বেশ কয়েক মাস আগে মহাকাশ থেকে রহস্যময় রেডিও তরঙ্গ ভেসে এসেছিল। যা অবাক করে দিয়েছিল বিজ্ঞানীদের। এবার এই ব্রম্ভান্ডের আকাশ গঙ্গা ছায়াপথে এক ভুতুড়ে বস্তুর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে সেটিকে কোনো শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র বলে মনে করছেন। বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে এই ভূতুরে বস্তু রেডিও তরঙ্গের উৎস। বিজ্ঞানীরা আপাতত এই ভূতুড়ে বস্তু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীদের দাবি, এ ধরনের কোনো বস্তু এর আগে কখনো শনাক্ত হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ার এক শিক্ষার্থী টাইরন ও’ডোহার্টি প্রথম এই ঘটনা আবিষ্কার করেন। তিনি দেখতে পান, প্রায় প্রতি ১৮ মিনিট পরপর বস্তুটি থেকে আলোর ঝলকানি ঠিকরে বের হচ্ছে। গবেষকেরা বলছেন, মহাবিশ্বে শক্তি বিকিরণ করে এমন ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর এমন করে বিস্ফোরিত হওয়া অস্বাভাবিক।
বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে গবেষণা চলছে।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী টাইরন ও’ডোহার্টি এক ধরনের বিশেষ টেলিস্কোপ ব্যবহার করে প্রথম ওই ঘটনাটি দেখতে পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর রেডিও অ্যাস্ট্রোনমির (আইসিআরএআর) মহাকাশ গবেষক দলের সদস্য ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঘণ্টাব্যাপী পর্যবেক্ষণে বেশ কয়েকবার বস্তুটিকে জ্বলতে নিভতে দেখি আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি খুবই অপ্রত্যাশিত। জ্যোতির্বিদ্যার যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য এটি ভুতুড়ে বিষয়। এর আগে কেউ আমাদের ছায়াপথে এমন ধরনের বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছে বলে মনে হয় না।’
তবে মহাবিশ্বে জ্বলে ওঠা-নিভে যাওয়া বস্তুর উপস্থিতি নতুন নয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে। তারা এই ধরনের বস্তুকে বলে থাকেন ‘ট্রানজিয়েন্ট’ বা ‘ক্ষণস্থায়ী’। তবে, আমাদের ছায়াপথে প্রথমবারের মতো এ ধরনের বস্তুর দেখা মিলল।
আইসিআরএআর-এর জ্যোতিপদার্থবিদ ড. জেমা অ্যান্ডারসন বিষয়টিকে ‘আসলেই অদ্ভুত’ বলে বর্ণনা করেছেন।
বস্তুটি শনাক্ত হওয়ার পর আইসিআরএআর-এর গবেষকেরা হিসাব করে বের করেছেন যে, বস্তুটির অবস্থান পৃথিবী থেকে প্রায় ৪ হাজার আলোকবর্ষ দূরে।
মহাকাশ গবেষক নাতাশা হার্লি-ওয়াকার পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ‘মার্চিসন ওয়াইডফিল্ড অ্যারে’ রেডিয়ো টেলিস্কোপে ঐ বস্তুটির অস্তিত্ব চিহ্নিত করেন।
তিনি জানান, ঐ ‘ভুতুড়ে বস্তুটি’ থেকে ১৮.১৮ মিনিট অন্তর স্পন্দন ধরা পড়ছিল। পরবর্তী পর্যায়ের পর্যবেক্ষণের পর কয়েক জন অস্ট্রেলীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, অত্যন্ত উজ্জ্বল বস্তুটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৪,০০০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তাদের দাবি, এখনো অনেক ‘রহস্য’ উন্মোচন বাকি। নাতাশার কথায়, ‘মিনিট কুড়ি অন্তর শক্তিশালী রেডিয়ো তরঙ্গ সৃষ্টির জন্য প্রবল শক্তির প্রয়োজন।’
তিন বছর আগের মতোই এবারও আকাশগঙ্গা ছায়াপথের ‘রহস্য’ নজরে এসেছে অস্ট্রেলিয়া থেকেই। ২০১৯-এর এপ্রিল থেকে ২০২০-র অগস্টের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ‘স্কোয়্যার কিলোমিটার অ্যারে পাথফাইন্ডার’ টেলিস্কোপে দেখা গিয়েছিল আকাশগঙ্গায় রহস্যময় রেডিয়ো তরঙ্গের আলোর ঝলক। মোট ১৩ বার। এরপর ২০২১-এর এপ্রিলে ফের তা ধরা পড়ে অস্ট্রেলিয়ার টেলিস্কোপ কমপ্যাক্ট অ্যারেতেও। তার আগে ২০২১-এর দক্ষিণ আফ্রিকার ‘মিরকাট’ রেডিয়ো টেলিস্কোপেও ধরা পড়েছিল সেই রহস্য আলো।
ঐ আলো কোনো নক্ষত্র, ‘পালসার’ বা ‘সুপারনোভা’ নয় বলে জানিয়েছিলেন মহাকাশ গবেষকেরা। নাতাশার মতে, তার আবিষ্কৃত ‘ভুতুড়ে বস্তু’টি কোনো ‘শ্বেত বামন’ (নিঃশেষ হয়ে যাওয়া নক্ষত্র) হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৩০
আপনার মতামত জানানঃ