ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির মতো ঘটনায় ইমামদের সংশ্লিষ্টতা এদেশে এখন ডালভাত হয়ে গেছে। ইমামদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এ ধরণের অপরাধ প্রবণতা। এবার চাঁদপুরের মতলব উত্তরে বিয়ের প্রলোভনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে স্কুলছাত্রীকে সাত মাস ধরে ধর্ষণের অভিযোগে মাহবুব আলম নামে স্থানীয় মসজিদের এক ইমামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলার কালিপুর বাজার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মাহবুব আলম পার্শ্ববর্তী মুন্সিগঞ্জ জেলার হোগলাকান্দি গ্ৰামের আমির হোসেন মোল্লার ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করছেন মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান কামাল।
জানা যায়, উপজেলার জহিরাবাদ ইউনিয়নের সানকিভাঙ্গা গ্রামের স্কুলপড়ুয়া মেয়ের সাথে স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম মাওলানা মাহবুব আলমের (৩৫) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় সাত মাস ধরে ধর্ষণ করে আসছে। এতে ওই স্কুলছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। মেয়ের শরীরের গঠন অন্তঃসত্ত্বা দেখা দেয়ায় পরিবার থেকে চাপ দিলে সে মসজিদের ইমাম মাওলানা মাহবুব আলমের নাম বলে। এরপর থেকে মাহবুব আলম কৌশলে গা ঢাকা দেয়। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে মাহবুবকে আটক করে পুলিশ।
ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী বলেন, বিভিন্ন সময় ইমাম (মাহবুব) আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দিত। আমি বাধা দিতাম। কিন্তু সে বাধা মানতো না। একদিন মাহবুব আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে এসব কথা কোথাও জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং আমার পরিবারের বড় ধরনের ক্ষতি করার কথা বলে। তাই আমি ভয়ে কোথাও জানাতে সাহস পাইনি। সর্বশেষ আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সাথে মিলিত হয়।
কিশোরীর মা জানান, এই বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়েছে, লজ্জায় ঘর থেকে বের হতে পারি না। আমরা গরীব হওয়ার সুযোগে আমার স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। মেয়ের সর্বনাশকারী মসজিদের ইমাম মাহবুবের বিচারের দাবী জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান কামাল জানান, মঙ্গলবার রাতে উপজেলার কালিপুর বাজার থেকে ইমাম মাহবুবকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বুধবার সকালে তাকে চাঁদপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া এমন অসংখ্য ঘটনা আছে যেখানে মসজিদে আরবি পড়তে গিয়ে শিশুরা মসজিদের ইমামদের দ্বারা ধর্ষিত হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে; ঘটছে শিশু হত্যার মতো নৃশংস ঘটনাও। সাম্প্রতিক চাঞ্চল্যকর কিছু ঘটনা, প্রশাসনের তৎপরতার মুখেও লাগাম টানতে পারছে না এসব ঘটনার।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকে মনে করেন এরা আদব কায়দা শিক্ষা দেন। নৈতিকতা শিক্ষা দেন। সে কারণে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে হোক বা নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায়/মক্তবে পড়াতে দেন। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, যে নিরাপত্তার কথা ভেবে ছেলেমেয়েদের পড়াতে দেয়া হয় সেখানে আদৌ নিরাপদ নয়। দেখা যায় ছেলেরাও নিরাপদ নয় এসব তথাকথিত হুজুরদের কাছে। এটিও সমাজের বৈকল্যতা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৩২
আপনার মতামত জানানঃ