ক্রিকেটের পর গলফ হতে পারতো বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভবানময় একটি খেলা। ইতোমধ্যেই সিদ্দিকুর রহমানের মতো গলফাররা এশিয়ান ট্যুর পর্বে ২০১০ এবং ২০১২ সালে দুবার বিজয়ী হয়ে নিজেদের সামর্থ প্রমাণও করেছেন। গলফই একমাত্র মাধ্যম যেখান থেকে বিশ্ব র্যাঙ্কিং অনুযায়ী সিদ্দিকুর সরাসরি অলিম্পিক গেমসে প্রবেশের সুযোগও লাভ করেছিলেন। গলফ নিয়ে আমাদের একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু সামরিক বাহিনীর উচ্চাভিলাসী জেনারেলদের ভুল পরিকল্পনায় ধীরে ধীরে এর ভবিষ্যৎ প্রায় ম্লান হয়ে গিয়েছে। দু’একটি ছাড়া দেশের প্রায় সকল গলফ ক্লাব সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় সেখানে সামরিক প্রভাব ও একচ্ছত্র কর্তৃত্ব সুস্পষ্ট।
দেশের ২২টি গলফ ক্লাবই স্পোর্টস ক্লাব হিসেবে পরিচালিত এবং গলফ ফেডারেশনের অধীনস্থ। কিন্তু এই ক্লাবগুলোর সরকার বা ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত কোনো লিখিত নীতিমালা- বিধিমালা নেই। তাদের নেই কোন সরকারি নিবন্ধন, টিআইএন। তারা কোনো ট্যাক্স/ভ্যাট প্রদান করেন না। তাই সামরিক তত্বাবধানে পরিচালিত এসব গলফ ক্লাবে গতানুগতিক কোন নিয়মরীতিই নেই। এগুলো বরং বিনোদন ক্লাব হিসাবে বেশী ব্যবহৃত হয় এবং সেনাবাহিনী নির্বাচিত ইসি কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়।
রাষ্ট্রীয় মাফিয়া চক্রের মিলনকেন্দ্র যখন গলফ ক্লাব
কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব দীর্ঘদিন ধরে কুখ্যাত সন্ত্রাসী হারিস আহমেদের আত্মগোপন ও বিশ্রামের পছন্দের স্থান ছিল। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ তার কুখ্যাত ভাইদের দেখাশোনা করার জন্য হারিসের কন্যার শ্বশুর উইং কমান্ডার নাঈমকে (অব.) ক্লাবের জিএম (জেনারেল ম্যানেজার) হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন। ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত যখনই হারিস-জোসেফ-আনিস বাংলাদেশ সফর করতেন এবং বড় বড় ব্যবসায়িক চুক্তি সম্পাদন করতেন, তারা তাদের ভাই সাবেক জেনারেল আজিজের সৌজন্যে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের ফাইভ-স্টার প্রেসিডেন্ট স্যুটে আতিথেয়তা গ্রহন করতেন। জেনারেল আজিজ সেনাপ্রধান হিসেবে শুধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেই ধ্বংস করেননি, সেনাবাহিনীর ‘গলফ ক্লাব’-এর মতো অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ধ্বংস করেছেন।
কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব
কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের গোপন সম্মেলন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সজীব ওয়াজেদ জয় যখনই দেশে আসেন তাকে প্রায়ই এই ক্লাবে দেখা যায়। চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে খেলার নামে তিনি কয়েকবারই কুর্মিটোলা ক্লাবে এসেছিলেন। সামিট গ্রুপের ফরিদ খানের সাথে গলফ খেলার ফাঁকে-ফাঁকে তাকে ক্লাবের ২য় তলায় ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সাথে গোপন ব্যবসায়িক বৈঠক করতেও দেখা গিয়েছে। এ বছরের জুনের শেষে বিদ্যুৎ সংকটের শুরুতে সামিট গ্রুপের ফরিদ খান, নগদের তানভীর মিশুক এবং চৌধুরী নাফিজ শরাফতের মতো ব্যবসায়ীদের সাথে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে অন্তত ৩টি গোপন বৈঠক তিনি করেছেন বলে বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার বিশ্বস্ত সুত্র নিশ্চিত করেছে, এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী পুত্র কুর্মিটোলায় গলফ খেলতে আসলে নিরাপত্তার কারণে এসএসএফ কতৃক ক্লাবের সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। তিনি যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা এখানে অবস্থান করেন, তখন ক্লাবের কোনো সদস্য এমনকি সামরিক কর্মকর্তাদেরও ক্লাব প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এতে ক্লাবটির বেসামরিক এবং সামরিক সদস্যরা অত্যন্ত সংক্ষুব্ধ।
সামরিক কর্মকর্তাদের স্ত্রীদের পরিচালিত লেডিস ক্লাব গুলোর মতো বিভিন্ন সংস্থাও গলফ ক্লাবের সুবিধা অন্যায়ভাবে ভোগ করছে। কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব বন্ধ রেখে এর মূল সদস্যদের বঞ্চিত করা একটি স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়ছে। কিছুদিন আগেও সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল আজিজের স্ত্রী দিলশাদ নাহারের ভিডিও শুটিংয়ের জন্য ক্লাবটিতে সদস্যদের প্রবেশাধিকার বন্ধ দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার গোপন মিলনস্থল
যেহেতু গলফ ক্লাবগুলোর সদস্যরা দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসামরিক, সামরিক কর্মকর্তা , আমলা, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, শীর্ষ ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব; তাই RAW, ISI এবং চীনা গোয়েন্দা সংস্থার মতো আঞ্চলিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহের কেন্দ্র হিসাবে ক্লাবগুলিকে ব্যবহার করতে গুরুতর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। ২০০৮ সালের আগে এই ক্লাবগুলোতে আইএসআই(ISI) এবং পাকিস্তান দূতাবাসের আধিপত্য ছিল। তখন পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত এবং সামরিক উপদেষ্টা (DA) ক্লাবে নিয়মিত আসতেন এবং গলফ খেলতেন।
বর্তমানে RAW এবং চীনা গোয়েন্দারা নিয়মিত আসেন এবং খেলেন। ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কে দোরাইস্বামী, সামরিক উপদেষ্টা এবং ‘মাহিন্দ্রা, ইন্ডিয়ান অয়েল, এয়ারটেল, হিরো হোন্ডা’র মতো অনেক ভারতীয় কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা এখানে নিয়মিত খেলেন।
কেজিসির (কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব) লবিতে প্রতি শুক্রবার আপনি অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঞ্জুর কাদেরকে কোনো না কোনো ভারতীয় শীর্ষ ব্যক্তির সাথে নিভৃতে আলাপচারিতায় ব্যস্ত দেখবেন, এছাড়াও এই কর্মকর্তাকে অনেক বিদেশি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেই ঘন ঘন দেখা যায় বলে বিশেষ গোয়েন্দা সুত্রটি নিশ্চিত করেছে।
আপনি জেনে অবাক হবেন যে, গত ১৫ বছর ধরে কুর্মিটোলার ৪৫০০ সদস্যের বায়ো-ডাটা/প্রোফাইল এবং আর্মি গলফ ক্লাবের ৩৩০০ সদস্যের বায়োডাটা/প্রোফাইল তদারকি করছেন ভারতীয় হাইকমিশনের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ২ জন কর্মচারী। কেজিসিতে “উ” অদ্যাক্ষরের এবং এজিসিতে “সু” অদ্যাক্ষরের এই ২ জন কর্মচারী দেশের শীর্ষ সামরিক জেনারেল, বেসামরিক আমলাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ-অতি গুরুত্বপূর্ণ ৫ হাজার মানুষের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত সকল তথ্যে প্রবেশাধিকার রয়েছে এই কর্মীদের।
যদিও ক্লাবগুলোকে আমাদের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা যেমন DGFI, মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স, ASU, NSI, সার্বক্ষনিক নজরদারীতে রাখছে কিন্তু তাদের কর্মকান্ড কেবল ক্লাবের ভেতরে কারা আসছেন আর যাচ্ছেন এ সকল তথ্য রেকর্ড করার মধ্যেই সীমিত।
ক্লাব ঘিরে সাবেক জেনারেল আজিজের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি
সাধারণ সদস্যদের বাইপাস করার জন্য ‘এজিএম’ না করা এবং দুর্নীতি— এসব গলফ ক্লাবে দীর্ঘদিন ধরেই স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। এক্সিকিউটিভ পদে কোর্সমেট বা ঘনিষ্ঠ সহযোগী/ইউনিট অফিসার নিয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য গলফক্লাবগুলো ব্যবহার করার প্রবণতা শুরু হয়েছিল সাবেক সেনা প্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়ার হাত ধরে, তিনিই প্রথমে তার ইউনিট অফিসার ব্রিগেডিয়ার কবির (অব.) কে গলফ ক্লাবের সিইও হিসেবে নিয়োগ করেন, পরবর্তীতে আরেক সেনা প্রধান জেনারেল বেলাল তার কোর্সমেট ব্রিগেডিয়ার ওবায়দুল্লাহ (অব.) এবং আত্মীয় ব্রিগেডিয়ার শামসকে (অব.) ক্লাব প্রশাসনে বসিয়ে আরো একধাপ এগিয়ে যান।
আর জেনারেল আজিজ সেসব সীমা অতিক্রম করে ক্লাব এবং ফেডারেশনের সমস্ত নির্বাহীকে তার কোর্সমেট এবং নিকটাত্মীয়দের দ্বারা প্রতিস্থাপন করার আয়োজন করেন। সে জন্য তিনি নিয়ম পরিবর্তন করে সব গল্ফ ক্লাবকে সরাসরি আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের বেতন স্কেলের আওতায় নিয়ে আসেন।
তিনি ৮ লং কোর্সের ব্রিগেডিয়ার হামিদকে (অব.) সিইও হিসেবে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল বারীকে (অব.) গলফ ফেডারেশনের সমন্বয়কারী হিসেবে, মেজর মোর্শেদকে (অব.) গলফ একাডেমির পরিচালক হিসেবে, ব্রিগেডিয়ার আহসানকে (অব.) পেশাদার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগদেন।
সন্ত্রাসী হারিসের মেয়ের শ্বশুর উইং কমান্ডার নাঈম (অব.) এবং মেজর মোহাইমান (অব.) ছাড়া আজিজ কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত সকলেই এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে আছেন।
বর্তমান পরিস্থিতি
বর্তমান সেনা প্রধানও অতীতের প্রথা অনুসরণ করেছেন। তার কোর্সমেট লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইদুর( অব.) কে জিএম এবং আত্মীয় ও ইউনিট অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার(অব.) কে কুর্মিটোলার আরেক জিএম হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছেন। মজার কথা হলো তিনি ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে সিইওর পদটি খালি রেখেছিলেন শুধুমাত্র তার কোর্সমেট কর্ণেল শাহনূর (অব.) এর জন্যে, যিনি সুদূর কানাডা থেকে ফিরে এসেছেন।
যদিও তিনি ঘরোয়া পরিবেশে সিনিয়র অফিসারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেনাপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর জেনারেল আজিজের মতো তার কোর্স মেট, আত্মীয় বা ইউনিট অফিসারদের নিয়ে নেপোটিজম করবেন না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তিনি ক্রমশ জেনারেল আজিজকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান (অব.) যিনি জেনারেল আজিজের একজন কোর্সমেট, এবং ‘আর্মি গলফ ক্লাব’ এবং ‘প্রফেশনাল গলফ অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রধান ছিলেন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল বারী (অব.) দীর্ঘ ৮ বছর ধরে একই পদে দায়িত্ব পালন করছেন কারন তারা ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকেই বর্তমান সেনা প্রধানের-সহপাঠী।
এছাড়াও সাবেক জেনারেল আজিজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং কোর্সমেট মেজর মোরশেদ (অব.) গলফ একাডেমির বেতনভুক্ত পরিচালক হিসেবে এখনো দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি তিনি একজন কোরিয়ান গলফার-ব্যবসায়ীক কাছ থেকে কেজিসিতে ০২টি গলফ শপ ছিনিয়ে নিয়েছেন, বর্তমানে তিনি ভারতীয় গোয়েন্দাদের পরামর্শে চীনা গোয়েন্দাদের জন্য কাজ করছেন বলে জানা গেছে। মেজর মোর্শেদ অবসরে যাবার পরও ডিজিএফআই-এর সাথে চুক্তি ভিত্তিক কাজ করেছেন।
গলফ ক্লাব বিনোদন এবং গলফের প্রশাসন
শুধু গলফ কোর্সের জমি সেনাবাহিনীর (সরকারি জমি) হওয়ার কারণে সমস্ত গলফ ক্লাব সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত হয়। বর্তমানে, কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব (মেজর জেনারেল জহির), আর্মি গলফ ক্লাব (মেজর জেনারেল মুশফিক), গলফ একাডেমি (ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হেনা), ভাটিয়ারি গলফ ক্লাব (মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদিন) বছরের পর বছর ধরে এমন সব সামরিক কর্মকর্তার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে যারা কখনোই গলফ খেলেননি। আর সেকারণেই তারা বিনোদন মূলক গলফ আয়োজন করে সেনা প্রধানকে খুশি করায় বেশি ঝুঁকে পরছেন। অতীতের মতো গল্ফ প্রশাসনও ক্লাব টুর্নামেন্টের আয়োজন করে শীর্ষ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের খুশি করতে ব্যস্ত, প্রতি বছর অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত, ক্লাবগুলো প্রায় প্রতি সপ্তাহে মনোরঞ্জনের জন্য হাস্যকর সব টুর্নামেন্টের আয়োজন করে, যার পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠানগুলো, প্রতিটি টুর্নামেন্টের পেছনে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা, যোগান দেন পৃষ্ঠপোষকরা। আর এসব আয়োজনের ফলে পেশাদার গলফারদের খেলার খুব বেশী একটা সুযোগ থাকেনা এবং জাতীয় স্বার্থে এসব টুর্নামেন্ট কোনোই ভূমিকা রাখেনা।
ক্লাব সদস্যদের অসন্তোষ
যুগ্ম-সচিব এবং তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার সামরিক, বেসামরিক আমলা, বিচারপতি, এমপি, মন্ত্রীদের নামমাত্র ফি দিয়ে এসব ক্লাবের সদস্য করা হয়। যেখানে যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার কম এবং বেসামরিক ব্যবসায়ী বা যে কোনো বেসামরিক ব্যক্তিকে সদস্য হওয়ার জন্য কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা করে দিতে হয়!
উচ্চ এন্ট্রি ফি এবং প্লেয়িং চার্জ দেওয়ার পরেও সাধারণ ক্লাব সদস্যরা অত্যন্ত অবহেলিত এবং সাধারণত সমস্ত কার্যক্রম থেকে তাদের বাইরে রাখা হয়। গত ১৫ বছর ধরে কোনো এজিএমের আয়োজন করা হয়নি। এতে করে সাধারণ সদস্যদের কোনো বক্তব্য থাকে না, তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে জানার সুযোগ পান না।
সামরিক জেনারেলদের দ্বারা নিযুক্ত তথাকথিত ক্লাব নির্বাহীরা নিজেদের ক্লাবগুলোর মালিক বলে মনে করে থাকেন।
সমৃদ্ধ তহবিল
স্বাভাবিকভাবেই এই ক্লাবগুলো খুবই সমৃদ্ধ, আয়ের উৎস প্রচুর, উচ্চ মেম্বারশিপ ফি, প্রতিদিনের খেলার চার্জ, হল রুম ভাড়া, রেস্তোরাঁ, বিল বোর্ডের ভাড়া ইত্যাদি সমৃদ্ধ আয়ের মূল উৎস। এই আয় সদস্যদের কল্যাণে বা ক্লাব টুর্নামেন্ট পরিচালনার জন্য ব্যয় তো করা হয়ই না, বরং ক্লাব টুর্নামেন্টের মতো ইভেন্টের স্পনসর হওয়ার জন্য বড়বড় ব্যবসায়ীদের ধরা হয়। ফলে এই বিপুল আয় বা তহবিল অব্যবহৃত থেকে যায়। এজিএম না হওয়ায় এসব ক্লাবগুলোর আয়-ব্যায়ের হিসেবও কখনও সাধারন সদস্যদের জানানো হয়না। স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্যে গলফ ক্লাবগুলোর আভ্যন্তরীন অডিট প্রতিবেদন সকল সদস্যের কাছে উন্মুক্ত করা অতি জরুরী।
বিশেষ গোয়েন্দা সুত্রটি আরো জানায়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় নিয়োজিত মেজর শোয়েব (অব.) এবং উইং কমান্ডার মামুন (অব.)- কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব পুনঃ নির্মানের কাজ পেয়ে ক্লাব তহবিলের প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যায় করেন। বর্তমানে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের তহবিলে কমপক্ষে ৬০ কোটি এবং আর্মি গলফ ক্লাবের প্রায় ১০০ কোটি টাকার তহবিল রয়েছে।
দেশের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা গলফ ক্লাব গুলোতে সময় কাটান, এবং সুযোগ সন্ধানী চক্র তা কাজে লাগিয়ে ক্লাব গুলোতে বিভিন্ন রকমের দূর্নীতি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার টোপ ফেলছে। নিরপেক্ষ পরিচালনা পর্ষদ ও দেশীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের অবাধে তথ্য সংগ্রহের সুযোগ দিলে তা দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্যে সহায়ক হবে। এ ছাড়াও সরকারি অডিট কমিটি গঠন করে ক্লাব গুলার আয়-ব্যয়ে জবাবদিহীতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, এবং ক্লাব গুলোকে রাজস্বের আওতায় আনলে রাষ্ট্রও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে। এবং সর্বপরি পেশাদার গলফার তেরী করতে ক্লাবগুলাকে ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের অধীনে নেয়ার বিষয়টিও ভেবে দেখা উচিত।
জুলকারনাইন সায়ের (সামি), অনুসন্ধানী সাংবাদিক
আপনার মতামত জানানঃ