রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) এক কর্মী। সেনাবাহিনীর বরাতে পুলিশ দাবি করেছে, সন্ত্রাসীদের হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী গুলি চালালে নিহত হন সাজেক চাকমা। তিনি নয়ন চাকমা নামেও পরিচিত। ৩ ডিসেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার দুপুরে নানিয়ারচর উপজেলার বেতছড়ির ১৯ মাইল নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নয়ন চাকমা সাবেক্ষ্যং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাজেছড়া গ্রামের কান্দারা চাকমার ছেলে।
নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাব্বির হোসেনের দাবি, বৃহস্পতিবার দুপুরে নানিয়ারচরের ১৯ মাইল এলাকার বেতছড়ি ও সোনারাম কার্বারী পাড়ার মাঝামাঝি স্থানে এ ঘটনাটি ঘটে। তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো সেনাবাহিনীর টহল দিচ্ছিল। এ সময় সেনা টহলের ওপর সন্ত্রাসীরা অতর্কিত গুলিবর্ষণ করলে তারাও পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। এ সময় ইউপিডিএফ সদস্য নয়ন চাকমা ওরফে সাজেক চাকমা নিহত হয়। পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে একটি একে-২২, একটি ম্যাগজিন, এসএমজি ৩ রাউন্ড তাজা গুলি, ১ রাউন্ড এমজি ফায়ারকৃত খালি খোসা, একটি বিদেশী পিস্তল, ৩ রাউন্ড পিস্তলের তাজা গুলি, ৩টি বাটন মোবাইল ফোন, ও ১৮৩৫৯-টাকা উদ্ধার করা হয়।
এটি ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ দাবি করে ইউপিডিএফ অবিলম্বে এ ধরনের ঘটনা বন্ধের দাবি জানিয়েছে। ইউপিডিএফের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘আজ দুপুর ১টার দিকে নয়ন চাকমা ও অন্য দুই ইউপিডিএফ সদস্য সাংগঠনিক কাজে বেতছড়ি থেকে সোনারাম কার্বারিপাড়ায় যাচ্ছিলেন। তারা ১৯ মাইল (বেতছড়ি ও সোনারাম কার্বারিপাড়ার মাঝামাঝি স্থান যা টিবিরাছড়ি রাস্তার মুখ নামেও পরিচিত) নামক স্থানে পৌঁছামাত্র রাঙ্গামাটির দিক থেকে একটি সিএনজিযোগে সাদাপোশাকধারী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এসে তাদের লক্ষ্য করে অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলেই নয়ন চাকমা নিহত হন। তবে সৌভাগ্যক্রমে অন্য দুজন দৌড়ে পালিয়ে কোনোমতে প্রাণ রক্ষা করতে সক্ষম হন।’
বাংলাদেশে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের হত্যকাণ্ড নিয়মিতই সংঘটিত হয়, যেখানে হত্যাকারী বাহিনীর দাবি ও ভুক্তভোগীর পরিবারের দাবি সব সময় ভিন্ন হয়। তাছাড়া হত্যার যে বর্ণনা বাহিনীগুলোর বিবৃতিতে আসে, সেই গল্পগুলো প্রায় একই রকম থাকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শিমু চাকমা লিখেছনে, ‘সমতলের ক্রসফায়ার আর বন্দুকযুদ্ধের সংস্কৃতি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলো পাহাড়ে। উভয়পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি আর বন্দুকযুদ্ধ নামক হত্যাকাণ্ডে কোনোদিন পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীর কেউ মরে না। কেননা তাদেরটা হচ্ছে সত্যিকারের বন্দুক।’
এসডাব্লিউ/এমএন/আরা/১৫৪০
আপনার মতামত জানানঃ