জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন কিনা বা কি ব্যবহার করেন? এরকম কিছু প্রশ্ন নিয়ে ঢাকায় বেশ কিছু পুরুষদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে নাম ও পরিচয় প্রকাশ করতে চাইলেন না বেশিরভাগই। বনানী এলাকায় একজন গাড়ি চালকের সাথে কথা হচ্ছিলো।
তিনি বলছেন, “আমার ওয়াইফই তো খায়, কি যেনও বলে, বড়ি খায়। আর আমার কোন পদ্ধতি নাই। আমি কোন পদ্ধতি নেই নাই। আমার ওয়াইফই ব্যবহার করে।”
আরও কয়েকজনের সাথে কথা হচ্ছিলো। যাদের বেশিরভাগই বললেন জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি ব্যবহারের মুল দায়িত্ব নারীদেরই।
ঢাকায় একটি আবাসিক ভবনের নিরাপত্তারক্ষী আতোয়ার হোসেন। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে পুরুষের দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে চাইলে প্রথমেই শব্দ করে হেসে উঠলেন। তিনি বলছেন, “পদ্ধতি ব্যবহার এগুলো মহিলাদের দায়িত্ব। তাকেই সবকিছু মেইনটেইন করতে হবে। মহিলার দায়িত্ব কারণ তার কাছেই তো সব কিছু। সেইতো গর্ভবতী হয়।”
পুরুষদের জন্য কি পদ্ধতি আছে সে সম্পর্কে আপনি কি জানেন, সে সম্পর্কে মোহাম্মদ জহির নামে একজন বলছেন, “পুরুষদের জন্য কনডম আছে…….এরপর……আমি এছাড়া আমি কিছু জানি না।”
আপনি কোন পদ্ধতি ব্যবহার করেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার এক মুদি দোকানি বললেন, “না……আমার ম্যাডামে (স্ত্রী) কি যেন বড়ি ব্যবহার করে। আমি বলতে পারলাম না।”
সব দায়িত্ব যেন নারীদের
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে ৯৮ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন নারীরা। দেশের ২৬ টি উপজেলায় করোনাকালীন সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে চালানো গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি ব্যবহার করেন মূলত নারীরা। বাংলাদেশে সরকারিভাবে পরিবার পরিকল্পনার যেসব পদ্ধতি সম্পর্কে প্রচারণা চালানো হয় তার মধ্যে দুটি বাদে বাকি সবগুলো নারীদের জন্য।
যার প্রায় সবগুলোরই কোন না কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যা নারীকেই সহ্য করতে হয়। বিশ্বের ঔষধ কোম্পানিগুলোও জন্ম নিয়ন্ত্রণের যেসব পদ্ধতিতে বিনিয়োগ ও গবেষণা চালায়, তাও মূলত নারীদের জন্য। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের বোঝা শুধু নারীর উপরেই রয়ে গেছে।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার শিকার নারীরা
ঢাকার বাসিন্দা সিরাজুম মুনিরা বছর কয়েক হল বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর একটি বাচ্চাও হয়েছে। এরপর চাকুরীজীবী স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপাতত একটু বিরতি দেবেন।
সিরাজুম মুনিরা বলছেন, চিকিৎসকের কাছে গেলে তাকে তিন মাস পরপর নিতে হয় এমন একটি ইনজেকশনের পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু সেটি যখন নেয়া শুরু করেন তারপর থেকে নানা রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সহ্য করতে হচ্ছে তাকে।
তিনি বলছেন, “যেমন এখন আমি অনেক মোটা হয়ে গেছি। পেটটা ফুলে গেছে। পেটে ব্যথা করে অনেক। আর ইনজেকশনটা নেবার কারণে যখন ওটার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তখন টানা পনের-কুড়ি দিন মাসিক চলতে থাকে। বন্ধ হতে চায় না। আমি হাসপাতালে যাওয়ার পর ডাক্তার আপা আমাকে বলেছে ইনজেকশন নেবার কারণে এরকম হচ্ছে। পেটে চর্বি জমে গেছে তাই পেট মোটা লাগে। আগে পিল খাইতাম। খাইলে বমি হবেই। পিল এখন দেখলেও বমি আসে।”
পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
নারীর যেমন ভূমিকা থাকে, তেমনি পুরুষেরও ভূমিকা থাকে অনেক। জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে। এর মধ্যে নারীর পাশাপাশি পুরুষদের জন্যও রয়েছে কিছু পদ্ধতি।
পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে কথা হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজলের সঙ্গে। তিনি বলেন, নারীর পাশাপাশি পুরুষেরও বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি রয়েছে। পুরুষের জন্য স্বল্পমেয়াদে কনডম এবং দীর্ঘমেয়াদে ভ্যাসেকটমি পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে।
ভ্যাসেকটমি পদ্ধতি সম্পর্কে রেজাউল করিম কাজল বলেন, ভ্যাসেকটমি পদ্ধতি হলো পুরুষের শুক্রকীটবাহী নালি কেটে দেওয়া। এটি মাত্র পাঁচ মিনিটে করা সম্ভব।
এই পদ্ধতি গ্রহণে কোনো সমস্যা হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, এই পদ্ধতি গ্রহণে সাধারণত স্বাভাবিক কাজকর্ম, যৌনমিলন বা যৌন আকাঙ্ক্ষার কোনো পরিবর্তন হয় না।
তাই ভীতি ছাড়া এসব পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দেন তিনি।
এসডব্লিউ/এসএস/০৮১৩
আপনার মতামত জানানঃ