দেশের মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নির্যাতনের খবরে শিউরে উঠছে সারা দেশ। যদিও মাদ্রাসাগুলোতে ক্রমবর্ধমান এই ধর্ষণ নিয়ে মাথাব্যথা নেই সরকারের। দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সরব নয়। নেই বার্ষিক কোন প্রতিবেদন। তাই এই সব নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র থেকে যাচ্ছে অজানা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের পর শিক্ষার্থীরা লজ্জা, ভয়, নানান কিছুর কারণে তা প্রকাশ করে না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে সবথেকে কম কথা বলা হয়। এর কারণ হয়তো সেক্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক ভুক্তভোগী এবং ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মানুষের অন্ধবিশ্বাস।
মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক একের পর এক শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা মাদ্রাসা বিষয়ে দেশবাসীর নিকট এক নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হয়েছে। এরইমধ্যে শোনা গেল সাভারে এক মাদ্রাসাছাত্র ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। রোববার (০৩ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে সাভার মডেল থানায় মামলাটি করা হয়।
এর আগে শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে সাভারের রাজাশন বিরুলিয়া রোডের নূরানী তালিমুল কোরআন মাদ্রাসার আবাসাকি ভবনের দ্বিতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত শিক্ষক আলামিন হাসান সাইম ময়মনসিংহ জেলার ধুবাউড়া থানার সাতানিপাড়া গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি সাভারের রাজাশন বিরুলিয়া রোডের নূরানী তালিমুল কোরআন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মাদ্রাসার আবাসিকে থেকে আরবি বিভাগের নাজেরা শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। ওই মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে দেখাশুনা করে আসছিলেন মাওলানা আল-আমিন হাসান। শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে আবাসিকের দ্বিতীয় তলায় ওই শিক্ষার্থীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ধর্ষণ করেন। পরের দিন বাসায় ফিরে কান্নাকাটি করে পরিবারের কাছে বিষয়টি খুলে বলে ওই শিক্ষার্থী। রোববার রাতে সাভার মডেল থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সৈকত বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। একইসঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
দেশে নারীর যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের চেয়ে বেশি পরিমাণে ঘটছে মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যা। প্রায় প্রতিদিনই মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক শিশু ধর্ষণের খবর আসে। তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণে কেবল মাদ্রাসা শিক্ষককেরাই জড়িত থাকে না, মাদ্রাসার বড় ভাইদেরও লালসার শিকার হন মাদ্রাসায় আগত শিশুরা। বড় ভাইয়ের যৌন নির্যাতন থেকে নিরাপদ থাকা এইসব বাচ্চাদের জন্য অনেকটাই জটিল। এসব হত্যায় এসমস্ত বড় ভাইদের হাত থাকতে পারে বলে মনে করেন তারা।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসা ছাড়া অন্য মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি সেভাবে নেই। সেজন্য যৌন নির্যাতন বা শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের সুযোগ থাকে। এছাড়া সেখানে পরিবেশ এমন যে, শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অনেক সময় প্রকাশও হয় না। কওমি, এবতেদায়ী বা নূরানী-বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে, তাদের তদারকি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকে মনে করেন এরা আদব কায়দা শিক্ষা দেন। নৈতিকতা শিক্ষা দেন। সে কারণে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে হোক বা নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পড়াতে দেন। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, যে নিরাপত্তার কথা ভেবে মাদ্রাসায় ছেলেমেয়েদের পড়াতে দেয়া হয় সেখানে আদৌ নিরাপদ নয়। দেখা যায় ছেলেরাও নিরাপদ নয় এসব তথাকথিত হুজুরদের কাছে। এটিও সমাজের বৈকল্যতা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০৩
আপনার মতামত জানানঃ