এই বিশাল মহাবিশ্বের সীমা মানুষের অজানা। মানুষ যখন মহাবিশ্বের বিশালতার বিষয়ে ধারণা লাভ করতে পেরেছে, তখন একটি মৌলিক প্রশ্ন দাঁড়িয়ে গেছে, মহাবিশ্বে আমরা কী একা? আর এই উত্তর খুঁজতে দর্শনের পাশাপাশি মানুষ এখন দ্বারস্থ হচ্ছে বিজ্ঞানেরও।
এর উত্তর খুঁজতে আমাদের চেনা পৃথিবীর বাইরে বহির্জাগতিক প্রাণের সন্ধানের জন্য আস্ত একটি রেডিও টেলিস্কোপ বসিয়েছে চীন। আর সেই টেলিস্কোপেই ধরা পড়েছে রহস্যজনক সংকেত। চীন বলছে, পৃথিবীর বাইরে প্রাণের প্রমাণ তারা সম্ভবত পেয়ে গেছে।
চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের দৈত্যাকার স্কাই আই টেলিস্কোপ পৃথিবীর বাইরে জীবনের চিহ্নের সন্ধান পেয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, পৃথিবীর বাইরের সভ্যতা অনুসন্ধান দলের প্রধান বিজ্ঞানী ঝাং টঞ্জি বলেছেন, সন্দেহজনক সংকেতগুলো রেডিও হস্তক্ষেপও হতে পারে এবং এর জন্য আরও তদন্তের প্রয়োজন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, দৈনিকটি পরে এ-সংক্রান্ত সব প্রতিবেদন এবং পোস্টগুলো মুছে ফেলে।
তবে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দৈনিক থেকে কেন প্রতিবেদনটি সরিয়ে দেয়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
খবরটি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েবুতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবরটি চলে এসেছে।
স্কাই আই বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেডিও টেলিস্কোপ। এটি ন্যারো-ব্যান্ড ইলেকট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যালে কাজ করে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে বহির্জাগতিক প্রাণের অনুসন্ধান শুরু করে স্কাই আই। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম গুইঝো প্রদেশে এর অবস্থান। টেলিস্কোপটির ব্যাস ৫০০ মিটার (১ হাজার ৬৪০ ফুট)।
ঝাংয়ের মতে, কম ফ্রিকোয়েন্সির এই রেডিও ব্যান্ড টেলিস্কোপ স্কাই আই অত্যন্ত সংবেদনশীল। বহির্জাগতিক প্রাণের সন্ধানে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এখনও এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্ব নিয়ে ধোঁয়াশায় বিজ্ঞানীরা। তবে কোনো কোনো মহাকাশবিজ্ঞানী এলিয়েনের অস্তিত্ব ধরে নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাদের একটি অংশ মনে করছেন, অনেকগুলো গ্রহ থেকে পৃথিবীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারে এলিয়েনরা। এমন ২৯টি গ্রহ চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
মহাকাশবিজ্ঞানীদের হিসাব বলছে, প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে বা বাসযোগ্য এই গ্রহগুলো থেকে পৃথিবীর কক্ষপথ দেখা সম্ভব। এমনকি মানুষের তারবিহীন যোগাযোগে অনুপ্রবেশ করাও সম্ভব।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, পৃথিবীর ওপর নজরদারি সম্ভব, এমন কয়েকটি সৌরজগতের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
তারা ধরে নিয়েছেন, সেসব সৌরজগতে প্রাণের অস্তিত্ব আছে। এ ধারণাকে কেন্দ্র করে সৌরজগতগুলোর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা বিশেষ কিছু গ্রহও চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারে বুধবার প্রকাশ হয় মূল গবেষণা প্রতিবেদনটি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সত্যিই এলিয়েন থাকলে অবস্থানগত সুবিধার কারণে গ্রহগুলো থেকে তারা পৃথিবীতে প্রাণের চিহ্ন শনাক্ত করতে পারে।
ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার গায়া ক্যাটালগ বিশ্লেষণ করেছেন নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটির কার্ল সাগান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও মহাকাশবিজ্ঞানের অধ্যাপক লিসা কাল্টেনেগার এবং আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রির জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. জ্যাকি ফাহের্টি।
তারা পৃথিবীর ৩২৬ আলোকবর্ষের মধ্যে অবস্থিত ২ হাজার ৩৪টি সৌরজগৎ চিহ্নিত করেছেন, যেগুলো থেকে পৃথিবীর অস্তিত্ব বোঝা সম্ভব।
চেনা সৌরজগতের বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে এমন ১ হাজার ৭১৫টি সৌরজগৎ আলাদাভাবে চিহ্নিত করেছেন তারা।
বিজ্ঞানীদের মতে, এলিয়েনের ধারণা বাস্তব হলে দেড় হাজারের বেশি সৌরজগতের কোনোটি থেকে হয়তো গত ৫ হাজার বছরের কোনো সময় পৃথিবীকে সূর্যের ধারেকাছে আবিষ্কার করেছে ভিনগ্রহের প্রাণীরা। আবার পৃথিবীর কক্ষপথ শনাক্ত সম্ভব এসব সৌরজগতের মধ্যে এমন ৪৬টি আছে, যেগুলোতে মানুষের অস্তিত্ব চিহ্নিত করার মতো পর্যাপ্ত গ্রহ আছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত প্রায় ১০০ বছর ধরে তথ্য আদান-প্রদানে রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেটসহ তারবিহীন যোগাযোগের অনেক পথ তৈরি করেছে মানুষ।
এই ৪৬ সৌরজগতের বিশেষ কিছু গ্রহ থেকে এলিয়েনদের পক্ষে মানুষের এই তারবিহীন যোগাযোগে সহজেই আড়ি পাতা সম্ভব।
গবেষকদের মতে, রস ১২৮, ট্র্যাপিস্টসহ এ ধরনের গ্রহের সংখ্যা ২৯টি।
লিসা কাল্টেনেগার বলেন, ‘গ্রহ আবিষ্কারের একটা উপায় হলো বিভিন্ন তারা থেকে পৃথিবীর দিকে আলো আসার কোনো পথ বন্ধ বলে বোঝা যাওয়া।’
শক্তিশালী অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পৃথিবীর সৌরজগতের বাইরে হাজার হাজার গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এগুলোর ৭০ শতাংশই আবিষ্কৃত হয়েছে এমন সময়, যখন সেসব গ্রহ নিজেদের সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় পৃথিবীতে আলো পৌঁছানোর পথে বাধা দিয়েছে।
মূলত এ রকম গ্রহগুলোর মধ্যে পৃথিবীকে সহজে লক্ষ্য করার মতো অবস্থানে কোনগুলো আছে, সেগুলো শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৫৮
আপনার মতামত জানানঃ