আণবিক জীববিজ্ঞানের গবেষক ডেভিড সিঙ্কলেয়ারের নেতৃত্বে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক দল গবেষক পরীক্ষাগারে কমিয়ে দিয়েছেন একটি ইঁদুরের বয়স।
বিজ্ঞানীদের দাবি, কিছু বিশেষ ধরনের প্রোটিন পূর্ণবয়স্ক কোষকে পুনরায় স্টেম সেলে রূপান্তরিত করতে পারে। এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়েই ২০২০ সালে একটি ইঁদুরের চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে সমর্থ হন তারা।
বার্ধক্যজনিত কারণে ওই ইঁদুরটির রেটিনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু বিজ্ঞানীরা ওই রেটিনার কোষগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সমর্থ হন।
কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য পেরিয়ে সকলকেই হাজির হতে হয় মৃত্যুর দোরগোড়ায়। কিন্তু এই সময়ের প্রবাহই যদি উল্টে দেওয়া যায়? সম্প্রতি এমনটাই করে দেখালেন হার্ভার্ডের গবেষকরা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এবার বয়ঃবৃদ্ধির শারীরিক ঘড়িকে উল্টোমুখে চালনা করলেন তাঁরা।
আজ থেকে প্রায় দু-দশক আগের কথা। মলিকিউলার বায়োলজিস্ট ডেভিড সিনক্লেয়ারের তত্ত্বাবধানে হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলে শুরু হয়েছিল সংশ্লিষ্ট গবেষণাটি। মৃত কোষের পুনরুৎপাদন এবং বার্ধক্য প্রতিরোধই ছিল এই গবেষণার মূল লক্ষ্য। ২০২০ সালে প্রথম সাফল্য পান ডেভিড সিনক্লেয়ার।
দৃষ্টিহীন এক ইঁদুরের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয় তার এই গবেষণা। সে-বছর ‘নেচার’ পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছিল এই গবেষণাপত্রটি। এবার বয়ঃবৃদ্ধি ঠেকানোর রাস্তা দেখালেন তিনি। পরীক্ষামূলকভাবে সফলও হল সেই প্রকল্প। কিন্তু কীভাবে কাজ করে এই বিশেষ প্রযুক্তি?
২০০৭ সালে পূর্ণবয়স্ক মানব কোশ থেকে স্টেম সেল বা ভ্রুণ কোশ তৈরি করে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন জাপানি চিকিৎসক ডঃ শিনিয়া ইয়ামানাকা। তার আবিষ্কৃত ‘হিউম্যান সেল রিপ্রোগ্রামিং’-এর প্রযুক্তিই সাম্প্রতিক গবেষণার মূলমন্ত্র। তবে সেই প্রযুক্তিতে বেশ কিছু বদল এনেছেন হার্ভার্ডের চিকিৎসক।
ইয়ামানাকার তৈরি ভ্রুণ কোশ নষ্ট হয়ে যাওয়া কলাতন্ত্রের পুনরুৎপাদনে সক্ষম হলেও, একটি বিশেষ অসুবিধা ছিল তাতে। আর তা হল, তথ্য সঞ্চয়। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে, অর্থাৎ বার্ধক্যের সঙ্গে মানবদেহের প্রতিটি কোশের মধ্যেই সঞ্চিত হয় বহু তথ্য। ইয়ামানাকার ভ্রুণ কোশের ব্যবহারে জেনেটিক পুনর্গঠন হয় বলে, হারিয়ে যায় সেই সমস্ত তথ্যই। ফলে, স্নায়ু কোশের পুনরুৎপাদন সম্ভব হলেও, তার ব্যবহারে স্মৃতি লোপ পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে প্রবল।
ইয়ামানাকার এই প্রযুক্তির তিনটি ফ্যাক্টর অপরিবর্তিত রেখে একটি ফ্যাক্টর বদলে ফেলেন হার্ভার্ডের গবেষকরা। তারপর সেই স্টেম কোশের জিন নিষ্ক্রিয় ভাইরাসের মধ্যে আবদ্ধ করে, ইনজেক্ট করেন ইঁদুরের দেহে। ম্যাজিক খেলে যায় সেখানেই।
যেকোনো প্রাণীর রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাই আক্রমণ করে থাকে কোনো বহিরাগত ভাইরাসকে। এক্ষেত্রেও অন্যথা হয়নি তার। স্বাভাবিক নিয়মেই এই বিশেষ জিনের অনুলিপি তৈরি করে ইঁদুরের প্রতিরোধী ক্ষমতা। আর তার দৌলতেই বয়স কমে ইঁদুরের। বার্ধক্যে পৌঁছানোর পরেও নতুন করে শুরু হয় নিউরোনের পুনরুৎপাদন।
তবে তারপরেও লোপ পায়নি তার স্মৃতি। কেননা, এই প্রযুক্তি কেবলমাত্র ত্বরান্বিত করে দেহে অবশিষ্ট কোশের বিভাজন প্রক্রিয়াকে। বাড়িয়ে দেয় আয়ু। নতুন কোশের জন্মের ফলে যেমন তারুণ্য ফিরে আসে, তেমনই কমে যায় রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও।
ডঃ সিনক্লেয়ারের বিশ্বাস, এই গবেষণা একইভাবে কাজ করবে মানুষের শরীরেও। তবে সেই বাজারে সেই প্রযুক্তি আসতে ঢের বাকি এখনও। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরও এই প্রযুক্তিতে আদৌ ফেডারেশন ছাড়পত্র দেবে কিনা, তা নিয়ে থেকেই যায় সন্দেহ। তবে এই আবিষ্কার যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন দরজা খুলে দিল, তা নিয়ে নতুন করে বলার নেই কিছুই।
এসডব্লিউ/এসএস/২০৩০
আপনার মতামত জানানঃ