নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের নেতা বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে রফিকুল ইসলাম (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।অপহরণের পর নিজ কার্যালয়ে আটকে রেখে হাত–পা বেঁধে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার কায়েত পাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের ‘চনপাড়া মোড়’ (অটোরিকশা স্ট্যান্ড) থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রফিকুলকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। তুলে নেওয়ার প্রায় ৯ ঘণ্টা পর রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাড়ি ফিরেছেন রফিকুল।
রফিকুল ইসলাম পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। তিনি কায়েত পাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার বাসিন্দা। তিনি চনপাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি প্রার্থী। আর বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার পাশাপাশি কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নয় নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান।
মুক্ত হয়ে রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হামলার ভয়ে তিনি গত মাস থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এর মধ্যে ১ সেপ্টেম্বর বজলুর রহমান সমর্থকদের নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালান। রোববার সকালে মা–বাবার সঙ্গে দেখা করতে রফিকুল এলাকায় এলে বজলুর রহমান তাকে দেখে ফেলেন। পরে তাকে তুলে চনপাড়া ৩ নম্বর সেক্টরের সেতুবন্ধন ভবনে অবস্থিত বজলুরের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে হাত–পা বেঁধে তাকে হাতুড়িপেটা করা হয়।
সন্ধ্যায় তার মা–বাবা–স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা খোঁজ পেয়ে বজলুর রহমানের কার্যালয়ে যান বলে জানান রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওই সময় বজলুর রহমান আড়ালে গিয়ে কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এর কিছুক্ষণ পর তিনি গালাগাল করে সেখান থেকে রফিকুলকে চলে যেতে বলেন। পরে বাড়ি না ফিরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন রফিকুল।
বিষয়টি পুলিশকে জানালে তিনিসহ পরিবারের ওপর নির্যাতন বাড়তে পারে বলে ভয় পাচ্ছেন রফিকুল। তিনি বলেন, ‘হাত–পা বাইন্ধা উনি (বজলুর) হাতুড়ি দিয়া আমার দুই পায়ে মারছে। সকালে এক দফা মাইরধইর করছেন। পরে আমারে অফিসে তালা দিয়া উনি চইলা যান। বিকেলে আবার আসেন। আবার মারধর শুরু করেন। ওই সময় উনি মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন।’
হাত–পা বাইন্ধা উনি (বজলুর) হাতুড়ি দিয়া আমার দুই পায়ে মারছে। সকালে এক দফা মাইরধইর করছেন। পরে আমারে অফিসে তালা দিয়া উনি চইলা যান। বিকেলে আবার আসেন। আবার মারধর শুরু করেন। ওই সময় উনি মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন।’
এর আগে ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে রফিকুল চনপাড়া মোড়ে চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন মেম্বার সাহেবের (বজলুর) সাদা রঙের প্রাইভেট কারটা আইসা সেখানে থামেন। তিনি গাড়িতে বসে রফিকুলকে ডাকেন। রফিকুল কাছে গেলে তাকে জোর করে গাড়ির ভেতর তুলে নেন। এ সময় মেম্বার সাহেবের সঙ্গে তার তিনজন অস্ত্রধারী বডিগার্ড ছিল। মেম্বার সাহেবের পেছনে একটি লেগুনা ছিল। লেগুনায় চারজন পুলিশের পোশাক পরা লোক ছিলেন।’
মেম্বার সাহেব কে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘উনি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার বজলু ভাই।’ রফিকুলকে গাড়িতে তুলে নেওয়ার সময় বজলুর সাদা রঙের শার্ট পরা ছিলেন বলেও তারা জানান।
নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) আবির হোসেন বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। আপনার মাধ্যমে প্রথম জানতে পারলাম। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসব ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এটা যে হঠাৎ করে হচ্ছে তা নয়। পর্যায়ক্রমে নিচে যেতে যেতে একটা গভীর সংকটে এসে আমরা দাঁড়িয়েছি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, সম্পদ বাড়ছে, কিন্তু মানুষের মানবিক গুণাবলি কমে যাচ্ছে। এখন আমাদের সামনে কোনো আদর্শ নাই। আদর্শহীনতা, নীতিহীনতা—এগুলো দ্বারা রাজনীতি দূষিত হয়ে গেছে। জাতীয় রাজনীতি যদি দূষণমুক্ত হতো তাহলে সরকারের নীতি ভিন্ন হতো।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য দিনদিন চাউর হয়ে উঠছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার চূড়ান্তে বসবাস করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহবোধ না করায় তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে চলেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩০১
আপনার মতামত জানানঃ