অদ্ভূত এক লেক, এই লেকের পানিতে মাছ নয়, ভেসে বেড়ায় কঙ্কাল। এই লেকের রহস্য অনেকেরই অজানা। দীর্ঘদিন ধরে মানুষের হাড় ছড়িয়ে- ছিটিয়ে রয়েছে এই লেকে। এই লেকটিকে কঙ্কাল লেকও বলা হয়।
রূপকুন্ড হলো ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে প্রায় পাঁচ হাজার ২৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত একটি হিমবাহের হ্রদ। বরফ গলে গেলে সেখানে শত শত মানুষের কঙ্কাল পানিতে ভাসতে দেখা যায়। এই লেকটি প্রথম ১৯৪২ সালে একটি গেম রিজার্ভ রেঞ্জার দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, হিমবাহের হ্রদে পাওয়া এই কঙ্কালগুলো বোধ হয় জাপানি সৈন্যদের। পরে অবশ্য ব্রিটিশরা খোঁজ চালান কার কঙ্কাল তা খুঁজে বের করার জন্য। তদন্তের পরে দেখা গেল, মৃতদেহগুলো জাপানি সৈন্যদের নয়, বরং আরো পুরানো।
এর পেছনে রয়েছে অনেক গল্প। রাজা-রানির গল্প শতবর্ষের। এই হ্রদের কাছে একটি নন্দা দেবীর মন্দির আছে। একবার রাজা-রানি মন্দির দেখার জন্য পাহাড়ে আরোহণের সিদ্ধান্ত নেন বলে ধারণা করা হয়। তবে তিনি সেখানে একা না গিয়ে চাকরকে সঙ্গে নিয়ে যান। এসব দেখে দেবী রেগে গেলেন। তার ক্রোধ বজ্রপাত হয়ে পড়ায় সবার মৃত্যু ঘটে।
হ্রদে ভেসে বেড়ানো নর কঙ্কালগুলো নাকি কোনো এক মহামারিতে মারা যাওয়া মানুষদের, এটাও শোনা যায়। যদিও কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন, এরা সবাই সেনাবাহিনীর লোক। যারা তুষার ঝড়ে পড়ে মারা যায়। বরফের পানি শত শত বছর ধরে তার শরীরকে রক্ষা করেছিল।
এই হ্রদটি বছরের বেশিরভাগ সময়ই হিমায়িত থাকে। ঋতু অনুযায়ীও এই হ্রদের আয়তন কখনো কমে আবার কখনো বাড়ে। হ্রদের বরফ গলে গেলে এখানে উপস্থিত মানব কঙ্কাল সহজেই দৃশ্যমান হয়। তাদের একবার দেখলে মানুষ চমকে যেতে পারে।
শুধু তাই নয়, এই হ্রদ এতোটাই ভয়ংকর যে অনেক সময় কঙ্কালের বদলে পূর্ণাঙ্গ মানুষের অংশও পাওয়া যায়। সেগুলো দেখে মনে হয়, এতো বছর ধরে প্রকৃতিই হয়তো তাদের কঙ্কাল সংরক্ষণ করেছে। এ পর্যন্ত ৬০০ থেকে ৮০০ মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গেছে এই হ্রদে।
এই রহস্য বের করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহুবার হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে করা একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, এই কঙ্কালগুলো শুধু ভারতের নয়, গ্রিস, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মানুষেরও। নতুন এক গবেষণার দাবি, এসব কঙ্কাল বিভিন্ন প্রজাতির অন্তর্গত। এর মধ্যে আছে নারী-পুরুষ উভয়ের কঙ্কাল।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৪৫
আপনার মতামত জানানঃ