লেখক ও গবেষক সাইফুল বাতেন টিটোর বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত উপন্যাস ‘বিষফোঁড়া’ এবার ভারতের আসাম প্রদেশে অসমীয়া ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। আসামের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘মুক্তবাক অসম প্রকাশন’ বইটি প্রকাশ করেছে। বইটির প্রকাশ উপলক্ষে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি গত ২৫ ডিসেম্বর শনিবার বিকেলে একটি প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করেছে। বইটি গবেষণালব্ধ, মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণকে উপজীব্য করে লেখা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আসামের বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক অধ্যাপক দ্বিজেন বর্মন, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও অ্যাক্টিভিস্ট কস্তুরী লালবেগী, যুক্তিবাদী লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট রিপুঞ্জয় গগৈ এবং সাবেক মাদ্রাসাশিক্ষক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আবদুল্লাহ আল মাসুদ।
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়া সত্বেও বইটি প্রকাশনা বিষয়ে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বাংলাদেশের নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও বইটি ভারতের আসামে আমরা প্রকাশ করেছি এজন্যে যে, আমরা মনে করেছি এ বইটি ভারতের মানুষের হাতে পৌঁছানো দরকার। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকার বইটি নিষিদ্ধ করেছে যে পদ্ধতিতে সেটি বাকস্বাধীনতার অন্তরায় বলে আমরা ভারতবাসী মনে করি। আমরা জানি, বাংলাদেশে যেরকমভাবে কওমি মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতন হয় ঠিক সেভাবেই ভারতের কওমি মাদ্রাসাতেও শিশু নির্যাতন হয়। যেহেতু কওমি মাদ্রাসার বৈশ্বিক হেডকোয়ার্টার আমাদের ভারতেই রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এ বইটি যেভাবে পৌঁছানো দরকার ভারতের আসামের মানুষের কাছেও বইটি পৌঁছানো দরকার তেমনিভাবেই। তাছাড়া ভারতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম থাকা রাজ্যের মধ্যে আসাম অন্যতম যেখানে হাজার হাজার মাদ্রাসা আছে যেসব মাদ্রাসায় লক্ষ লক্ষ শিশুরা পড়াশোনা করছে।
রাজ্যটিতে মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণের হার নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বাংলাদেশের মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণের হার যেমন ভারতের আসামেও এরকমই। তবে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা সেসব নিয়ে মাঝেমাঝে কিছু নিউজ প্রকাশ করলেও আমাদের আসামে এসব নিয়ে তেমন নিউজ হয় না। কেন হয় না কারণটা আমরা জানি না।
মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণ নিয়ে দেশটির সরকার বা অভিভাবকদের দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, আসামের মুসলিমরা তো বাংলাদেশের মুসলিমদের মতোই চিন্তাভাবনা করে সেহেতু বাংলাদেশের অভিভাবকদের মতোই আসামের মাদ্রাসাছাত্রদের অভিবাবকদের মানসিকতা তারাও ছাত্র ছেলেদের মাদ্রাসায় দিয়ে তারপরে সোজাসুজি বেহেশতে যেতে চায়। যেহেতু আসামের বর্তমান সরকার বিজেপির সেহেতু তাদের মধ্যে মুসলিম নিয়ে এক ধরনের এলার্জি কাজ করে। ইতিমধ্যে আসাম সরকার সরকারি মাদ্রাসাগুলি বন্ধ করে দিয়েছে, কিন্তু কওমি মাদ্রাসা যেহেতু সরকারের টাকায় চলে না তাই কওমি মাদ্রাসায় হাত দিতে পারেনি। তাছাড়া মাদ্রাসার প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি মোটেই ইতিবাচক না। তবে আসামের এক্স মুসলিম আমরা যারা আছি তারা চাই, ঘৃণা না ছড়িয়ে অভিভাবকদের সচেতন করতে এবং শিশুদেরকে মাদ্রাসা নামক জেলখানা থেকে রক্ষা করতে। আর আমাদের চাওয়া অনেক বেগবান হবে বিষফোঁড়া বইটি মানুষের হাতে হাতে পৌঁছানোর মাধ্যমে।
মাদরাসায় শিশু ধর্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন লেখক সাইফুল বাতেন টিটো। মাদরাসায় শিশু ধর্ষণ নিয়ে গবেষণা করে তিনি ‘বিষফোঁড়া’ উপন্যাসটি লিখেছেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ থেকে বইটি প্রকাশ হয়। এরপর বিভিন্ন ভাষায় বইটি প্রকাশিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আসামে অসমীয়া ভাষায় প্রকাশিত হলো। অসমীয়া ভাষায় বইটি অনুবাদ করেছেন লেখক ও অনুবাদক আয়ুব আলী শর্মা।
অসমীয়া ভাষায় ‘বিষফোঁড়া’ প্রকাশ নিয়ে বইটির লেখক সাইফুল বাতেন টিটো বলেন, সত্যি বলতে আমি চাই এই বইটি পৃথিবীর সকল ভাষায় অনুদিত হোক। বিশেষ করে মুসলিম দেশের ভাষায় তো অবশ্যই। কওমি মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণ বিষয়টি এখন এমন বিশ্বমারিতে রুপ নিয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে এধরণের প্রতিষ্ঠানে শিশু ধর্ষণ হয় না। এই অন্যায় এতোদিন আড়ালেই ছিলো। এখন ম্যাসিভলি প্রকাশ্যে আসা শুরু করেছে। এই বইয়ের মাধ্যমে যদি সবাই জানে যে কওমি মাদ্রাসায ধর্মীয় শিক্ষার নামে কী হয় তবেই এটার জন্য গণআন্দোলন গড়ে উঠবে। আর তখনই এই শিশু ধর্ষণ বন্ধ হতে পারে। অন্যথায় নয়। আর সেই জন্যই এই গবেষণাগ্রন্থ।
এসডব্লিউ/কে এইচ/২১৫৬
আপনার মতামত জানানঃ