কয়েকমাসের রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর রেকর্ড শাসনাবসানের একবছর পরই পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে ইসরায়েলে ভঙ্গুর ক্ষমতাসীন জোট সরকার।
ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যেই অস্তিত্ব সংকটে পড়ে টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে ইসরায়েলের জোট সরকার। খবর প্রকাশ করেছে আলজাজিরা ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সম্প্রতি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে মৌলিক কিছু আইন পাসে ব্যর্থ হন ইসরায়েলের ক্ষমতাসীনরা। মূলত এ কারণেই পতনের মুখে আছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদের নেতৃত্বধীন জোট সরকার।
আগামী কয়েকমাসের মধ্যেই ইসরায়েলে আগাম নির্বাচনের পট প্রস্তুত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রোববার সরকার টিকিয়ে রাখতে লড়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন বেনেট এবং লাপিদ দুইজনই।
সরকারের কিছু অর্জনও তুলে ধরেছেন তারা। এর মধ্যে আছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানো এবং বাজেট ঘাটতি দূর করাসহ আরও কিছু বিষয়।
মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকের শুরুতে বেনেট বলেছেন, ‘আমরা জাতীয় পরিত্রাণের সরকার প্রতিষ্ঠার একবছর পালন করছি। যে কোনও সৎ মানুষই একথা স্বীকার করবে যে, এই সরকার দেশের সবচেয়ে ভাল সরকারগুলোর অন্যতম। নেসেটে এযাবৎকালের সবচেয়ে কঠিন একটি জোটের ওপর এ সরকার নির্ভর করে আছে’।
‘আমরা আশাহত হব না এবং ভেঙেও পড়ব না,’ বলেন তিনি।
জোট সরকারে সংকট বাড়ছে। ফলে সামনের মাসগুলোতে যে কোনো সময় আবারও আগাম ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তারা সরকার ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বাজেট ঘাটতি কমাতে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী বেনেট উদারপন্থী এবং আরব মুসলিম পার্টির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে মৌলিক কিছু আইন পাসে ব্যর্থ হন ইসরায়েলের ক্ষমতাসীনরা। মূলত এ কারণেই পতনের মুখে আছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদের নেতৃত্বধীন জোট সরকার।
ইসরায়েলে দুই বছরের মধ্যে চতুর্থ নির্বাচনের পর ৫০ বছর বয়সী বেনেট এবং ৫৮ বছর বয়সী লাপিদ গত বছর জুনে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ১২ বছরের প্রধানমন্ত্রীত্বের অবসান ঘটিয়ে এই জোট সরকার গঠন করেন। এ জোটে আছে ডানপন্থী, মধ্যপন্থিরাসহ মুসলিম আরব দলগুলো। বেশ কিছু ছোট ও মাঝারি দলও জোটে শরিক হয়েছে। এর মধ্যে আছে ইসরায়েলের ২১ শতাংশ আরব সংখ্যালঘুর প্রতিনিধিত্বকারী দল দ্য ইউনাইটেড আরব লিস্ট। প্রথম বারের মতো এরা ইসরায়েলের ক্ষমতার অংশ হয়েছে।
এই বিভিন্ন দল জোটভুক্ত হয়ে নেতানিয়াহুকে সরিয়ে সরকারে আসতে পারলেও দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখার মতো যথেষ্ট শক্তিমত্তার প্রমাণ দিতে পারেনি।
তাই পার্লামেন্টে যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের মতো প্রধান বিষয়গুলোতে গভীর মতবিভেদ নিয়ে এই জোট সরকার আর ঐক্য ধরে রাখতে পারছে না। ফলে পতন এখন অনিবার্য হয়ে উঠেছে, বলছেন বিশ্লেষকরা।
গত বছরই বেনেট তার ডানপন্থী ইয়ামিনা জোটের দুই সদস্যের সমর্থন হারিয়ে পার্লামেন্ট নেসেটের ১২০ আইনপ্রণেতার মধ্যে মাত্র ৬০ জনের সমর্থন ধরে রাখতে পেরেছিলেন। এখন আবার আরেক সদস্যের সমর্থন হারাতে চলেছেন তিনি। আবার গত মার্চে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ নেসেটে ইসরায়েল আরব সংখ্যালঘু দলের দুই সদস্যের সমর্থন টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন।
সমর্থন ধরে রাখা নিয়ে এই সংগ্রামের কারণে বেনেট সরকার গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে পার্লামেন্টের ভোটে পরাজিত হচ্ছে। অতিসম্প্রতি অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের আইনি সুরক্ষা বিল (সেটলার আইন) সংক্রান্ত ভোটাভুটিতে হেরে পতনের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে জোট সরকার।
এ ভোটই প্রমাণ করেছে নতুন সরকার কতটা ভঙ্গুর। পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের জন্য বেসামরিক আইনি অধিকার নবায়ন বিলের প্রথম পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে। বিলটি পাসের পদক্ষেপ হয়ত আবার নেওয়া হবে এবং চূড়ান্তভাবে এটি পাসে ব্যর্থ হলে জোটের পতন ঘটে যেতে পারে।
সেক্ষেত্রে ডিসেম্বর কিংবা এপ্রিলের মধ্যেই ইসরায়েলে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন নেতৃস্থানীয় এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি বলেন, ইসরায়েল সরকার ‘হাতে সময় পাওয়ার জন্য এখন কেবল সময়ক্ষেপণ করছে’।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪৮
আপনার মতামত জানানঃ