সাধারণত বিজয়ের মাস ডিসেম্বর জুড়ে প্রতিবছর বাংলাদেশে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ধরনের সমাবেশ ও বিভিন্ন ধরনের মেলা বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে থানা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে বিজয় মেলা, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত আলোচনা, বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী ৯০ দশক থেকে ডিসেম্বর মাসে বেশ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে হয়ে আসছে। কিন্তু মহামারীর এই সময়ে পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন। তাছাড়া ভিন্নমত ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী পালনে সরকারের অনাগ্রহ করোনা মহামারীর পূর্ববর্তী সময়ে যেমনটা ছিল এখনও সেরকমমটা আছে বলে পর্যবেক্ষকমহলের ধারণা। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক ভার্চুয়াল সভায় মন্ত্রীর বক্তব্য এবং ডিএমপির জনসংযোগ শাখা কর্তৃক গণমাধ্যমে প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সেই ধারণা আরো স্পষ্ট হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক ভার্চুয়াল সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল করোনাভাইরাসের কারণ দেখিয়ে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। তবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি সাপেক্ষে ইনডোর অনুষ্ঠান করা যাবে, সে ক্ষেত্র স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মানতে হবে।
নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ইনডোর অনুষ্ঠান করার আগে সেখানে কারা আসছেন, কারা থাকবেন ইত্যাদি বিষয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে। ইনডোরের অনুষ্ঠানে নাশকতামূলক কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে গোয়েন্দারা কড়া নজরদারি রাখবেন বলে মন্ত্রী জানান। বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নেয়া জাতীয় কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে পুলিশের অনুমতি ছাড়া মিছিল, সভা সমাবেশসহ কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন সভা, সমাবেশ, গণজমায়েতের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। এসব কর্মসূচি পালন করতে রাস্তায় নানাধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় যান ও জন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে’।
প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘বিদ্যমান আইনে বৈধ কোনো দল বা গোষ্ঠীর সমাবেশের স্বাধীনতা থাকলেও বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হওয়ার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের আছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের নাগরিক সুবিধা অক্ষুণ্ন রাখা, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে এ ধরনের কর্মসূচি পালন এবং শব্দযন্ত্র ব্যবহারের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) অধ্যাদেশ অনুসারে ডিএমপি কমিশনারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে’।
বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা মহানগরীর নাগরিকদের জানমালের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো মিছিল, সভা-সমাবেশসহ কর্মসূচি গ্রহণ এবং শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়। অনুমতি ছাড়া কেউ এরূপ কার্যকলাপে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
আপনার মতামত জানানঃ