ঢাকা মহানগর দক্ষিণে যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট দুদকের মামলাসহ তার বিরুদ্ধে করা সব মামলায় জামিন পেয়েছেন। তবে বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএসএমইউ) চিকিৎসাধীন। এখান থেকেই জামিনে মুক্তি পাবেন তিনি।
বুধবার ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
অন্য মামলাগুলোতে আগেই জামিন পেয়েছিলেন সম্রাট। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মানি লন্ডারিং, অস্ত্র ও মাদক মামলায় আদালত তাকে জামিন দিয়েছিলেন। আজকের মামলায় জামিনের মধ্য দিয়ে সব মামলায় জামিন পেলেন সম্রাট। এর ফলে তার কারামুক্তিতে বাধা নেই।
সম্রাটের আইনজীবী গাজী জিল্লুর রহমান জানান, জামিন আদেশের পর কারামুক্তিতে আর কোনো আইনি বাধা নেই।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল জানিয়েছেন, মানবিক কারণে আগামী ৯ জুন পর্যন্ত সম্রাটকে জামিন দিয়েছে আদালত। অনুমতি ছাড়া তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
সম্রাটের জামিনের বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, সম্রাট শারীরিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই বিএসএসএমইউর ডি-ব্লকের সিসিইউতে আছেন। সেখানে পুলিশের পাশাপাশি কারারক্ষী রয়েছে। সেখান থেকেই মুক্ত হবেন তিনি।
বিএসএমএমইউর দায়িত্বপ্রাপ্ত কারারক্ষী সূত্র জানায়, সম্রাটের ৪টি মামলার মধ্যে ৩টির জামিনের নথিপত্র কারাগারে এসেছে। সর্বশেষ জামিনের কাগজে এলে আমরা তাকে পুরোপুরিভাবে চিকিৎসকের হাতে হস্তান্তর করব। চিকিৎসক তাকে রিলিজ দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সম্রাটের আইনজীবী মাহবুবুল আলম দুলাল গণমাধ্যমকে জানান, তার বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। অস্ত্র, মাদক ও অর্থপাচারের মামলায় ইতোমধ্যে জামিন পেয়েছেন তিনি। কারাগারে ছিলেন দুদকের মামলায়। এ মামলায় জামিন মঞ্জুর হওয়ায় তার কারামুক্ত হতে আর কোনো বাধা নেই।
সম্রাটের পক্ষের অপর আইনজীবী মো. হাবিবুর রহমান জানান, তিন শর্তে দুদকের মামলায় সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। অসুস্থতা বিবেচনায়, বিদেশে না যাওয়া ও প্রতিটি ধার্য তারিখে হাজিরার শর্তে জামিন দিয়েছেন আদালত।
২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, সম্রাট বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত এই বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত যুবলীগের বহিষ্কৃত এই নেতার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া ছয় মাসের সাজা অনেক আগেই শেষ হয়েছে।
এর আগে গত ১১ এপ্রিল রমনা থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা এবং ১০ এপ্রিল অর্থ পাচার ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় জামিন পান সম্রাট।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তাকে নিয়ে তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।
ওই অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, পিস্তল ও বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীর চামড়া উদ্ধার করা হয়।পরে বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখার দায়ে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই দিনই সম্রাটকে কারাগারে নেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পূর্ব থেকেই ধারণা করা হয়েছিল, যে শোরগোল তুলে মামলা হলো তা সময়ের ব্যবধানে ক্রমশ বিলীন হয়ে যাবে। এখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের জন্য কাজ করে না৷ তারা ক্ষমতারই পক্ষে কাজ করে৷ শুধু মাত্র ক্ষমতার দ্বন্দ্বে তারা একটি পক্ষে সক্রিয় হয়৷ সাধারণ মানুষের জন্য নয়৷ এখানে প্রতিকার পেতে ক্ষমতা লাগে৷ যার ক্ষমতা বেশি সেই অন্যায় করে৷ অথচ আইন অন্যদের ক্ষেত্রে একদমই ভিন্ন চিত্র দেখায়।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রায়ই বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের জড়িয়ে পড়েন ক্ষ্মমতাসীনরা। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহবোধ না করায় তাদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়ে চলেছে, যার সর্বশেষ উদাহরণ সম্রাট।
তারা মনে করেন, আমাদের রাষ্ট্রে বিচারের এই বৈষম্য দূর না হলে দেশ থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অন্যায়-অপকর্ম হ্রাস পাবে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১৭
আপনার মতামত জানানঃ