বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে না নামলেও পশ্চিমা শক্তিগুলো একজোট হয়ে কূটনৈতিক ও বাণিজ্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই পারমাণবিক হামলার কথা আলোচনায় এলেও এখন সেসব ছাপিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সাইবার যুদ্ধ।
জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া যখন ইউক্রেন আক্রমণ করে তখন জার্মানির বায়ুবিদ্যুৎ টার্বাইন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনারকনের কর্মীরা দেখলেন তারা তাদের উইন্ডমিলগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। পরে তারা বুঝতে পারলেন এটা একটা সাইবার আক্রমণের কারণে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট কোম্পানি ভায়াস্যাটের সিস্টেমে কেউ আক্রমণ করেছে এবং ইউরোপজুড়ে অনেকগুলো মডেম বন্ধ করে দিয়েছে। এতেই বিপদে পড়ে এনারকন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে প্রযুক্তি অবকাঠামোর অনেকগুলো অদৃশ্য স্তর আছে, যেগুলো বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিগুলোকে যুক্ত রাখে, যার ফলে আমরা কত সহজে সাইবার আক্রমণের মুখোমুখি হতে পারি।
এ অবস্থায় জার্মান সরকার তাদের সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে। বর্তমান জোট সরকারের এটা একটা এজেন্ডা। তারা যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পুরো সিস্টেমকে আধুনিকায়ন করা এবং একটা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা যারা জার্মানির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠানকে বলবে কীভাবে তারা তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে পারে।
এক বছর আগে আরেকটি ঘটনা সবার চোখ কপালে তুলেছে। জার্মানির গ্রামীন শহর আনহাল্ট-বিটারফেল্ডকে কয়েক সপ্তাহ ধরে প্যারালাইজড করে দেয়া হয়েছিল। পুরো শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়া ঘটনাটি জার্মানিকে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাইবার আক্রমণের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। শুনতে খারাপ শোনালেও পুরো জার্মানির অবস্থা আনহাল্ট-বিটারফেল্ডের মতো হতে পারত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা ভালো যে জার্মানি তাদের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করছে। কিন্তু তাদের নিজেদের সীমানার বাইরেও চোখ রাখতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য একটি সমন্বিত সাইবার ইউনিট গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বটে।
এর বাইরেও এই ব্লকের দেশগুলোকে বিশ্বে তাদের অন্য মিত্র দেশগুলোর সঙ্গেও সহযোগিতা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
২০১৫ সালে রাশিয়ার হ্যাকারদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ গ্রিড ব্যবস্থায় সাইবার হামলার অভিযোগ ওঠে। এর প্রায় দুই বছর পর ইউক্রেনের একটি অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে কুখ্যাত ‘নোটপেটিয়া’ (NotPetya) ম্যালওয়্যার ছড়ানোর অভিযোগ উঠে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। এই ম্যালওয়্যার খুব দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়।
নোটপেটিয়া হামলার পর বলা হচ্ছিল ইউক্রেন রাশিয়ার সাইবার যুদ্ধের ‘পরীক্ষার ক্ষেত্র’। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনের সরকারি দপ্তর ও বিভিন্ন সংস্থাকে লক্ষ্য করে সাইবার হামলা হয়। ইউক্রেনও রাশিয়ার বিভিন্ন ওয়েবসাইটে হামলা চালায়। এই যুদ্ধে পাশ্চাত্যের দেশগুলো ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ায় বিশ্বব্যাপী একটি সাইবার যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০২৮
আপনার মতামত জানানঃ