে উঠেছে অনুমোদন পাওয়া। এজন্য অনেকেই ঝুঁকছে অনৈতিক প্রক্রিয়ায় অভিবাসনের প্রতি। আর এভাবে দেশান্তরি হতে গিয়ে অনেকেই মৃত্যুর মুখে পড়ছে, কেউবা হচ্ছেন নিখোঁজ।
ভালো পারিশ্রমিকের আশায় কয়েক বছর ধরে পাচারকারীদের সহায়তায় লিবিয়া যাচ্ছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। সেখান থেকেই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। এরপরও ঝুঁকিপূর্ণ এ প্রবণতা বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া প্রতারণার শিকার হয়ে লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের হাতে বহু অভিবাসনপ্রত্যাশী আছেন আটক অবস্থায়।
প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হয় দালালের হাত ধরে ইতালি ও স্পেন প্রবেশের চেষ্টায় ভূমধ্যসাগরে ডুবে শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু। খবর আসে, আমেরিকায় যাওয়ার পথে বনে-জঙ্গলে দালালের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। ইউরোপে ঢোকার আশায় বলকানের বরফঢাকা জঙ্গলে হাজারো মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে অপেক্ষায় থাকার সংবাদও আসে। এ বছর ভূমধ্যসাগরে চার হাজারেরও বেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। অনেকেই মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তনই মূলত এই অভিবাসন প্রত্যাশার কারণ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫৮
আপনার মতামত জানানঃ