ভারতের ঝাড়খন্ডে গাছ কেটে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ তুলে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে রাজ্যের সিমদেগা এলাকার কোলেবিরা থানায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিকে সাঞ্জু প্রধান হিসেবে শনাক্ত করেছে পুলিশ।
সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি পুলিশের বরাতে জানিয়েছে, নির্দিষ্ট ধরণের গাছ কেটে তার অংশ বিশেষ বিক্রির মাধ্যমে ওই ব্যক্তি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে একশ থেকে দেড়শ মানুষের সংঘবদ্ধ একটি দল তাকে প্রথমে পিটায় ও পরে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে।
সিমদেগা পুলিশ জানিয়েছে, ‘মুন্ডা জনগোষ্ঠীর কাছে এই গাছের ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে আর তারা এই নিয়ে খুবই আবেগি। নিহত ব্যক্তি ২০২১ সালের অক্টোবরে এসব গাছ কাটেন। এতে অনুভূতিতে আঘাত লাগে। মঙ্গলবার বিপুল লোক জড়ো হয়ে বৈঠক করে আর তাকে পেটানোর সিদ্ধান্ত নেয় আর তার জেরেই তার মৃত্যু হয়।’
নিহতের পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানিয়েছেন, সংঘবদ্ধ লোকেরা প্রথমে তাকে লাঠি ও ইট দিয়ে পেটায়। আঘাতের ফলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তার দেহে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মঙ্গলবার বিপুল লোক জড়ো হয়ে বৈঠক করে আর তাকে পেটানোর সিদ্ধান্ত নেয় আর তার জেরেই তার মৃত্যু হয়।
সিমদেগা পুলিশ সুপার ড. শামস তাবরেজ বলেন, ‘মরদেহ পোস্ট মর্টেমের জন্য পাঠানো হয়েছে। আঘাতে নাকি আগুনে তার মৃত্যু হয়েছে তা ময়না তদন্তের পর জানা যাবে। যথাযথ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে ঝাড়খন্ডে পাস হয়েছে সংঘবদ্ধ সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ বিল।
কদিন আগেও ভারতের পাঞ্জাবের অমৃতসরে এক ব্যক্তিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে হত্যা করা হয়।
জানা যায়, অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে সান্ধ্যপ্রার্থনার সময়ে কুড়ির কোঠার এক যুবক রেলিং পেরিয়ে ঝাঁপ দেন যেখানে গুরু গ্রন্থ সাহিবটি রাখা ছিল। অভিযোগ, যে রুমালের উপর সেটি রাখা ছিল তাকে পদদলিত করেন এবং পাশের কৃপাণটি হাতে নিয়ে নেন। তার মধ্যেই গুরুদ্বারের রক্ষীরা এসে তাকে ধরে ফেলেন। তার পরে তাকে মারধর করা হয় এবং শিরোমনি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির হেডকোয়ার্টারে হুইল চেয়ারে নিয়ে গিয়ে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তার মধ্যেই মৃত্যু হয় তার।
এই খবরের রেশ কাটতে না কাটতেই কাপুরথালা জেলার নিজামপুর গ্রামে একটি গুরুদ্বারায় ধরা হয় একজনকে। গ্রামের মানুষদের অভিযোগ, তিনি শিখদের ‘নিশান শরিফ’-কে অবমাননা করেছেন। পুলিশে খবর দেওয়া হলে তাকে কাস্টডিতে নেওয়া হয়। কিন্তু জনতা পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ বাধে, জনতার দাবি ছিল, ওই ব্যক্তিকে তাদের হাতে দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত জনতার মারে মারা যায় ওই ব্যক্তি। অজ্ঞাতপরিচয় হলেও এটুকু জানা গেছে, বিহার থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিক ছিল সে।
ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, মজার ব্যাপার হল, এই ধর্মীয় অনুভূতি আহত করার বিষয়ে পুলিশ অভিযোগ দায়ের করলেও, গণধোলাইয়ে খুনের বিষয়ে এখনও অবধি কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তথাকথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিষয়ে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম তৈরি হলেও কী কারণে এদেরকে মরে যেতে হল, সে প্রশ্নের উত্তর কিন্তু অধরা। এমনকী পুলিশ স্থানবিশেষে স্যাক্রিলেজের কোনও চিহ্ন না পেলেও প্রায় সকলেই একমত এক ব্যাপারে ধর্মে আঘাত লেগেছে। ওদিকে গণধোলাই নিয়ে মুখ খোলেননি কেউ-ই।
ভারতের বৃহত্তম গণতন্ত্রে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত পড়লে প্রশ্ন ওঠে, কিন্তু গণধোলাইয়ে কেউ মারা গেলে সে ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকা যায়— এই বিষয়টি লক্ষ্যণীয়, গভীর উদ্বেগের।
বিশিষ্টরা বলছেন, বিজেপি শাসিত দেশটিতে ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়াবহতা বেড়েছে। সবসময় আতঙ্কে থাকে সংখ্যালঘুরা। প্রায় প্রতিদিনই দেশটির কোথাও না কোথাও সংখ্যালঘু নির্যাতনের এই দৃশ্য দেখা যায়। দেশটিতে সংখ্যালঘুরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানের উত্তাল পরিস্থিতিতে ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি আরও উত্তেজিত করে তুলেছে। আর এসবের দায় বিজেপি সরকারের ঘাড়েই দিতে চান বিশিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০৪
আপনার মতামত জানানঃ