ছবি: বিবিসি
ফাইজ তাইয়েব আহমেদ
শেখ হাসিনার সফর ‘জনগণের’ দিক থেকে চরম হতাশারও। শেখ হাসিনার সরকারের তিন তিনটি মেয়াদেও গুরুত্বপূর্ণ তিস্তা চুক্তি হওয়ায় বিষয়টা আওয়ামীলীগের একাট বড় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরাজয় হিসেবেই ইতিহাস মনে রাখবে। নোট ইট!
যে সাতটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, তার জন্য একটা দেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরের দরকার পড়াটা লজ্জার বিষয়। এরকম ছোটখাট চুক্তির জন্য ভারতে বাংলাদেশের একাধিক দুতাবাস, দিল্লি এবং কলকাতায় রাষ্ট্রদূত আছেন।
সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের আওতায় ১৫৩ কিউসেক পানি বণ্টনে সমঝোতা স্মারক যৌথ নদী কমিশনের কাজ, এটা রাজনৈতিক সরকার প্রধানের কাজ নয়। তিস্তা চুক্তি সম্পাদিত হয়নি বলে ‘বাংলাদেশের পক্ষে’ বড় চুক্তি নেই, ফলে এজেন্ডার প্লেট ভরা হয়েছে এসব ছোটখাট সমঝোতা স্মারক দিয়ে। শেইম!
পানি বন্টনের সমঝোতা স্মারক করে যৌথ নদী কমিশন, চূড়ান্ত চুক্তি প্রধানমন্ত্রী করতে পারেন। এক যুগ থেকে জেআরসি মিটিং বন্ধ ছিল। সম্প্রতি একটা মিটিং হয়েছে যেখানে তিস্তা আলোচিত হয়নি, গঙ্গা পানি চুক্তি অনুযায়ী পদ্মায় পানি না আসার বিষয়ে আলোচিত হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ যৌথ নদী কমিশনকে সচল দেখতে চায়।
বৈজ্ঞানিক সহযোগিতায় সমঝোতা স্মারক, কোর্টের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, রেলওয়ের আইটি বিষয়ক সহযোগিতার সমঝোতা স্মারক, ভারতীয় ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য সমঝোতা স্মারক- এসব দরকারে ভারতে বাংলাদেশের দুতাবাস/মিশন আছে। এসব কাজ প্রধানমন্ত্রীর করা লাগলে ভিসা সেকশন রেখে দুতাবাসের বাকি কর্মকর্তাদের ফেরত আনা হোক দ্রুত। উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পিছনে ডলার খরচ করে যদি দেশের জনগণের ফায়দা না থেকে, তাইলে উনাদের পুষে লাভ কি?
শেখ হাসিনার সফরে যৌথ বন্যা ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমঝোতা হয়নি, যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে বেশ আশাবাদি ছিলেন, কয়েকবার বলেছেনও। তবে কি আরেকটি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনে সহযোগিতার জন্য রাষ্ট্রীয় স্বার্থ্য এজেন্ডায় আনা হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও ফারাক্কা ও গজলডোবার গেট খুলে ‘ফ্ল্যাশ ফ্লাড’ বন্ধ করে ফ্ল্যাশ ফ্লাড বন্ধের বিষয়, অর্থাৎ বেসিন ভিত্তিক বৃষ্টিপাত, জলধারণ ও জল প্রত্যাহার কেন্দ্রিক ‘সমন্বিত বন্যা ব্যবস্থাপনা’ কে বা কারা এজেন্ডা থেকে বাদ রেখেছে?
বাংলাদেশের পণ্যে অ্যান্টিডাম্পিং নিষেধাজ্ঞা উঠানো নিয়ে শেখ হাসিনা তাঁর ভারত থেকে কিছুই আদায় করতে পারেন নি, কেন এটা আমরা জানিনা? ভারতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করা নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কি? লক্ষ লক্ষ ভারতীয় বাংলাদেশে বৈধ ভাবে কাজের সুযোগ পেলেও বাংলাদেশীরা কেন বৈধভাবে ভারতে কাজ করতে পারছেন না।বাংলাদেশীরা বৈধভাবে ভারতে কাজ করার জন্য ‘ওয়ার্ক ভিসা’ কবে পাবেন? রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারতের নীরবতা কবে ভাঙবে? শেখ হাসিনার সফরে এটা নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে?
পানি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা অর্থাৎ ‘গ্যারান্টিক্লজ’সহ তিস্তার যৌক্তিক হিস্যা আদায়ই প্রধানমন্ত্রীর সফরের সফলতা নির্ধারক ছিল। এটা যখন হয়নি এমনকি এর আলোচনাও এজেন্ডায় স্থান পায়নি, তখন শেখ হাসিনার সফর তাঁর ব্যক্তির ক্ষমতায়ন, আগামী নির্বাচনের তাঁর দলকে আবারও জিতিয়ে দেয়ার মত বিষয়ে হয়েছে বলে ‘পাবলিক’ ধারণা পোক্ত হবে।
উজানে বাঁধের ফলে বাংলদেশের নদ-নদীতে বালু জমে জলধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। বর্ষায় বন্যায় ও অতিবৃষ্টিতে হঠাৎ ছেড়ে দেয়া বাঁধের গেট বাংলাদেশের ফসল, অবকাঠামো, গবাদি পশুসহ মানুষের জীবন ও সম্পদের অভাবনীয় ক্ষতি করছে। ২০২২ সালে বৃহত্তর সিলেটে যে প্রলয়ংকরী বন্যা হয়েছে, সরকারি হিসেবেই তার ক্ষয়ক্ষতি ৮৬ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। জনগণের প্রত্যাশা ছিল যে, এবার অন্তত তিস্তা চুক্তি হবে, যৌথ বন্যা ব্যবস্থাপনায় ভারত রাজি হবে। বানে ভাসানো ও ক্ষরায় শুকানোর শেষটা অন্তত শুরু হবে। বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, শেখ হাসিনা সত্যি সত্যি ভারতকে ‘অনেক দিয়েছেন’, এবার বাংলাদেশের পাবার পালা। কিন্তু দিনশেষে প্রধানমন্ত্রী জনগণের কথা মনে রাখলেন না। বরং উনি দিয়ে আসলেন, চট্রগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি এবার দিলেন সিলেট, সৈয়দপুর বন্দরসহ অপরাপর বন্দর ব্যবহারের সুবিধা।
আপনার মতামত জানানঃ