একটা সময় ছিল যখন নারীদের শিক্ষা দীক্ষায় আগ্রহ দেখাতেন না অভিভাবকেরা। সেই কুসংস্কার ক্রমশ ম্লান হয়ে এখন দেশের অধিকাংশ নারীরাই শিক্ষার আওতায় চলে আসছেন। তবে নারীদের শিক্ষায় দীক্ষায় অভিভাবকেরা যে এখনো পরিপূর্ণ সচেতন এ দাবি জোর দিয়ে করা যাচ্ছে না।
অনেক নারীই এখনো শিক্ষার বাইরে থাকেন। সমাজ এবং ধর্মের যাঁতাকলে পড়ে নারীরা শিক্ষা দীক্ষায় পিছিয়ে থাকলেও নারীদের সম্ভ্রম রক্ষার বিষয়টি সবার আগে সামনে আসে। কেননা দেশে এখনো নারীরা নিরাপদ নয়। এখনো স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের বিষয়ে নারীদের রয়েছে বিস্তর প্রতিবন্ধকতা। এসব উপেক্ষা করেও যেসব অভিভাবক কন্যাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠান তাদের মনে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। রাস্তার বখাটেদের মতো এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরাও ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করে থাকেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মো. আক্তারুজ্জামান সিনবাদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তা ও ইভটিজিংয়ের অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এক লিখিত প্রতিবাদলিপিতে শিক্ষার্থীরা এ অভিযোগ করেন।
পহেলা বৈশাখের দিন মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে বুয়েটের এক শিক্ষার্থীকে এবং এর আগের রাতে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পর্বে অনুষদের আরও তিন শিক্ষার্থীকে ইভ টিজিং ও যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিটি হলেন চারুকলা অনুষদের শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক আক্তারুজ্জামান সিনবাদ।
এ দুই ঘটনায় গত ১৮ এপ্রিল শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান সঞ্জয় চক্রবর্তী ও অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তাদের বন্ধুরা।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, গত ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের দিন সকালে চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে এই শিক্ষকের দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছেন এক বুয়েট শিক্ষার্থী। মঙ্গল শোভাযাত্রার পরবর্তী মুহূর্তে চারুকলা অনুষদে অন্য বন্ধুসহ বসেছিলেন এই বুয়েট শিক্ষার্থী। এমন সময় ওই শিক্ষার্থীকে ক্রমাগত অশ্লীল মুখভঙ্গি ও বখাটের মতো শিস দিতে থাকেন চারুকলা অনুষদের এই শিক্ষক। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে তিনি হুমকি-ধমকি দিয়ে এমন আচরণের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, এই ঘটনার আগের রাতে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিপর্বে জয়নুল শিল্পকলা নিকেতন কক্ষে এই শিক্ষক চারুকলা অনুষদের তিন নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গেও বিকৃত ও অপ্রীতিকর আচরণ করেন। উল্লিখিত দুটি ঘটনার বিচার চেয়ে শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান, অনুষদের ডিন ও অনুষদের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হেনস্তার শিকার শিক্ষার্থীরা।
এমন সময় ওই শিক্ষার্থীকে ক্রমাগত অশ্লীল মুখভঙ্গি ও বখাটের মতো শিস দিতে থাকেন চারুকলা অনুষদের এই শিক্ষক। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে তিনি হুমকি-ধমকি দিয়ে এমন আচরণের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, ‘তার (আক্তারুজ্জামান সিনবাদ) অনিয়ন্ত্রিত ও বিকৃত যৌন হেনস্তায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ ও শঙ্কিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কখনোই কাম্য নয় এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের জন্য অপ্রীতিকর।’
সবশেষে প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এই ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি প্রদান করে দৃষ্টান্ত স্থাপনের দাবি জানাচ্ছেন চারুকলা অনুষদের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।’
ভুক্তভোগীদের এক বন্ধু সংবাদমাধ্যমকে জানান, মঙ্গল শোভাযাত্রার পরের ঘটনায় শুধু প্রভাষক আক্তারুজ্জামান সিনবাদ জড়িত থাকলেও আগের রাতের ঘটনায় তার সঙ্গে অনুষদের আরও দুই শিক্ষার্থী জড়িত ছিলেন। লিখিত অভিযোগে তাদের নামও উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক আখতারুজ্জামান সিনবাদ তার বিরুদ্ধে আসা এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটি সম্পূর্ণই মিথ্যা ও বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ। হয়তো তাদের কেউ উসকে দিচ্ছে। তবে এমনও হতে পারে, আমার শিক্ষকতা ও ক্যারিয়ারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এরকম ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। শিক্ষকদের যৌন লালসার শিকার হয়ে ছাত্রীরা এখন বিদ্যালয়ে পা মাড়াতে ভয় পায়। শিক্ষকদের সাথে ছাত্রছাত্রীদের স্বাভাবিক সম্পর্ক ব্যবহত হলে শিক্ষা ক্ষেত্রে যেসব অগ্রগতি সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। শিক্ষকদের এমন যৌন লালসার কারণে একদিকে যেমন শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে নারীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহে ভাটা পড়ছে বলে মনে করেন তারা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠানে সবধরনের যৌন হয়রানি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৪৪
আপনার মতামত জানানঃ